• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৯ অপরাহ্ন

বরগুনায় ডাবল মার্ডার ৯ মাসের শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যা, ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি


প্রকাশের সময় : জুলাই ১৩, ২০২১, ১০:৩০ অপরাহ্ন / ২০৮
বরগুনায় ডাবল মার্ডার ৯ মাসের শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যা, ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি

মনিরুজ্জামান অপূর্ব / বেলাল দেওয়ান,ঢাকাঃ বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার হাতেমপুর গ্রামে গত ২শরা জুলাই নয় মানের শিশু সন্তান সামিয়া আক্তার জুই ও স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রাখে পাষন্ড স্বামী শাহিন মুন্সি। এমন লোমহর্ষকর ও নৃশংস হত্যার ঘটনা বিভিন্ন জাতীয় প্রত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রচারিত।

ঘটনাটি সিআইডির দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এর প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় এলআইসি’র একাধিক বিশেষ দল ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আসামীর আত্মগোপনে থাকার সম্ভাব্য সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। অবশেষে, সিআইডি’র একটি চৌকস দল এই নৃশংস ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী মোঃ শাহিন মুন্সি (২১) এর অবস্থান শনাক্ত করতে সমর্থ হয় ও তাকে গ্রেফতার করে।

সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্ত ধর জানান, হত্যাকারী শাহিন মুন্সিকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহিন এই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। এবং হত্যাকান্ডের বিষয়ে লোমহর্ষকর বর্ণনা দিয়েছে।
সুমাইয়া আক্তারের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে কারণে সুমাইয়ার বাবা বাদী হয়ে গত ১৪ জুলাই ২০২০ সালে বরগুনা পাথরঘাটা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আসামী শাহিন মুন্সি ৩ মাস কারাবাসের পর, শাহিন মুন্সির জামিন হয়।
জামিনে বের হয়ে পারিবারিক ভাবে সুমাইয়া আক্তারকে বিয়ে করে শাহিন মুন্সি। সুমাইয়ার বাবার দায়ের করা মামলায় শাহিন জেল খেটেতে এই খোপ মনে পোষণ করে রেখেছে। পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, বিয়ে পর থেকেই সুমাইয়ার সংসারের সার্বক্ষনিক ঝগড়াঝাটি ও সংসারে অশান্তি বিরাজ করতো। তারপর থেকেই শাহিন মুন্সির মনে আক্রোশের জন্ম নেয়। সে পরিকল্পনা ও সুযোগের সন্ধানে অপেক্ষা করে। শাহিন মুন্সি ছুটা কাজ করতো, মাছ ধরে বিক্রি, ইটের ভাটায় বা বালি কাটার কাজ করতো। গত ২ জুলাই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল তখন রাত আনুমানিক ৮ টার সময় বাসায় এসে শাহিন তার স্ত্রীকে ভাত রান্নার কথা জিজ্ঞেস করে, তা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্ত্রীকে কিল-ঘুষি মারে। তাতেই পাষন্ড স্বামী হাহিন ক্ষ্যান্ত হয়ইনি, স্ত্রী সুমাইয়াকে টেনে হেঁচড়ে বাড়ির পাশে একটি পরিত্যক্ত জমিতে নিয়ে যায়। সেখানে হাতের কাছে মাছ ধরার বরশির লাইলন সুতা দিয়ে স্ত্রী সুমাইয়ার গলায় পেচিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। এদিকে ৯ মাসের শিশু সন্তান জুই কান্নাকাটি করতেছিল। তার কান্নার শব্দ শুনে বাড়িতে এসে সন্তানকে কোলে করে বাড়ির পাশের একটি খালের পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে হত্যা করে পাষন্ড বাবা শাহিন মুন্সি। পরে বাড়ি থেকে কোদাল এনে সেই পরিত্যক্ত ভিজা জমিতে গর্ত করে স্ত্রী সুমাইয়া ও নিষ্পাপ শিশু সন্তান জুইকে গর্তে মাটি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় শাহিন। পর দিন দুপুরে সুমাইয়ার ছোট বোন তাদের দেখতে না পেয়ে অনেক খোজাখুজি করতে থাকে। এদিকে সুমাইয়ার স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আত্মীয় স্বজনদের খবর দেয়া হলে সবাই বাড়ির আসপাশের খুঁজতে থাকে। সে-সময় বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমিতে লক্ষ্য করে দেখে মাটি খোঁড়া। সন্দেহ হলে মাটি সড়িয়ে দেখে সুমাইয়া ও তার শিশু সন্তানের লাশ মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে। এই সংক্রান্তে বরগুনা পাথরঘাটা থানায় গত ৩ জুলাই তারিখে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ দায়ের করা হয়। সিআইডি জানায়, অতি অল্প সময়ে ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও পলাতক আসামী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে সিআইডি পুলিশ। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকান্ডের সাথে আর কোন ব্যক্তির জড়িত আছে কিনা তা জানা যায়নি। তদন্তের শেষে জানা যাবে বলে জানান সিআইডি এই পুলিশ কর্মকর্তা।