• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুকে তাঁর স্থানে রেখে অন্যকোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হতেই পারে


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৬, ২০২৩, ১০:৩৬ অপরাহ্ন / ৯০
বঙ্গবন্ধুকে তাঁর স্থানে রেখে অন্যকোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হতেই পারে

পি আর প্ল্যাসিড, জাপানঃ

আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস। আমাদের এই স্বাধীনতা দিবস অর্জনের ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে আরো কয়েক বছর আগে। বাস্তবে যে অর্থে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই অর্থে বাংলার মানুষ এখনো স্বাধীন হয়নি। তবে মুক্ত হয়েছি আমরা পাকিস্তানের বর্বর শাসকদের শাসন থেকে। যে মুক্তি হওয়া ছিল আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। বয়সের কারণে আমি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ করায় যুদ্ধের অনেক বিষয় আমার এমনিতেই জানা। তারপরেও প্রতিনিয়ত এবিষয়ে অনুসন্ধান করি নতুন কোনো তথ্য জানার জন্য।

দেশ স্বাধীন হবার মাত্র কয়েক বছর পর ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট দেশে ঘটানো হলো ইতিহাসে ন্যাক্কার জনক এক ঘটনা। এর পর থেকে দেশে শুরু হয় ইতিহাস বিকৃতির পায়তারা, যা এখনো চলমান। এ তো শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয়, সাথে সাথে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো বলা যায়। এসব তথ্য নতুন প্রজন্মের বিশ্বাসের জায়গা দখলও করে নিয়েছে।

১৯৭১-এ পাকিস্তানের পরাজিত শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর থেকে স্বাধীন দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে পরাজিতদের দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। এজন্য তাদের প্রথম মিশনই ছিল ইতিহাস বিকৃতি করা। সেই কাজে তারা সফল হতে হতে ব্যর্থ হয়েছে।

তাদের বিশ্বাসের এক জায়গা জুড়ে তারা লালন করছিল, ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হওয়া ভারত – পাকিস্তান এক না হলেও পূর্ব – পশ্চিম এই দুই পাকিস্তান তাদের ভাষায় ভুলের কারণে আলাদা হলেও এই দুই দেশ হয়তো ধর্মের মিল থাকার কারণে আবার এক হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ যা-ই হোক পাকিস্তানের সাথে আর কোনোদিন এক সাথে হবে না। বাঙালির রক্ত বলে কথা। বাংলাদেশে থাকা কতিপয় পাকিস্তানি প্রজন্মের সেই বিষয় অনুধাবন করার ক্ষমতা বা যোগ্যতা থাকলেও মূল্যায়ন করতে তারা চায় না।

এর মধ্যে পাকিস্তানে কাজ করতে যাওয়া কতিপয় বাংলাদেশীর সম্প্রতি দেশে ফিরে আসতে চাইলে, ফিরতে না পারার কারণে তাদের কয়েকজনকে নিয়ে তৈরী করা ভিডিও দেখেছি। ভিডিওতে তাদের মিথ্যা আকুতি শুনে অবাক হলাম। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা দেশে আসার সুযোগ প্রদানের অনুরোধ করে এখনো বলছে, দুই পাকিস্তান শুধু ধর্মের কারণ নাকি ভাই দেশ। আলাদা হয়ে যাওয়া দেশ দুটি আবার নাকী এক হয়ে যাবে। ওদের কথা শুনে বিস্মিত হই। আমার পরিচিতদের মাঝেও এমন কথা বলার মতো কেউ কেউ যে নেই তা বলি না। আছে, তারাও বলে এমন কল্পিত কথা। তাদের কথা আমি শুনে যাই নীরবে। কথা শুনে তাদের পাকিস্তান প্রেমিক বলা ছাড়া উপায় দেখি না।

আজ ২৬ মার্চ। ভোর হতেই চোখের ঘুম সরে গেলো। চোখ খুলেই ফেসবুক আইডিতে ঢুকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন জনের বক্তব্য শুনছিলাম খুঁজে খুঁজে। তাদের অধিকাংশের বক্তব্যের বিষয়ই আমার জানা। আগেও শুনেছি এসব বিষয়। তারমধ্যে কিছুকিছু অজানা তথ্য শুনে নিজের ভান্ডারে ভরে নিলাম। তবে সবচেয়ে অবাক হলাম পাকিস্তানিদের করা কিছু ভিডিও দেখে। এসব ভিডিওতে দেয়া কিছু পাকিস্তানির বক্তব্য শুনে শুধু অবাকই হইনি, মনও ভরে গেলো। বর্তমান এই ইন্টারনেটের যুগে পুরো দুনিয়া যেন হাতের মুঠোয়, সহজ লভ্য। পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম এখন ইন্টারনেট ঘেটে দেখছে ১৯৭১-এ ঘটে যাওয়া ঘটনা। এসব দেখে তারা জানছে অনেক সত্য তথ্য। নানা বিষয় ঘেটে আবিষ্কার করছে তখনকার অজানা সব ঘটনাবলী।

অতীতে নানা জনের আলোচনা থেকে গাদ্দার হিসেবে জেনে আসা শেখ মজিবুর রহমানকে বীর বাঙালি আর মহা মানুষ বলছে এখন তারা। এমনকি পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের কেউ কেউ স্বীকার করছেন তাদের শাসকদের অতীত ভুলের কথা। অথচ আমাদের বাংলাদেশে পাকিস্তানি প্রজন্ম আর পাকিস্তান প্রেমিকরা বলছে ভিন্ন কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নাম মুখে নিতেই যেন দুনিয়ার লজ্জা এসে ভর করে তাদের উপর।

শেষ কথা, এখানে কারো সাথে কারো তোলনা করছি না। বিতর্কিত কেউ কারো সমতূল্য নয়। এই দেশ যতদিন আছে ততদিন তারা সবাই যে যার অবস্থানে থাকবেই। স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে এই স্বাধীনতা কিভাবে এলো, এর ধারাবাহিকতা কোথায় কিভাবে, কার বা কাদের দ্বারা শুরু হয়েছিল, কিভাবে সমাপ্ত হলো, এসব জানুন তবেই রি ভোল্ট শব্দটি প্রতিষ্ঠায় আপনার যুক্তি সত্য না হলেও মানুষ শুনবে।

আপনি রাজনীতি করেন কি করেন না, কোন দল সমর্থন করেন সেটাও বড় বিষয় নয়। তবে চিরন্তন সত্য এই যে, বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে আপনার সবকিছুই মিথ্যে।

সকলের জন্য শুভ কামনা রইল।
জয় – বাংলা।