• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন

প্রশাসন দুর্বল থাকিলে দেশ সবল হইবে না


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৮, ২০২১, ১২:২৫ অপরাহ্ন / ২৬১
প্রশাসন দুর্বল থাকিলে দেশ সবল হইবে না

ঢাকা : ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত লাল বাহাদুর শাস্ত্রী বলিয়াছিলেন, একটি জাতির শক্তির প্রধান উৎস হইল শৃঙ্খলা। যেই জাতির শৃঙ্খলা নাই, সেই জাতি সর্বার্থেই দরিদ্র। অতএব, শৃঙ্খলা শিখানো না গেলে আমাদের অগ্রযাত্রা হোঁচট খাইতে বাধ্য হইবে। ইহা মানুষকেও শিখাইতে হইবে, একই সঙ্গে দায়িত্বশীলদেরও শিখিতে ও জানিতে হইবে।

দেশ স্বাধীন হইয়াছে অর্ধশতাব্দী হইয়া গেল। এখনো যদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা শিখানো না যায়, তাহা হইলে কোনো প্রচেষ্টাই দেশকে সুশৃঙ্খল করিতে পারিবে না। আর এই শৃঙ্খলা প্রদর্শনের একটি গুরুদায়িত্ব রহিয়াছে জনপ্রতিনিধিদের। তিনি যেই স্তরের জনপ্রতিনিধিই হন না কেন। তবে কিছু জনপ্রতিনিধি এমন সকল উদাহরণ রাখিতেছেন, যাহা শৃঙ্খলা তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করিতেছে। আবারও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় জনপ্রতিনিধির অপ্রত্যাশিত আচরণ সকলের নজর কাড়িয়াছে। সংবাদপত্রের রিপোর্ট হইতে জানা গিয়াছে, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মেহেরউল্লাহকে গালিগালাজ ও থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠিয়াছে। জানা গিয়াছে, ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য লিখিতভাবে কর্মসূচি নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী পৌরসভার নাম ৫ নম্বরে ঘোষণা করায় পৌর মেয়র এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেন।

এই বিষয়ে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের আইনকানুনের মধ্যে থাকিয়া কাজ করিতে দিতেই হইবে। যে যেই রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন, সকলকেই মনে রাখিতে হইবে প্রশাসনের কাজ জনগণকে সেবা দেওয়া। এই ক্ষেত্রে কাহাকেও অধিক ছাড় দিবার সুযোগ নাই। বাংলাদেশের সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদে পরিষ্কার উল্লেখ রহিয়াছে, ‘সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।’ একই সঙ্গে ২১-এর ২ অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। এই ক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কেহ যদি অনিয়ম করেন, ভুল করেন তাহা হইলে অভিযোগ জানাইবার সুযোগ রহিয়াছে। কিন্তু কেহই পেশিশক্তি প্রদর্শন অথবা দুর্ব্যবহার করিবার অধিকার রাখেন না। এইভাবে যদি প্রশাসনকে দুর্বল করিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে যাহারাই ক্ষমতায় থাকুন না কেন, তাহাদের জন্য শুভ ফল বহিয়া আসিতে পারে না। প্রশাসনকে চুপ করাইয়া রাখিতে চেষ্টা করিয়া কোনো জাতির উন্নতি অগ্রগতি এখনকার দিনে আর সম্ভব নহে। বহু দেখা গিয়াছে, উন্নয়নশীল দেশে প্রশাসনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করিয়া রাখিবার চেষ্টায় কেহ উপকৃত হয় নাই। তাহার পরও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দেখা যায়, রাজনীতিবিদরা চাহেন, প্রশাসন তাহাদের মন জয় করিয়া চলিবে! ইতিপূর্বে পাবনা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রশাসনের লোকদের উপর হামলা, লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটিয়াছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করিতে গিয়া গায়ে হাত তুলিবার ধৃষ্টতা দেখাইবার কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করিয়াছে সরকার।

তবে আমরা জানি, বাড়াবাড়ি এমন এক বিষয়, ইহা যাহারা করেন তাহাদের কোনো মাত্রাজ্ঞান থাকে না। আমরা যখন ঔপনিবেশিক শাসনাধীন ছিলাম তখন এত দপ্তর, মহাদপ্তর, পরিদপ্তর ছিল না। সেই সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল, জনগণের মধ্যে অসন্তোষও ছিল। তাহারা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করিতে চেষ্টা করিয়াছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্রিটিশ লাটদের উপর অনেক হামলার ঘটনাও ঘটিয়াছে। কিন্তু নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে, আত্মম্ভরিতার কারণে কেহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর আঘাত করিবার কথা কল্পনাও করিত না। আর ঔপনিবেশিক শাসকরাও অনেক বিষয়ে আপসে গেলেও সরকারি কর্মচারীর প্রতি সহিংসতা কোনোক্রমেই সহ্য করিত না। ফলে ব্রিটিশরা স্থায়ী একটি মজবুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিতে পারিয়াছিল। সুতরাং দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সভ্যতার স্বার্থে প্রশাসনের লোকেদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যকে কোনোক্রমেই প্রশ্রয় দেওয়া সঠিক হইবে না।