• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা সহ বেশ কয়েকটি মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী জঙ্গি নেতা গ্রেফতার


প্রকাশের সময় : মে ২৬, ২০২২, ২:৫৩ অপরাহ্ন / ১৮৯
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা সহ বেশ কয়েকটি মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী জঙ্গি নেতা গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাতে হত্যাচেষ্টাো রমনা বটমূলে বোমা হামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা আব্দুল হাইকে (৫৭) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-২

দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে আত্মগোপণে থাকা আব্দুল হাই ছিলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) প্রতিষ্ঠাতা আমির। আশির দশকে ভারত-পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করা আব্দুল হাই আফগানিস্তানো মুজাহিদ হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৯১ সালে দেশে ফিরে এসে হুজি-বি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯২ সালে কক্সবাজারের উখিয়ায় ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করেন তিনি। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা অস্ত্র সরবরাহ করতেন এবং আব্দুল হাইসহ তিনজন সেখানে প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রায় ৪ বছর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসার পর ১৯৯৬ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ওই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, উখিয়ার ট্রেনিং ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন জঙ্গি নেতা আব্দুল হাই। এরপর একে একে ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিলেন।

পলাতক জঙ্গি নেতাদের বিষষয়ে নজরদারীর ধারাবাহিকতায় অবশেষে বুধবার (২৫ মে) রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর পলাতব হুজি-বির প্রতিষ্ঠাতা আমীর মুফতি আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করা হয়।

তার বিরুদ্ধে ৭টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, যার মধ্যে ২টি মৃত্যুদন্ড ও ২টি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। সর্বমোট তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা ১৩টি।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে জঙ্গি মুফতি আব্দুল হাইসহ তার সঙ্গি জঙ্গি সদস্যরা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রাখে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট মুফতি আব্দুল হাইসহ ১০ জন মৃত্যুদন্ড এবং ৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

২০০১ সালে ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন মৃত্যুবরণ করেন এবং আরো অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আব্দুল হাইসহ ৮ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং প্রায় তিন শতাধিক গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং আব্দুল হাইসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত। গ্রেফতার মুফতি আব্দুল হাই ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এছাড়া, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরে বৈদ্যের বাজারে জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জনকে হত্যা করে এবং শতাধিক লোককে আহত করে। এ ঘটনায় মামলায় আব্দুল হাই চার্জশীটভুক্ত পলাতক আসামী এবং তার বিরুদ্ধে ২ টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

যেভাবে জঙ্গিবাদে আব্দুল হাইঃ আব্দুল হাই নারায়গঞ্জের দেওভোগ মাদ্রাসায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করেন। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেওবন্দে পড়ালেখা করে মাস্টার্স সমতুল্য দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে।

এরপর ১৯৮৫ সালের শেষে ওই দেশের নাগরিক হিসাবে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং ১৯৮৬ সালে পুনরায় সেদেশে ফিরে যান। সেখান থেকে পাকিস্তানি ভিসা নিয়ে করাচিতে গিয়ে একটি মাদ্রাসা থেকে ২ বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে।

১৯৮৯ সালে ওই মাদ্রাসায় একাধিক বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিরানশাহ বর্ডার দিয়ে আফগানিস্থানে মুজাহিদ হিসাবে যান। সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০/৩৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নেন।

পাকিস্তানি এক হুজি নেতা এবং বাংলাদেশী এক জঙ্গির নেতৃত্বে একে-৪৭ রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আফগানিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেন। আফগানিস্তানে থাকাকালীন হুজি-বি নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন গ্রেফতার মুফতি আব্দুল হাই। তিনি হুজি-বির আমীর হিসেবেই বাংলাদেশে আসেন এবং ১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করেন।

১৯৯২ সালের প্রথম দিকে আব্দুল হাই কক্সবাজারের উখিয়ার একটি মাদ্রাসায় গিয়ে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করতেন এবং মুফতি আব্দুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। সেখানে তিনি ৪ বছর অবস্থান করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে ওই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার মুফতি আব্দুল হাই ‘জাগো মুজাহিদ’ মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয় এবং তার অফিস খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায়। পরবর্তীতে ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। গ্রেফতার মুফতি আব্দুল হাই ২০০০ সালে ওই পত্রিকার অফিস থেকে গ্রেফতার হন এবং ২ মাস কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পান।

১৭ বছর আত্মগোপণে ছিলেন আব্দুল হাইঃ কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনার সঙ্গে হুজি-বির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে ২০০৬ সালের পর মুফতি আব্দুল হাই আত্মগোপনে চলে যান। তার পরিবার তখনও নারায়নগঞ্জেই বসবাস করতেন কিন্তু তিনি কুমিল্লার গৌরিপুরে তার শ্বশুরবাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করেন।

গৌরিপুর বাজারে তার শশুরের কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা