• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন

প্রতারণা : প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা করোনাকালে ত্রাণের নামে টাকা তুলে আত্মসাৎ করলেন


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১, ২০২২, ১২:২৯ অপরাহ্ন / ৩১১
প্রতারণা : প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা করোনাকালে ত্রাণের নামে টাকা তুলে আত্মসাৎ করলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাকালে হতদরিদ্রদের ত্রাণসহায়তা দিতে সহকর্মী ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ৩৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা নিশাত ফারাবী ওরফে অন্তরার বিরুদ্ধে। এই কর্মকর্তা বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে সংযুক্ত রয়েছেন।

নিশাত ফারাবীর ব্যাচের কর্মকর্তারা ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নিশাত বিভিন্ন অজুহাতে প্রথমে অসহায় ছাত্রদের নাম করে এবং পরবর্তী সময়ে সরকারি সেবা নম্বর ৩৩৩-এ ফোন করে সহায়তা চাওয়া মানুষের জন্য তহবিল গঠনের কথা বলে টাকা তুলেছেন। তবে সেই টাকা কাদের দেওয়া হয়েছে, তার প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।

নিশাতের ব্যাচের তিনজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ২০২০ সালের ৩০ জুন ৩৮তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকা তোলা শুরু করেন নিশাত। তিনি বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ করে নিজের মুঠোফোন নম্বরে টাকা নিতেন। যে নম্বরে অর্থ নেওয়া হয়েছে, সেটি জাতীয় তথ্য বাতায়নে নিশাত ফারাবীর যোগাযোগ নম্বর হিসেবে নিবন্ধিত বলে দেখা গেছে।

নিশাত ফারাবীর ব্যাচের সদস্যরা জানিয়েছেন, টাকা তোলার ক্ষেত্রে তিনি সবাইকে মোটামুটি একই রকম কথা লিখে পাঠাতেন। এর মধ্যে একটি ছিল, সরকারি তহবিল পর্যাপ্ত নয়। তাই বেশি মানুষকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে তহবিল গঠন করতে তাঁর ওপর দায়িত্ব পড়েছে।

সহকর্মীরা আরও দাবি করেন, নিশাত নিজের পদবি ব্যবহার করে তাঁর সহপাঠী ও প্রবাসীদের কাছ থেকেও একইভাবে টাকা সংগ্রহ করেন। একই ব্যক্তির কাছে একাধিকবার টাকা চাওয়া ও কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি তাঁর বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করলে প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে।

নিশাতের সহকর্মীরা ৩৮তম বিসিএস ক্যাডার পরিবার নামে একটি ফেসবুক পেজের কিছু স্ক্রিনশট দেখান। এতে দেখা যায়, ১৪ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী একজন এভাবে টাকা তোলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মন্তব্যের ঘরে অনেকেই তাঁদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেন।

বিতর্কের পর নিশাত ফারাবী অন্তরা নামের যে ফেসবুক প্রোফাইল থেকে টাকা চাওয়া হতো, সেই প্রোফাইল থেকে একটি পোস্টে ক্ষমা চাওয়া হয়। বলা হয়, তাঁর হিসাব পরীক্ষা করে বাড়তি অর্থ পাওয়া গেছে। হিসাব থেকে কোনো টাকা তোলা হয়নি। সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ৩৮তম বিসিএস ক্যাডার পরিবারের ফেসবুক পেজে দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা টাকা ফেরত পেয়েছেন। একজন নিশ্চিত করেন নিশাতের নম্বর থেকেই টাকাটি এসেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নিশাত ফারাবীর মুঠোফোনে ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। নিশাতের স্বামী একটি উপজেলার সহকারী কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর মাধ্যমেও নিশাতের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ বলেন, নিশাত প্রশিক্ষণে রয়েছেন। ফিরে এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিশাতকে বিভিন্ন জন ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তিনি মোট কত টাকা উঠিয়েছেন, তা জানা যায়নি। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এর তদন্ত হওয়া উচিত। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর শাস্তি হতে হবে।