• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন

প্রতারণা করে চাকুরি ও পদবী বদল করেছে গণপূর্তের মোরশেদুল আলম সোহাগ 


প্রকাশের সময় : জুন ৩০, ২০২১, ৫:১৬ অপরাহ্ন / ২৫২
প্রতারণা করে চাকুরি ও পদবী বদল করেছে গণপূর্তের মোরশেদুল আলম সোহাগ 

রফিকুল ইসলাম কচি:প্রতারণার মাধ্যমে নিজের স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে, মিথ্যা ও বানোয়াট ঠিকানার মাধ্যমে চাকুরিতে যোগদানসহ গার্ড বা নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে নিয়োগ পেলেও অন্যায় ও অবৈধভাবে সরকারি বিধি বিধান অমান্য করে, কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিজেকে অফিস সহায়ক হিসেবে পরিচয়সহ সরকারি ও গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সকল সুবিধা ভোগ করছে প্রতারক মোরশেদুল আলম (সোহাগ)।

তথ্যমতে জানা যায় মোরশেদুল আলম গত ১৩/০১/ ২০১১ ইং তারিখ স-৪/১ম-১(অংশ)/২/২০১০/২০ স্মারকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ ইং৪১০০-১৯০×৭-৫৪৩০-ইবি-২১০×১১-৭৭৪০/টাকায় গার্ড হিসেবে মোঃ মোরশেদুল আলমসহ সর্বমোট ৭১ জন কে নিয়োগ দেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। নিয়োগের আগে মোরশেদুল আলম (সোহাগ) মাস্টার রুলে ৫ থেকে ৭ বছর গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তরে ।
এই প্রতারক মোরশেদুল আলমের পিতা বোরহানউদ্দিন সেও গার্ড হিসেবে মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগে কর্মরত আছে।
তার বাবার পরিচয় পত্র ও মোরশেদুল আলম এর প্রতিবেশীদের কাছে তার বিষয়ে জানতে গেলে জানা যায়, মোঃ মোরশেদুল আলম ,পিতা বোরহান উদ্দিন, গ্রাম+ পোস্ট রুপসা ,থানা ফরিদগঞ্জ, জেলা চাঁদপুর। কিন্তু গার্ডে নিয়োগ পাওয়ার পর নিয়োগপত্রে দেখা যায়, তার স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম- জামালপুর, পোস্ট -জামালচর, উপজেলা -দোহার জেলা ঢাকা। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট এবং প্রতারণামূলক।
তত্ত্বে আরো উঠে আসে এই প্রতারক গত ৩০/ ১০/ ২০১৯ ইং তারিখ প্রধান প্রকৌশলী গণপূর্ত অধিদপ্তর বরাবরে, বিদেশ ভ্রমণের জন্য নিজ হাতে স্বাক্ষরিত একটি আবেদন করে। আবেদনে সে নিজেকে অফিস সহায়ক মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগ ঢাকা উল্লেখ করে ।যা পুরোপুরি মিথ্যা এবং প্রতারণায় ভরপুর। উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বহস্তে লিখিত মোঃ মোর্শেদুল আলমের অফিস প্রতিবেদনে কোন যাচাই-বাছাই ছাড়া, নির্বাহী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন অফিস সহায়ক হিসেবে বিদেশ ভ্রমণের জন্য চিঠি অগ্রগতির জন্য ৭/ ১১/ ২০১৯ইং স্বাক্ষর করে এবং তার পক্ষে একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রধান করে। শুধু তাই নয় জি-সি-১/২৭2৪ স্মারকে, ডাইরি নম্বর২২৭০ তারিখ ১৩/ ১১/ ২০১৯ ইং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন মোরশেদুল আলম কে অফিস সহায়ক হিসেবে বিদেশ ভ্রমণের চিঠিতে স্বাক্ষর করে।
গত ২৭/ ১১/২০১৯ ইং তারিখে স্মারক নম্বর ২৫৩৬ ,০০০০.২১১.০৮.০০১.১৯.৩৫৬ তে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নন্দিতা রানী সাহা মোরশেদুল আলম কে অফিস সহায়ক হিসেবে বিদেশ ততা আজমির শরিফ যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে। উক্ত অনুমতিপত্রে প্রধান প্রকৌশলীর অনুমতি আছে মর্মে লিখিত পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে গত ০১/০১/২০২০ ইংতারিখ মোঃ শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে অভিযোগ করে। অভিযোগে উল্লেখ করে কিভাবে একজন গার্ড মিথ্যা এবং প্রতারণার মাধ্যমে অফিস সহায়ক হিসেবে বিদেশ গমন করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুমোদন প্রদান করে।
বিষয়টি অজ্ঞাত কারণে ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় সুষ্ঠ তথ্য ও বিচার পাইনি শহিদুল ইসলাম।
সূত্রে আরো জানা যায় গত ০৩/০৩/২০১০ ইং তারিখ স্মারক নম্বর স- ৪/আর-৭৪/সি ২/৮১-৯৬/১১০ মোতাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়) গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢাকা, এক আদেশে জানায় বিভিন্ন জোন, সার্কেল ও বিভাগে নিয়মিত গার্ড সুইপার পদে কর্মরত কর্মচারীদের এম এল এস এস পদে পদবী পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই এবং করতে পারবে না।
এ বিষয়ে একজন গার্ড কিভাবে নিজেকে অফিস সহায়ক দাবি করে বিদেশ ভ্রমণ করে তা জানতে চাইলে নন্দিতা রানী সাহা বলে, মোরশেদুল আলম যথাযথভাবে সরকারী বিধি মোতাবেক গার্ডে থেকে অফিস সহায়ক পদে পদায়ন হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলে তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলে । বিষয়টি আরো ভালোভাবে জানার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংস্থাপন শাখা ৪(চার) গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানায়, গত ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এই ধরনের কোনো আদেশ বা প্রজ্ঞাপন আমরা পাইনি। কিভাবে মোরশেদুল আলম গার্ড থেকে অফিস সহায়ক হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।এ বিষয়ে মোঃ মোরশেদুল আলম জানায় , মন্ত্রণালয়ে আবেদনের মাধ্যমে সরকারী বিধি মোতাবেক পদ পরিবর্তন হয়েছে এবং আমি অফিস সহায়ক হয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজ দেখতে চাইলে,নিষেধ আছে বলে জানায়।
সরেজমিনে গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে মোঃ মোরশেদুল আলম কিভাবে ইউনিয়নের সদস্য এবং নেতা হলো জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক বছর যাবত মোরশেদুল আলম সোহাগ ১৮ ঘন্টা সময় দেয় ইউনিয়ন অফিসে। নিয়োগপত্র মোতাবেক মতিঝিল ডিভিশনে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে ডিউটি করার কথা অথচ অফিসের নির্ধারিত ডিউটি পালন না করে কর্মচারী ইউনিয়ন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত আছে। গণপূর্তের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নীতিমালা অনুযায়ী একজন গার্ড কোনভাবেই ইউনিয়নের সদস্য হতে পারেনা বা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এ বিষয়ে মোরশেদুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলে, ইউনিয়নের সদস্যদের সেবা করাটাও অফিস ডিউটি।
শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের বর্তমানে সে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। তথ্যে উঠে আসে সাংগঠনিক হওয়ার পিছনে অনেক টাকা এবং পেশী শক্তি প্রয়োগ করেছে প্রতারক মোরশেদুল আলম।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়, এই প্রতারক মোরশেদুল আলম সোহাগ ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি’র সেগুনবাগিচা ইউনিট কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিল। বর্তমানে বোল পাল্টে নিজেকে আওয়ামী লীগের নির্যাতিত কর্মী দাবি করছে এই প্রতারক। কথায় কথায় সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিং পুলিশের নির্যাতনের গল্প বলে, অথচ তা মিথ্যা এবং বানোয়াট। শুধু তাই নয় তার বাবা গার্ড বোরহানউদ্দিন বিএনপি’র একজন ডায় হাড কর্মী বটে। আওয়ামী লীগের কর্মীদের মুখে শুনতে পাই ,এক নির্বাচনী জনসভায় মোরশেদুলের বাবা গার্ড বোরহানউদ্দিন তার ভাষণে বলেছিল , আগামী ১০০০ বছরে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। সেগুনবাগিচায় গণপূর্তের অফিসের বিভিন্ন দেয়ালে মোরশেদুল আলম সোহাগ এর ফেস্টুন এবং ব্যানার।