• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন

নানা অপকর্মে জড়িত দেশের জনপ্রতিনিধিরা!


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৪, ২০২০, ৭:০১ অপরাহ্ন / ৪৬৪
নানা অপকর্মে জড়িত দেশের জনপ্রতিনিধিরা!

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাঃ শুধু পৌর মেয়র কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান পদেই নয়, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত কাউন্সিলর থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত সব স্তরের জনপ্রতিনিধিরাই নানারকম অপরাধ অপকর্মে জড়িয়ে আছেন।

এক শ্রেণীর সংসদ সদস্যের নৈতিক স্খলন, মূূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফিরিস্তি বলে শেষ করার মতো নয়। এর জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে বহুলাংশে দায়ী করা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো কালো টাকার মালিক, চোরাকারবারি, মাদককারবারি, মানবপাচারকারী, ব্যাংক ঋণ আত্মসাৎকারী, সন্ত্রাসী পরিচিতদের দলে ভেড়ায় কোনো রাখ ঢাক না রেখেই।

তাদেরকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্তি, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় টিকিট দেয়া হয় ঢাকঢোল বাজিয়ে। নিবেদিত প্রাণ, ত্যাগী নেতাকর্মীদের চেয়ে দলে এদের কদর-ইজ্জত বেশি দেয়া হয়।

জাতীয় সংসদের লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে মানব ও মুদ্রাপাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কুয়েত সিআইডি (ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট) গ্রেপ্তার করে ৮ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের কোনো সদস্য ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বিদেশের মাটিতে এভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার নজির নেই।

ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনের এমপি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী এবং তার পুত্র ত্রিশাল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান মাহমুদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, পুলিশে নিয়োগের নামে অর্থ আত্বসাত, অনিয়ম ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মানববন্ধন হয়েছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী উন্নয়ন সংস্থা ও ময়মনসিংহের সচেতন মহলের ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়। ওই মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, ত্রিশালে স্কুল মাদ্রাসায় নৈশপ্রহরী ও আয়া নিয়োগে একক আধিপত্য বিস্তার করে এমপির স্বজনরা প্রত্যেকের নিকট থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী এমপি হওয়ার পরে তার ১০ গুণ সম্পদ বেড়েছে।

সবই করেছেন দুর্নীতি, অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য ও আত্বসাত করে। তার সমুদয় টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সৌদিআরবে পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। এমপি মাদানীর মেয়ে জামাতা খ্যাত জঙ্গী ইদ্রিস খানই গিলে খাচ্ছে গোটা ত্রিশালকে। সব ধরনের প্রতারণামূলক কাজ কারবারেই তার সম্পৃক্ততা রয়েছে, কুখ্যাতি অর্জন করেছে মামলাবাজ হিসেবেও। এমপি জামাতা ও ছেলের কল্যাণে ত্রিশালের সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পিচ্চি সন্ত্রাসী। কিশোর গ্যাং হিসেবে চিহ্নিত এ বাহিনীর সদস্যদের মাঝে শুধু মাদক সরবরাহ দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাদের আঙ্গুলী হেলনেই দিনে রাতে যখন তখন যে কেউ ছুরিকাঘাত হচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন অন্যভাবেও। মাদানী বিরোধীরাই এর শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আগে জনসেবার লক্ষ্য নিয়ে সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত ও সৎ মানুষ জনপ্রতিনিধি হতেন। সাধ্যমতো তারা মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করতেন। এখন অবৈধ অর্থের মালিক, সন্ত্রাসী বা পেশিশক্তিতে বলীয়ান চরিত্রহীন ব্যক্তিরাই বেশি করে জনপ্রতিনিধি বনে যাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে মানুষের ধারণাই বদলে যাচ্ছে। এখন জনপ্রতিনিধিরা হেন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকছেন না। ক্যাসিনো সম্পৃক্ততার অভিযোগে দুদক কর্তৃক যে ৩৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে সরকারদলীয় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন রতনসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজিব, চাঁদপুরের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সেলিমসহ ১১ জন জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে।

এছাড়াও ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে কমিশনের পক্ষ থেকে পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, ফেনী পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহম্মেদ রতন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু, ঢাকা উত্তরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাতেনুল হক ভূইয়াসহ কয়েকজনের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেয়া নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অভিযোগে ১০০ জনপ্রতিনিধি সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩০ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৬৪ জন ইউপি সদস্য, একজন জেলা পরিষদ সদস্য, চারজন পৌর কাউন্সিলর এবং একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। এরপরও নানরকম অপরাধ অপকর্ম থেকে তাদের থামানোই যাচ্ছে না।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, পার্বতীপুরে দরিদ্র এক নারী চাকরির জন্য পৌর মেয়র এ জেড এম মেনহাজুল হকের কাছে যান। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন মেয়র। ধর্ষণের ছবি মোবাইলে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।

সবশেষ গত ২৯ জুন মেয়েটি প্রতিবাদ করলে পৌর মেয়র মেনহাজুল হক ও তার সহযোগীরা তাকে ব্যাপক মারধর করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত দোসরা জুলাই নির্যাতিতা বাদী হয়ে পৌর মেয়রকে আসামি করে পার্বতীপুর থানায় একটি মামলা করেন। এরপর থেকে পলাতক রয়েছেন মেয়র। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় মেয়রসহ ৬ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই নারী। পটুয়াখালীর বাউফলে জোড়া হত্যা মামলার প্রধান আসামী হয়েছেন কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন আহম্মেদ লাভলু। ইতিমধ্যে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে থাকায় চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশও জারি হয়েছে।