• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন

দেশে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাড়ছে অপরাধ


প্রকাশের সময় : জুন ১, ২০২১, ৬:৩৭ অপরাহ্ন / ২৯৭
দেশে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাড়ছে অপরাধ

মেহেদী হাসানঃ (অনিয়ন্ত্রিত স্যোশাল মিডিয়া-ভাইরাল প্রেমিদের আশ্রয়স্থল টিকটক, প্রকাশ্য নষ্টামিতে বিগো লাইভসহ একাধিক ভার্চুয়াল মাধ্যম, ইমু পরিনত হয়েছে অন্ধপল্লিতে, আন্তর্জাতিক জুয়ার আসর অনলাইন মাধ্যমেই, সিদ্ধান্তহীনতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, অপরাধী শনাক্তে প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন)
আকাশ সংস্কৃতির দেশে প্রযুক্তিই যেন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রযুক্তির কাঁধে ভর করেই বাড়ছে বহুমাত্রিক অপরাধ। ইন্টানেটের অবাধ অপব্যবহার দেশের জন্য হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত স্যোশাল মিডিয়ায় মাদক বেচাকেনা, নষ্টামি, জুয়া, প্রতারণাসহ চলছে বাঁধভাঙা অপকর্ম। বিভিন্ন ধরনের নেট গেমের (খেলাধুলা) খপ্পরে পড়ে বশীভূত হচ্ছে শিক্ষার্থী সমাজ। এতে করে জাতি হতে চলেছে মেধাশূন্য। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। অপরদিকে প্রযুক্তির ওপর ভর করেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। প্রযুক্তি ব্যবহারে অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নেটিজনদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে অপব্যবহাররোধে যেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বিশিষ্টজনরা মনে করছেন প্রযুক্তি ব্যবহারে দরকার সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধিনিষেধ। খেলনা হিসেবেও এখন শিশুদের হাতে মিলছে স্মার্টফোন। কিশোর থেকে কিশোরিরাও চালাচ্ছে ফেসবুক,ইমু, ভিগো লাইভ, টিকটক, লাইকি, ইউটিউবসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট। এখান থেকেই অনেকেই যাচ্ছেন বেপথে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পেইজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত আইডি খুলে বসছে অনলাইনে মাদকের হাট। অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে সব ধরনের মাদকের হোম ডেলিভারি সার্ভিস। মাদকব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রচলিত ডেলিভারি সার্ভিস এবং কুরিয়ার ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে। এলএসডি নামের মাদকের সঙ্গেও পাওয়া গেছে প্রযুক্তির অপব্যবহারের ভয়ংকর চিত্র। অনলাইনে মাদক বিক্রির পেজে কমেন্ট কিংবা লাইক করলে বিক্রেতারা ইনবক্সে এসএমএস দেয়। দাম ঠিকঠাক হলে মাদক কারবারিরা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেন চাহিদা অনুযায়ী মাদকদ্রব্য।
দেশে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী এখন লাইকি ও টিকটকে আসক্ত। নিজেকে স্টার তৈরি করার জন্য স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা টিকটক ও লাইকিতে ঝুঁকে পড়ছে। বাহারি অশ্লীল পোশাক, বিভিন্ন গান ও মিউজিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছোট ছোট ভিডিও বানিয়ে নেট দুনিয়ায় ছেড়ে দিলেই মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। নিজস্ব আইডিতে লাইক কমেন্টস বাড়াতে ঝুঁকে পড়ে অভিজ্ঞ লাইকি টিকটক ব্যবহারকারীদের ওপর। এতে কেউ কেউ আবার হচ্ছেন ব্ল্যাকমেইলের শিকার। টিকটককে কেন্দ্র করে দেশে প্রায় সব অপরাধের শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটছে।
সূত্র বলছে টিকটকের ফাঁদে ফেলে সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র বাংলাদেশ, ভারত ও দুবাইসহ কয়েকটি দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের টার্গেট স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েসহ বিবাহিত গৃহিণী ও বখে যাওয়া ছেলে-মেয়ে। এসব নারীদের ফাঁদে ফেলে ভিডিও বানানোর লোভনীয় প্রলোভনে নিয়ে বিক্রি করার মতো তথ্যও রয়েছে।
ইতিমধ্যে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকাতেই ব্ল্যাক মেইলের শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়েছে অনেক নারী। সূত্রে জানা গেছে, নারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি করে টিকটকাররা নারী সাপ্লাই দিয়েও আসছে। রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, মতিঝিল, ওয়ারি, মহাখালী, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকাতে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এদের মধ্যে রয়েছে, রিপন, জাকির, হৃদয়, জনি, সানি, রুবেল, হান্নান, শিশিরসহ অনেকেই। এরা অনেকেই নারীদের অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে জিম্মি করে তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করায়।
গত বছর ১৬ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কুড়িলে হৃদয় নামের এক টিকটকারের বাসায় চার ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হয়। ঘটনার শিকার ছাত্রীরা ভাটারা থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হৃদয় ছিল একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। হৃদয়ের ফেসবুকে ‘টিকটক ও লাইকিতে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এমন বিজ্ঞাপন দেখে শিক্ষার্থীরা হৃদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর চার শিক্ষার্থীকে নিজের বাসায় আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে হৃদয়।
রাত ১২টার পরই ভিগো লাইভে বসে অশ্লীলতার মেলা। দীর্ঘদিন যাবৎ যে সকল পর্ণো ভিডিও ইউটিউবে ভাসতো তা এখন পাওয়া যাচ্ছে ভিগো লাইভে। তাও আবার দেখা যায় সরাসরি সম্প্রচারে। নোংরামির ফুটেজ একে একে অন্যসব মাধ্যমেও এখন ছড়িয়ে পড়ছে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন সবচেয়ে বড় ‘অসামাজিক মাধ্যমে’ রূপ নিয়েছে।
উঠতি বয়সি কিছু নামধারী মডেলরা বাহারি নামীয় ইমু আইডি থেকে ছদ্মবেশে বিভিন্ন সময়ে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আপলোড করে। যৌন উত্তেজক কথা বলতে ও শুনতে চাইলে এবং নগ্ন শরীর দেখে যৌন চাহিদা মেটাতে টাকার অংকও দেওয়া হয়। এসব টাকা বিকাশের মাধ্যমে দিলেই ইমুর ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রবেশ করা যায় অন্ধপল্লিতে। আবার সরাসরি শারীরিক সম্পর্কে যেতে চাইলে তার রেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয় মোটা অংকের টাকায়। মন ভুলানো কথাবার্তায় নির্দিষ্ট তরুণকে বশে এনে বিভিন্ন সময় উঠতি বয়সি তরুণদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েও নেয় এই চক্রের সদস্যরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অনেক পতিতা পল্লী ও আবাসিক হোটেলে পতিতাবৃত্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং করোনায় চাহদা অনুযায়ী যৌনকর্মীদের খদ্দের না থাকায় প্রযুক্তি ব্যবহার করেই চলে ভার্চুয়াল পতিতাবৃত্তি।
সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রযুক্তি অপরাধ নিয়ে তারা এবং সিআইডি ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। কেউ অভিযোগ করলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, পর্ণোগ্রাফি আইন, আইসিটি আইন টেলিকমিউনিকেশন অ্যাক্ট আইনে সারাদেশে ২০১৫ সালে থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৩৭টি মামলা হয়েছে। প্রযুক্তি অপব্যবহার ক্রমেই বেড়ে