• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন

জীবিত থেকে ও মৃত ছাহেরা নড়াইলের কালিয়ায় সমাজসেবা অফিসের তরিকুলের ভুলে ভাতা বন্ধ বৃদ্ধার


প্রকাশের সময় : মার্চ ৩০, ২০২৩, ৮:১০ অপরাহ্ন / ১৪৮
জীবিত থেকে ও মৃত ছাহেরা নড়াইলের কালিয়ায় সমাজসেবা অফিসের তরিকুলের ভুলে ভাতা বন্ধ বৃদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালিয়া, নড়াইলঃ স্বামী মারা গেছেন। তাই বিধবা ভাতা তুলছেন স্ত্রী ছাহেরা বেগম (৯০)।কিন্তু তিনি জীবিত থাকলেও হঠাৎ ভাতা বন্ধ হয়ে যায় ১ বছর। সমাজ সেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নাম মৃতদের তালিকায়। এ কারণে ওই নারীর বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। ১ বছর ভাতার টাকা না পেয়ে তিনি কালিয়া সমাজ সেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি ‘মৃত্যুবরণ’ করেছেন। তাই ভাতা বাতিল করেছে উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা ভাতা তুলতে গিয়ে নিজেকে মৃত জানতে পেরে হতবাক হয়ে পড়েন ওই বিধবা। তিনি কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছাহেরা বেগম। তার ভাতা ব্যাংক হিসাব নম্বর ১২২।

এ বিষয়ে ছাহেরা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন স্বামী মারা গেছেন। অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের বড় করে বিয়ে দিয়েছি।ছেলে খুলনাতে থাকে তার বাচ্চাদের নিয়ে। আমাকে দেখেনা।২০০৫ সালে পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার তারা অবস্থা দেখে একটা বিধবা ভাতার কার্ড করে দেন। ওই টাকা দিয়েই দুবেলা কোনো মতে খাবার জোগাড় হতো। বিধবা ভাতার কার্ডধারী হিসেবে ছয় মাস পর পর ভাতা উত্তোলন করে আসছি। সে অনুযায়ী গত ১ বছর ভাতা মোবাইলের বিকাশে না আশায় জানতে পারি আমি মৃতদের তালিকায়। তাই ভাতা বন্ধ। এতে বেশ হয়রানির শিকার হচ্ছি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কালিয়া সমাজসেবা অফিসের পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন সমাজকর্মী মোঃ তরিকুল ইসলাম কোনো প্রকার কাগজপত্র ছাড়া ও ছাহেরা বেগমের ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক মৃত সনদ ছাড়া তার নাম বিধবা ভাতার তালিকা থেকে কেটে অন্য এক বিধবা মহিলার নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।

এ বিষয়ে সমাজকর্মী মোঃ তরিকুলের কাছে জীবিত ছাহেরাকে মৃত দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৃত সনদ পাওয়ার পরে নাম কাটা হয়েছে। মৃত সনদ দেখাতে বললে তিনি ২ দিনের সময় নেন। ২ দিন পরে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছাহেরা বেগমের মৃত সনদ দেখাতে ব্যার্থ হন।এবং বলেন পহরডাঙ্গা ইউপির চকিদার মাসুদ আমাকে ফোন করে বলে ছাহেরা বেগম মারা গেছে তাই নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।ভুল করে নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও ক্ষমা চান এবং জীবিত ছাহেরা বেগমের ভাতার তালিকায় পুনরায় নাম অন্তভূক্ত করে দিবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মল্লিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আমি পহরডাঙ্গার ছাহেরা বেগমের কোনো মৃত সনদ সমাজসেবা অফিসে পাঠাইনি। তবে ৪নং ওয়ার্ড সরসপুর গ্রামে আরেকজন সায়রা বেগম আছে তিনি মারা যান তার মৃত্যুর সনদ পাঠিয়েছি।

এ দিকে খোজ নিয়ে জানা যায় পাহরডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ড সরসপুর গ্রামের মৃত আবু তালেব শেখের স্ত্রী সায়রা খাতুন নামের আরেকজন ভাতাভোগী রয়েছে। তিনি গত বছরে ২৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিনি মারা গেলে ও তার নাম ভাতার তালিকায় রয়ে গেছে এবং টাকা পাচ্ছে তার স্বজনরা।সরসপুরের সাহেরা বেগমের মৃত্যুর ১৩ মাস অতিবাহিত হলে ও তার মৃত সনদ পায়নি সমাজসেবা অধিদপ্তর। বন্ধ হয়নি ভাতা।

এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম অভিযুক্ত সমাজকর্মী তরিকুলের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, আমি বিষয়টি জেনে ছুটিতে থাকা অবস্থায় ভুক্তভোগীর ভাতা চালু করে দিয়েছি এবং বকেয়া টাকাও ফেরত দেওয়া ব্যবস্থা করছি।

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনু সাহাকে বিষয়টি জানালে সমাজসেবা অফিসারের সাথে তিনি কথা বলবেন বলে জানান।