• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা-নাশকতার পাশাপাশি বেড়েছে মামলা-গ্রেফতার


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৩, ১১:৫৫ অপরাহ্ন / ১৭০
জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা-নাশকতার পাশাপাশি বেড়েছে মামলা-গ্রেফতার

মোঃ রাসেল সরকার,ঢাকাঃ আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর এক বছর। নির্বাচন কেন্দ্র করে গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই সরব রাজনৈতিক দল গুলো। সরকার বিরোধী জোটগুলো পালন করছে বিভিন্ন কর্মসূচি। নির্বাচনী কর্মসূচি কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় তুলনামূলক বেড়েছে সহিংসতা ও নাশকতা। এতে বাড়ছে মামলা ও গ্রেফতারের সংখ্যাও। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সহিংসতা কিংবা মামলা-গ্রেফতার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। পুলিশ বলছে, তারাও চায় না এসব বাড়ুক।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য মতে, ২০১৯ সালে রাজধানীতে রাজনৈতিক সহিংসতা বা নাশকতার ঘটনায় ১৭টি মামলায় ৩০৭ জন এজাহারভুক্ত ও ৫৭০ জন এজাহারবহির্ভূত আসামির ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২০ সালে ২৫টি মামলায় ১ হাজার ৫৭ জন এজাহারভুক্ত ও ১৩৭ জন এজাহারবহির্ভূত আসামির মধ্যে গ্রেফতার করা হয় ৯৯ জনকে। ২০২১ সালে মামলা করা হয় ২৪টি, যাতে এজাহারভুক্ত আসামি ৬৬৬ জন, এজাহারবহির্ভূত পাঁচ হাজার ৮৬৭ জন। গ্রেফতার করা হয় ১৬৬ জনকে। এসব মামলার কোনোটারই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

আর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩১টি মামলা হয়েছে রাজধানীজুড়ে, যাতে এজাহারভুক্ত ও এজাহারবহির্ভূত আসামি পাঁচ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মার্চ ও মে মাসে আটটি করে। সেপ্টেম্বর মাসে চারটি, ফেব্রুয়ারি, আগস্ট, অক্টোবর মাসে তিনটি করে মামলা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ছয়টি মামলা হয়েছে শাহবাগ থানায়। এছাড়া বাড্ডা থানায় তিনটি, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, বনানী, পল্লবী, কোতোয়ালি থানায় দুটি করে মোট ১০টি, তেজগাঁও, মতিঝিল, বংশাল, হাজারীবাগ, কাফরুলসহ ১১টি থানায় একটি করে ১১টি মামলা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান বলছে হামলা, মামলা, সহিংসতা সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী।

সাধারণত বিজয় দিবস, বড়দিন ও থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন নিরাপদ করার লক্ষ্যে সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৩ হাজার ৯৬৮ জনকে। এর মধ্যে পরোয়ানাভুক্ত আসামি ১৫ হাজার ৯৬৮ জন। বাকি আট হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয় বিভিন্ন অভিযোগে। এই আট হাজার জনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় নতুন মামলা হয়েছে পাঁচ হাজার ১৩২টি। সারাদেশে পুলিশের ৩৩ হাজার ৪২৯টি অভিযানে রাজনৈতিক মামলায় পাঁচ হাজারের বেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে সারাদেশে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হয়েছে ৭৯টি। এতে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে তিন হাজার ৮১৬ জন ও এজাহারবহির্ভূত ১০ হাজার ৩৮৮ জন। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৪২ জনকে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে সারাদেশে দলটির এক হাজারের বেশি জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দেশে যখন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসে বা নির্বাচন হয় তখন রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যায়। আবার রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকে কেন্দ্র করেও বাড়ছে রাজনৈতিক সহিংসতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫৮ জন নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। আমাদের দেশে যখন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসে বা নির্বাচন হয়, তখন রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যায়। এর পেছনে মূল কারণ রাজনীতি ও দলগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের যে চর্চা তা প্রায় অনুপস্থিত। পরস্পর সহনশীলতার জায়গাগুলোও আমরা লক্ষ্য করি না। রাজনৈতিক সহিংসতার একটি ভবিষ্যৎ আছে। কারণ এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত বা নিহত হলে সেই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে তার বিনিময় বা সুবিধাটা পান। তাই যতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক ও আদর্শিক রাজনীতি না আসবে ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতা থাকবে।

তিনি বলেন, যে কোনো সহিংসতার বিষয়ে পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবে এটাই আশা করি। কিন্তু আমাদের দেশে দেখি সরকার পুলিশকে ব্যবহার করে। আমরা প্রত্যাশা করি, পুলিশ সব নাগরিকের প্রতি সমানভাবে দৃষ্টি দেবে। এতে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। সহিংসতা ও নাশকতা বাড়লে এর ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা এবং পদক্ষেপ নিতে হয়। মামলা নিতে হয়। গ্রেফতারের বিষয়টিও থাকে। অতীতে বাড়তে দেখা গেছে, এবার যেন না বাড়ে সেই আশা করবো। কিন্তু কেউ যদি সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে, মারামারি হয় তাহলে তো মামলা হবেই। রাজনৈতিক বিষয়ে নগর এলাকায় কিছু নিয়ম মেনেই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে হয়। নিয়ম মেনে করলে কোনো ঝামেলা হয় না।