• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ন

এমপি ফারুক খানের কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতির খোলা চিঠি


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৩১, ২০২১, ৪:৪৭ অপরাহ্ন / ৭৭৪
এমপি ফারুক খানের কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতির খোলা চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নবরূপে মুক্তিযুদ্ধা এম,পি ফারুখ খান প্রকৃত সত্য উদঘাটনে ১৩টি প্রশ্নের সদোত্তর প্রত্যাশায় এমপি ফারুক খানের কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতির খোলা চিঠি

জনাব,সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার নামে গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগসহ নানা মাধ্যমে অনেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার ভূমিকা নিয়ে নানা আপত্তিকর বক্তব্য/ মন্তব্য প্রকাশ করছে।

আমার স্থায়ী ঠিকানা গোপালগঞ্জ-০১ নির্বাচনী এলাকায় হওয়ায় এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডের সহিত সরাসরি প্রায় ৩০ বছর যাবত জড়িত থাকার ফলে দেশ-বিদেশ থেকে নানা বক্তব্য ও মন্তব্য শুনে খুবই বিব্রতবোধ করছি।

এমতাবস্থায় প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আপনার মুক্তিযোদ্ধা হওয়া না হওয়া প্রসঙ্গে ১৩টি প্রশ্নের সদুত্তোর কামনায় আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
০৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা ও মুক্তির যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেখানে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ০৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ, কয়েক লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম ও বীর মুুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রিয় মাতৃভূমি আজ স্বাধীন কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম এখনও চলমান, সেদিক থেকে আপনি, আমি ও আমরা একেক জন মুক্তি সংগ্রামী বটে ।

ঐতিহাসিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রমানিত এবং স্বীকৃত যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধিটা মূলতঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সস্ত্রত অংশগ্রহনকারি বা বঙ্গবন্ধু সরকার আমলে প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বীকৃত ব্যক্তিবর্গ (নর-নারী)’র ক্ষেত্রে প্রোযোজ্য।

মূল প্রসঙ্গঃ মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার বীরত্বগাঁথা ইতিহাস জাতি জানে না বিধায় স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনি ২০২১ সালে গেজেট ভুক্ত হওয়ায় অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া মূলক মন্তব্য প্রকাশ করছে। তাদের বক্তব্য ও মন্তব্য অমূলক বা অসত্য তাও ভাবার অবকাশ নাই কারণ আপনার পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য সম্বলিত কোন মন্তব্য বা বক্তব্য অদ্যাবধি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর থেকে অদ্যবধি অমুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা বিরোধীদের মুক্তিযোদ্ধা বনে যাওয়ার অনেক নির্লজ্জ কাহিনীর প্রত্যক্ষ্যদর্শী হওয়ায় হয়তোবা ওরা আপনাকে নিয়ে আনুমানিক সন্দেহ বশতঃ এমন মন্তব্যও হতে পারে।

আপনি মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা গেজেট ভুক্ত এমন মন্তব্যের অনেক অতীত প্রেক্ষাপট থাকতে পারে যা, আপনার পরিবারের সদস্যদের ৭১’র বিতর্কিত ভূমিকাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধাচরণ করার জনশ্রুত ঘটনা প্রবাহের খেসারত ।

আমার নিজের অপরাধ বোধ হচ্ছে এই মর্মে যে, ১৯ ডিসেম্বর ভাটিয়াপাড়া মুক্ত দিবস, আমার নিজ এলাকা যেখানে প্রতিবারই অনুষ্ঠান হয় এবং সেখানে আমাকে সঞ্চালক হিসেবে সুযোগ দেওয়া হয়, যার কৃতিত্ব আমার প্রিয় মানুষ লাভলু খান নানা এবং আমার বাবার বন্ধু, ভাটিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক শ্রদ্ধাভাজন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত স. ম. তৌহিদুর রহমান ।
কয়েক বছর আগে রেল ষ্টেশন মাঠে মুক্ত দিবসের কর্মসূচীতে আপনি অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন আমি ঐ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে আপনার নামের আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মোধনটা দাওয়াত পত্রে দেখিনি এবং কোথাও আপনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন একথা শুনিনি।

আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরেও আপনার নিজ নির্বাচনী এলাকা ( গোপালগঞ্জ – ০১)’র মধ্যে প্রকাশ্যে আপনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে সেদিন যে অপমান করেছিল তা মুখ বুজে সহ্য করা আপনার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এতবড় একটা অপরাধ করার পরেও আয়োজকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় মুক্তিযুদ্ধে আপনার ভূমিকা কি সেটার স্পষ্টতা প্রয়োজন বিধায় আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তরই সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে সহায়ক ।

আশাকরি আমাদের মহৎ উদ্যোগকে সফল করতে আপনি ও আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা এই ২০২১ সালের আগষ্ট মাসের মধ্যেই তথ্য সরবরাহ করে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।

আওয়ামী লীগ আমাদের অস্তিত্ব ও আদর্শের ঠিকানা, এটা কারো পৈত্রিক সম্পত্তি/ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নয়। যেহেতু আপনি মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আসীন সেহেতু এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান পরিস্কার হওয়া আবশ্যক।

লেঃ কঃ ফারুক খান এর নিকট আমাদের প্রশ্নঃ

(১) মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার ভূমিকা কী ?

(২) মুক্তিযোদ্ধার সংঙ্গা অনুযায়ী আপনার ধরণ কী?

(৩) আপনি সংগঠক নাকি সম্মুখ যোদ্ধা ?

(৪) মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে আপনার পেশা কী ছিল?

(৫) আপনি কত তম লং কমিশন ব্যাচের ?

(৬) পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় আপনার সর্বশেষ পদবী কী ছিল?

(৭) ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনি কোথায় কোন দ্বায়িত্বে ছিলেন।?

(৮) মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার সেক্টর নং কত এবং সেক্টর, সাব সেক্টর, কম্পানি ও প্লাটুন কমান্ডার কারা ?

(৯) মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার ১ম ও শেষ এবং স্মরণীয় সম্মুখ যুদ্ধ কোনটা ?

(১০) আপনি যদি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ত্যাগ করে নিজ মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করেন তাহলে আপনার নাম সেনাবাহিনীর তালিকায় থাকা আবশ্যক নয় কি ?

(১১) যদি আপনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তাহলে আপনার নাম সাধারণ গেজেটে প্রকাশ হওয়াটা লজ্জাস্কর নয় কি ?

(১২) স্বাধিনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার নাম গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় যে বা যারা এটা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে তাঁদেরকে প্রকৃত বিষয়টি অবগত করা আপনার দ্বায়িত্বের অংশ নয় কি?

(১৩) আপনার মুক্তিযোদ্ধা হওয়া নিয়ে যে বা যারা বিরুদ্ধাচরণ করছে তাদের বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার গেজেটভুক্তি মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃতির শামিল নয় কি ?

প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যহত।অহেতুক কাঁদা ছুড়াছুড়ি না করে আসুন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস রক্ষার্থে ন্যায় ও আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলা বিনির্মাণে জাতির পিতার আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকতে অঙ্গিকারবদ্ধ হই।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ চিরজীবী হউক

 

বিনীত

মেহেদী হাসান

সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। চেয়ারম্যান

মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ। সদস্য, মুুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ কমিটি,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।