বিশেষ প্রতিনিধিঃ তাবিজ-কবজ বিক্রি, জাদুটোনা আর সাঁপ খেলা দেখিয়ে যাদের জীবন সংগ্রাম তারা আর কেউ নয় ছিন্নমূল,অসহায় ও অধিকার বঞ্চিত বেদে সম্প্রদায় । যাযাবর বেদেদের জীবনপ্রণালী বড়ই বিচিত্র । রাস্তার পাশে,ফাঁকা মাঠে অথবা নদীর তীরে অতিথি পাখির মত এদের আগমন ঘটে । আবার একদিন তারা উধাও হয়ে যায়,কেউ খবর রাখে না। তারা যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যের এক নিষ্ঠুর বাস্তবতায় আচ্ছন্ন তার প্রমাণ পাওয়া যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম নামকস্থানে আসা অস্থায়ী ৭০ টি পরিবারের এক বেদেপল্লী থেকে । তারা গত একমাস ধরে এখানে এসেছে । দেশে করোনার প্রভাবের কারণে খুবই কষ্টে দিন যাপন করছে তারা । ফলে পল্লীর শিশুদের নেই নতুন জামাকাপড়, নেই ভাল খাবার । করোনা সংক্রমণের ভয়ে কেউ আসছেন না তাদের কাছে । এতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত বেদেপল্লীর শিশুসহ সকলেই।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তারা করোনার প্রভাবের আগে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে সাপ খেলা,তাবিজ-কবজ বিক্রি আর সোনা কুড়ানোর কাজ করে সংসার চালাতেন ।কিন্তু করোনা প্রভাব দেখা দেয়ায় গ্রামে-গঞ্জে যেতে পারছে না তারা ।তাই আয়-রোজগারও বন্ধ । এতে বেদেরা খুব অসহায় দিন যাপন করছে ।এবারের ঈদে জামাকাপড় দুরের কথা বাচ্চাদের একবেলা ভাল খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি বলে জানা যায় ।এখানে ৭০টি পরিবারের প্রায় কয়েক’শ সদস্য রয়েছে । কারো মুখে হাসি নেই । পরিবার নিয়ে কিভাবে চলবে এমন আশংকায় ভুগছে বেদে সম্প্রদায়ের এসব মানুষ ।
বেদেপল্লীর রিয়াজ জানায়, তারা কয়েকমাসের জন্য এখানে এসেছে । আবার চলে যাবে অজানা কোন এলাকায় ।করোনা চলে গেলে আবার একই পেশায় কাজ করবে তারা ।অন্যপেশায় কেন কাজ করে না এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, সাঁপ খেলা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেলে এ সম্প্রদায়ের অপমান হবে, এ ভেবেই বংশ পরম্পরায় এ পেশাকে যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে চায় তারা ।
সেন্টু নামে আরেক এক বেদে জানায়, করোনার কারনে আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খুবই কষ্টে দিন যাপন করছি। করোনা ছড়াবে এমন ভয়ে কেউ এখানে আসেও না, আর আমাদের সাহায্যও করেনা।
ওই বেদেপল্লীর সরদার আবদুল হক জানান , আমরা এখানে ৭০টি পরিবার রয়েছি । করোনার কারণে আমরা খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি ।সরকারতো জনগণকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু আমরা সহযোগিতা পাচ্ছিনা । সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমরাও যেন সহযোগিতা পাই, আমরাও যেন ২ বেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি ।