• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা : আটকে আছে মাদারীপুরের বধ্যভূমি উন্নয়ন ও সংরক্ষন কাজ


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১১, ২০২১, ১:২৪ অপরাহ্ন / ২১৬
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা : আটকে আছে মাদারীপুরের বধ্যভূমি উন্নয়ন ও সংরক্ষন কাজ

মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি : আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে মাদারীপুরের বধ্যভূমি উন্নয়ন ও সংরক্ষন কাজ। ২০১৩ সালে এই কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও এর কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এই কারণে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে মাদারীপুরের বিভিন্ন বধ্যভূমি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মাদারীপুরে ছোট-বড় ১৫টি বধ্যভূমি রয়েছে। এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ভাবে ২০১৩ সালে মাদারীপুরের ১০টি বধ্যভূমি উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য অর্ন্তভুক্ত করা হয়। মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ সমীক্ষা শেষে ২০১৪ সালে মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করে। মন্ত্রনালয় ১০টির মধ্যে ৪টি বধ্যভূমির উপর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের অনুমোদন দেয়। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও নানা জটিলতার কারণে গণপূর্ত বিভাগ সেগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি। একারনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার ভদ্রখোলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান বেপারী বলেন, মাদারীপুরে কমপক্ষে ১৫টি গণকবর রয়েছে। নতুন প্রজন্ম জানে না এই গণকবরের আসল ইতিহাস। তাই গণকবর সংরক্ষন করা উচিত। কবরকে সবাই শ্রদ্ধা করে কিন্ত মাদারীপুরের অনেক গণকবরই  অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান, মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের স্বজনদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলায় ৭টি এবং রাজৈর উপজেলায় ৮টি গণকবর বা বধ্যভূমি রয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলার কুকরাইল মৌজার এ.আর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে জেলার বৃহৎ বধ্যভূমি। এখানে প্রায় ৭শত মুক্তি পাগল নর-নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয় বলে দাবী মুক্তিযোদ্ধাদের।

বর্তমানে স্থানটি গো-চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। মিলের ডি-টাইপ বিল্ডিং এর টর্চার সেলে অসংখ্য নারীকে মাসের পর মাস আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বদ্ধভূমিগুলো হচ্ছে সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া সুষেন হালদারের বাড়ির পুকুর পাড় বধ্যভূমি। সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের তারাপদ শিকারীর বাড়ির পুকুর পাড় বধ্যভূমি। সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের মিঠাপুর শিকদার বাড়ি বধ্যভূমি। বর্তমানে এই বধ্যভূমির উপরে গড়ে উঠেছে দ্বিতল ভবন, রয়েছে ব্যাংক ও অন্যান্য অফিস।

সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের মিঠাপুর গোপী ঠাকুরের বাড়ির পেছনে পুকুরের উত্তর পাশে বধ্যভূমি। বর্তমানে সেখানে বাঁশঝাড় ও মরিচ-বেগুনের চাষ করা হচ্ছে। সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের চৌহদ্দি হাটখোলা বধ্যভূমি। সদর উপজেলার পৌরসভার অধীন কুলপদ্বী সাবেক সরকারি শিশু সদন ভবনের পূর্ব পাশে বধ্যভূমি, যেখানে দোলযাত্রার ভাঙ্গা মঠ রয়েছে। বর্তমানে এর চারপাশ বেদখল হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে মানুষের ঘরবাড়ি। এছাড়াও রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া, ছাতিয়ান বাড়ি, উল্লাবাড়ি ও পলিতা গ্রামের ৮টি বধ্যভূমিতে ১২৭ জন নর-নারী শহীদের লাশ রয়েছে।

১৯৭১ সালে এই ৪টি গ্রামে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। স্থানীয় শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিজেরেদ উদ্যোগে ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল সেনদিয়া গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন। এই স্মৃতিস্তম্ভে ১২৬ শহীদের নাম সম্বলিত একটি শিলালিপি লাগানো হয়েছে। সেদিন গণহত্যার সময় পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা অমূল্য কুন্ডুর ঘরে আগুন দিয়ে ঘরসহ তার বৃদ্ধা মাকে পুড়িয়ে হত্যা করে। বৃদ্ধার নাম না জানার কারণে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে তার নাম খোঁদাই করা সম্ভব হয়নি।

বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ব্যাপারে মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কামরুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ১০টার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। মন্ত্রনালয় থেকে পাস হয়েছে ৪টা। এই ৪টার মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনোটারই কাজ শুরু করতে পারি নাই। তবে আশা করছি খুব শিগগিরই দুইটার কাজ শুরু করতে পারবো। ডিসি অফিসে আমি জায়গা চেয়েছি। ডিসি অফিস থেকে দুই সপ্তাহ দুয়েক আগে ডিসি মহোদয় জায়গা ভিজিট করেছেন। একটা কেন্দুয়ায়, একটা মিঠাপুরে। এই দুইটার উপরে এসিল্যান্ড খুব শিগগিরই একটা প্রস্তাব দিয়ে দিবে। এসিল্যান্ড প্রস্তাব দিলে আমরা মিনিস্ট্রিতে পাঠিয়ে কাজ শুরু করে দেবো। জুট মিলেরটাও লিষ্টে আছে। যেহেতু জায়গাটা নিষ্কন্টক না, সেহেতু ওখানে কাজ শুরু করতে পারছি না।

এব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা কমান্ডার ড. রহিমা খাতুন বলেন, জমি সংক্রান্ত ঝামেলার কারনে সবগুলোর কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে দুটি বধ্যভূমি সংরক্ষন ও উন্নয়ন কাজ খুব শিগগিরই শুরু করা হবে।