ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রীপরিষদ থেকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে যখন পদত্যাগের নির্দেশ দেন তখন তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। এখানকার পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লুর বিলাসবহুল একটি কক্ষে অবস্থানকালেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার সেই খবর পান তিনি। এরপর হোটেলে অবস্থানের পুরোটা সময় নির্বিকার ও বিমর্ষ দেখা গেছে তাকে। ওই হোটেলটিতে প্রায় ১২ ঘণ্টা অবস্থান করার পর সোমবার গভীর রাতেই ফের ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছাড়েন তিনি। এরআগে বিতর্কিত ‘কল রেকর্ড’ ফাঁস হওয়ার পর সারাদেশে যখন তোলপাড় চলছিল তখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে আসেন মুরাদ।
মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করে রেডিসন ব্লু বে ভিউর সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) পারভেজ চৌধুরী বলেন, মন্ত্রীপরিষদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ হাসান সোমবার বিকেল ৩টার দিকে রেডিসনে উঠেন। কিন্ত রাত ২টার দিকে তড়িঘড়ি করে তিনি হোটেল ছাড়েন।
মুরাদ হাসানের চট্টগ্রামের ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন, সোমবার হোটেল রেডিসন ব্লুবেতে রাতযাপনের পর মঙ্গলবার এক বন্ধুর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল তার। এজন্য ডাবল বেডের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন তিনি। কিন্ত পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে রাতেই হোটেল ছেড়ে ঢাকার পথ ধরেন তিনি। হোটেলে অবস্থানকালে পুরোটা সময় নির্বিকার ও বিমর্ষ দেখা গেছে তাকে।
প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে সর্তক ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে দেশের সকল বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ডা. মুরাদ হাসান দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে দ্রুত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করার। সংশ্লিষ্ট্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের (এসবি) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং কর্মকান্ডের কারণে ডা. মুরাদ সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কিছু অডিও-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। সব কিছুই আমাদের নজরে রয়েছে। সরকারের উ্চ্চ পর্যায়ের নির্দেশ ব্যতিত তিনি যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সে জন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সর্তক। হযরত শাহজালাল আন্তজাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সকল ইমিগ্রেশনে এরই মধ্যে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমতি নেয়ার। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ডা. মুরাদ দেশের বাইরে যেতে পারেন এমন কোন তথ্য এখনও আমাদের কাছে নেই। কিন্ত এ ধরণের পরিস্থিতিতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অতীতের ঘটনার মতোই সর্তক বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মুরাদ হাসান লেখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্ব-শ্রদ্ধেয় সালাম নেবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গত ১৯ মে ২০২১ তারিখের স্মারকমূলে আমাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমি আজ ৭ ডিসেম্বর ২০২১ সাল থেকে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক। এমতাবস্থায়, আপনার নিকট বিনিত নিবেদন, আমাকে অদ্য ৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার লক্ষ্যে পদত্যাগপত্র গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি। পদত্যাগপত্রে ভুল লিখেছেন মুরাদ। ২০১৯ সালে তাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও পত্রে তিনি ২০২১ উল্লেখ করেন। মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য।
আপনার মতামত লিখুন :