মোস্তাইন বীন ইদ্রিস (চঞ্চল), খুলনা: সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে ৩৫ কোটি টাকা চেয়ে তিন কোটি টাকা পেয়েছে বন বিভাগ। এর ফলে আগামী বছরে কাজ শুরু হতে পারে। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প তিন বছর মেয়াদি। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
সরকারের কৃচ্ছ্র সাধন নীতির কারণে টাকা বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে এই প্রকল্পটি। গত সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশন তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে, সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা করা এবং সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও চারটি রেঞ্জের কমিউনিটি প্যাট্রল গ্রুপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, পোশাক সরবরাহ ও প্রতি মাসে বনকর্মীদের সঙ্গে মাসিক সভা করা। এ ছাড়া বাঘের খাবার হিসেবে বিবেচিত হরিণ ও শূকর গণনা করা, বাঘ রোগাক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করা; বনের তিন অভয়ারণ্য এলাকায় তিনটি মাটির ঢিবি (উঁচু স্থাপনা) তৈরি করা, যাতে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের সময় বাঘ ও অন্যান্য প্রাণী সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বসতির কাছাকাছি বন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার এলাকা নাইলনের বেড়া দেওয়া। পূর্ব সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণও এই প্রকল্পের অন্যতম কাজ। বাঘ গণনার কাজটি হবে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে।
প্রকৃতপক্ষে চলতি অক্টোবর-নভেম্বর মাসে প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হওয়ায় এর বাস্তবায়নও দেরি হবে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও এই প্রকল্পের পরিচালক আবু নাসের মহসিন বলেন, প্রকল্পের একটি অংশে তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। তাই দিয়ে বাঘ গণনার কাজ শুরু করা হবে। বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের অংশে নাইলনের বেড়া বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি সম্ভব হয়, জিউধরা, খড়মা, নাংলি, বৈদ্যমারী ও গোলখালী এলাকায় নাইলনের বেড়া দেওয়া হবে। কারণ ওই সব এলাকার সংলগ্ন লোকালয়ে মাঝেমধ্যেই বাঘ চলে আসে। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করতে জানুয়ারি লেগে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, বাঘ সারা বিশ্বে একটি বিপন্ন প্রাণী। বিশ্বের ১৩টি দেশে তিন হাজার ৮৪০টি বাঘ টিকে আছে। ২০১৮ সালের জরিপ মতে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০০৯-২০১৭), ২০১০ সালের বিশ্ব বাঘ সম্মেলনের অঙ্গীকার, দ্বিতীয় টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৬-২০২৭) ও গ্লোবাল টাইগার ফোরামের সিদ্ধান্তের আলোকে দেশে বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ এবং সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও এর সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :