• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন

সুন্দরবনে কোনঠাসা দস্যুরা এখন সাগরে


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৪, ২০২১, ১২:৩৬ অপরাহ্ন / ১৮৫
সুন্দরবনে কোনঠাসা দস্যুরা এখন সাগরে

ঢাকা : সুন্দরবনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব- ৮) অভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হওয়ায় কোনঠাসা হয়ে পড়া দস্যুরা সমুদ্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে এ দস্যু গ্রুপকে শনাক্তের পাশাপাশি ছয়জনকে অস্ত্র, নৌকা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মালামালসহ গ্রেফতার করায় উপকূলীয় এলাকার জেলেদের মধ্যে অনেকটাই সস্তি ফিরে এসেছে।

এদিকে র‌্যাব জানিয়েছে, দস্যুগ্রুপের পালিয়ে থাকা সদস্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী আমরা জানতে পারি, সুন্দরবনে আমাদের আভিযানিক সক্ষমতা অনেক বেড়েছে এবং আমরা সুন্দরবনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তাই তারা সুন্দরবনের ভেতরে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিলো না বলে সমুদ্রে এখন ডাকাতি কার্যকম শুরু করছে। বলেশ্বর নদী থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে সমুদ্র এলাকায় দস্যুরা মূলত নিয়মিত ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তিনি বলেন, দস্যুদের অধিকাংশ সদস্যকে ইতিমধ্যে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকী সদস্যদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।

এদিকে গনমাধ্যম ও র‌্যাব সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে দূরবর্তী বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি দস্যুতার ঘটনা ঘটে। যেখানে দস্যুরা মাছ ধরার ট্রলারে হামলা করে জেলেদের অপহরণ, লুন্ঠ ও মুক্তিপণ দাবি করেছে। এছাড়া সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকায় গুলিয়ে একজনের নিহতের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা হতে জেলেরা বোট নিয়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে যায়। এরপর ২০ নভেম্বর সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে (পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালীর বলেশ্বর এবং পায়রা মোহনা) পর্যায়ক্রমে ৭ টি নৌকায় ডাকাতি করে মোবাইলসহ মূল মাঝি ও কয়েকজন সদস্যসহ ৭ জনকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। এরপর লুন্ঠিত মালামাল বিক্রিসহ জিম্মি থাকা ৭ জনের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপন দিতে চাপ প্রয়োগ করে জলদস্যুরা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, এ ঘটনাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন পূর্বক র‌্যাব চতুর্মুখী উদ্যোগ নেয় এবং আভিযানিক ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। র‌্যাব-৮ এর আভিযানিক দল বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে ও সমুদ্রের নিকটবর্তী চরাঞ্চল যেমন: ডালচর, সোনারচর, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করে। পাশাপাশি হেলিকপ্টারযোগে টহল পরিচালনা করে র‌্যাব।

র‌্যাবের গতিবিধি ও তৎপরতা আঁচ করতে পেরে সর্বোশেষ অপহৃতদের গত ২৩ নভেম্বর নৌকায় রেখে ডাকাতরা চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় স্থানীয় জেলে নৌকাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়ে এসে ভিকটিমদের ওপরে হামলা চালিয়ে কৌশলে স্থান ত্যাগ করে অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়ার পরেও র‌্যাব জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখে মোবাইল ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে মুক্তিপণের অর্থ প্রবাহের ওপর গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। র‌্যাব গোয়েন্দারা নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে এ সংক্রান্ত ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩০ নভেম্বর নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা হতে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমায় জেলেদের নৌকায় ডাকাতির মূল মুক্তিপণ সংগ্রাহক মো. ইলিয়াস হাসেন মৃধাকে পাচ লাখের অধিক টাকাসহ গ্রেফতার করে।

এরপর তার দেওয়া তথ্যে গোয়েন্দা অনুসন্ধান বাড়ায় র‌্যাব। যার ধারবাহিকতায় আজ সকালে আগ্নেয়াস্ত্রসহ জলদস্যুদলের মূল সমন্বয়কারী মো. খলিল জমাদ্দারসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। খলিল তালতলী, আমতলী,পটুয়াখালীতে দোকান পরিচালনার ছদ্মবেশে ডাকাতি কার্যক্রমের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকে।

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, গ্রেফতারকৃতরা বঙ্গোপসাগরের সংঘবদ্ধ জলদস্যু দলের সদস্য। যে ডাকাত/জলদস্যু দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৮ জন। সর্দারের নেতৃত্বে বিগত ৪ বছর আগে দলটি সংঘবদ্ধ হয়। বিভিন্ন সময়ে তারা মাছ ধরার মৌসুমে সমুদ্রে জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবী ও মালামাল লুণ্ঠন করে থাকে। তারা চট্টগ্রাম,সন্দ্বীপ, কক্সবাজার ও ভোলাসহ পটুয়াখালী, বরগুনা ইত্যাদি এলাকার দূরবর্তী বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতা/সাগরে দস্যুতা করে থাকে।

র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসান জানান, ১৮ জনের জলদস্যু এই দলের সদস্যরা কয়েকটি (৩/৪) ভাগে ভাগ হয়ে ডাকাতি করে থাকে। একটি উপদল অস্ত্রসহ অপহরণ ও লুটতরাজে অংশগ্রহণ করে। সর্দারের নেতৃত্বে এই উপদলে সাধারণত ১০ জন সদস্য থাকে। অপর ৩ জনের একটি উপদল, মূল দলের সহযোগী হিসেবে ডাকাতিকালীন সময়ে কাজ করে। যারা প্রয়োজন অনুযায়ী লুণ্ঠিত মালামাল সাগর হতে উপকূলে নিয়ে আসে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থানরত পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়কারী দলের নিকট হস্তান্তর করে। ৩ থেকে ৪ জনের সমন্বয়ে গঠিত এ দলটি বিভিন্ন মৎসব্যবসায়ীদের নিকট সেই মালামাল বিক্রি করে। এছাড়া এরা সাগরে গমনাগমনকারী মৎসজীবিদের ব্যাপারে গোপন তথ্যও সংগ্রহ করে থাকে।

তাছাড়া সর্বক্ষনিক বিভিন্ন গ্রুপের ভিতর সমন্বয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি ও সংগঠিত ডাকাতির প্রতিক্রিয়া ও ভূক্তভোগী পরিবার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়া মুক্তিপণ সংগ্রহ করার জন্য ভিন্ন আরও একটি ৩ জনের উপদল রয়েছে। যারা ঢাকা, নারায়নগঞ্জ সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান পরিবর্তন করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মুক্তিপণ সংগ্রহ করে থাকে ।