নিজস্ব প্রতিবেদক,আশুলিয়া,সাভারঃ ঢাকার আশুরিয়ায় মাদক সন্ত্রাসীদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। আশুলিয়ার জামগড়া উত্তর মীর বাড়ির বাসিন্দা ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মোঃ তাজিবুল মীর (৩১) মদ্যপান করানোর কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। ৬-৭ জন ভাই বন্ধু পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য মাদক সেবন করানোর অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। আশুলিয়া মামলা নং ৩৯/৩৯। তারিখ: ১৮/০১/২০২৩ইং।
উক্ত মামলার আসামীরা হলেন, আশুলিয়ার জামগড়ার মীর বাড়ির মোঃ তমিজ উদ্দিন মীরের ছেলে ১নং আসামী মোঃ সুমন মীর (৩০), ২নং আসামী মোঃ হিরা মিয়া (৩০), ৩নং আসামী মোঃ শামীম (৩০), ৪নং আসামী মোঃ সুমন মিয়া (২৮)। ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ জানায়, গত (৬ জানুয়ারি ২০২৩ইং) সন্ধ্যায় উল্লেখ্য ব্যক্তিদের যোগসাজসে ৬-৭জন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন, এসময় তাজিবুল মীর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, এরপর ভিকটিম তাজিবুল মীরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় ২১দিন। তারপর তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন ডাক্তার।
এদিকে আশুলিয়ার ভাদাইল ও জামগড়া এলাকার সাধারণ মানুষ মাদক সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। কিশোর গ্যাং, চঁদাবাজদের লিডার কর্তৃক সংবাদ কর্মীসহ অনেকেই হামলা মামলার শিকার হয়েছেন বলে অনেকেই জানান। ভাদাইল ও জামগড়ার মধ্যে রূপায়ন আবাসন-১ এর মাঠসহ আশপাশের এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, এমনকি খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, এ যেন ক্রাইম জোন এলাকায় পরিণত হয়েছে বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে হুমকি দেয়া হয় এবং অনেকের উপর হামলা মামলা করার অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর মীর বাড়ির মৃত সফুর উদ্দিন মীরের ছেলে মোঃ ওয়াহিদ মীর (৬০), ভিকটিম তাজিবুল মীরের বাবা বাদী হয়ে উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়া থানাধীন ভাদাইল সাকিনস্থ ৪নং বিবাদীর অফিসের ভিতর, ভাদাইল, ধামসোনা, আশুলিয়া, ঢাকা। এ ঘটনা ও সময় ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, সন্ধ্যা অনুমান ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে। সূত্র জানায়, ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভাই বন্ধু ব্যবসায়ীদের সাথে তাজিবুল মীরের মিটিং হয়েছে, মিটিং শেষে পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন ৬-৭জন, অন্য কারো সমস্যা না হলেও তাজিবুল মীরের মরণ যাত্রা হয়েছে।
উক্ত ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে সুমন মিয়াকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি, সুমন মিয়ার বাবা মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, এই ঘটনার পর থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি অনেকবার ছেলের সাথে কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাচ্ছিনা। এদিকে ভিকটিম তাজিবুল মীরের খালাতো ভাই মোঃ রনি বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি রনি’র অফিসে গিয়ে সুমন মীর, হিরা মিয়া, শামীম, সুমন মিয়াসহ ৬-৭জনকে পেয়েছি, সেখানে দুইটি বিদেশী মদের বোতল দেখতে পেয়েছি, সেই দুই বোতলের মধ্যে এক বোতল পুরো খালি ছিলো আর এক বোতলের অর্ধেকটা ছিলো, তাজিবুল মীর ভাইয়ের চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পারছিলো না এমন কথা বলছিলো, অনেকেই বলছেন বিষয়টি রহস্যজনক।
এ মামলার বাদী মোঃ ওয়াহিদ মীর বলেন, আমার বড় ছেলে তাজিবুল মীরকে যারা মদ্যপান করিয়েছে তাদের কাউকেই আমি দেখিনি কিন্তু আমার ছেলের খালাতো ভাই রনি যাদেরকে চিনতে পেরেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি, এদিকে আমার ছেলে মৃত্যুর মুখে আর আমার ছেলের ইন্টারনেট ব্যবসা দখলের চেষ্টা করে প্রায় ৪০টি সংযোগ কেটেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী মোর্শেদ ভুঁইয়ার ছেলে মোঃ মারুফ আলী ভুঁইয়া (২৬)। তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবারের সাথে কারো কোনো বিবাদ নেই, শুধু ছেলেটা নেটের ব্যবসা করে, আমার জীবনে অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদেরকে বড় করেছি, আমার তাজিবুল মীরের ১১ বছরের একটি মেয়ে ও এক বছরের একটি অবুঝ ছেলে রয়েছে, আমার ছেলের মৃত্যুর কারণ কি? এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি, পুলিশ প্রশাসন ও র্যাবের কাছে আবেদন, এ ব্যাপারে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আটক করাসহ তাদের কঠিন শাস্তিসহ সঠিক বিচার চাই। এদিকে নিহত তাজিবুল মীরের বাবা উক্ত ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন, একদিকে ছেলের লাশ, অন্যদিকে বিভিন্ন মহলে তার মৃত ছেলের লাশ নিয়ে রাজনীতি চলছে বলে অনেকেই জানান।
আশুলিয়া থানার (এসআই) নোমান ছিদ্দিক বলেন, আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইল (মধ্যপাড়া) এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মোঃ সুমন মিয়া’র অফিসে গত ৬ জানুয়ারি ২০২৩ইং তারিখে তাজিবুল মীর নামের এক যুবককে পরস্পর যোগসাজসে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করানোর অপরাধে আশুলিয়া থানায় ভিকটিমের বাবা ওয়াহিদ মীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন, এই মামলা তদন্ত চলমান এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলে এই পুলিশ অফিসার জানান। উক্ত ঘটনার ২২দিন পর শনিবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাজিবুল মীরকে মৃত ঘোষণা করেছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত তাজিবুল মীরের লাশ তার বাড়িতে আনতে পারেনি ভুক্তভোগী পরিবার। সেই সাথে উক্ত মামলা থেকে আসামীদের নাম পরিবর্তন করার চেষ্টা অব্যাহত আছে একটি মহল। আশুলিয়া থানা পুলিশ উক্ত মামলার ১১ দিনেও কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অনেকেরই প্রশ্ন ভুক্তভোগী পরিবার সঠিক বিচার পাবেতো?।