নিজস্ব প্রতিবেদক, আশুলিয়া, সাভারঃ গত ৫ ই আগষ্ট ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পতন হয় আওয়ামীলীগ সরকারের। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পর নতুন প্রেক্ষাপটে রাজনীতির মাঠ দখল নেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি । বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির মাঠ অনেকটাই চাঙ্গা। আর এ সুযোগে যারা আওয়ামীলীগ সরকারের সুবিধা ভোগ করেছেন এবং আওয়ামীলীগের হাইব্রিড কর্মী হিসেবে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রেখেছিলেন সেই হাইব্রিডরাই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন আশুলিয়ার বিএনপি ‘নেতাকর্মী’ সেজে আবার আধিপত্য বিস্তার করছেন । দাপট দেখাতে শুরু করেছেন নিজ নিজ এলাকায় নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে হাইব্রিডদের যোগসাজসে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন দখল, চাঁদাবাজি আর অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, মফিজ ভূইয়ার ছেলে জামান ভূইয়া, মৃত শফি উদ্দি ভূইয়ার ছেলে সাফাজ উদ্দিন ভূইয়ারা হাইব্রিড আওয়ামীলীগ কর্মী , সাফাজ ভূইয়ার ছেলে সাইফ ভূইয়া ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। জামান ভূইয়া ও সাফাজ উদ্দিন ভূইয়ার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতা হত্যার মামলা রয়েছে, আশুলিয়া থানা মামলা নং- ১৬। যারা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করেছে ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় যারা নির্বিচারে গুলি করে সাধারণ মানুষদের হত্যা করেছে এরা পুরো পরিবার স্বৈরশাসকদের দোসর। ৫ ই আগষ্টে গনহত্যার দায়ে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে জামান ভূইয়ার বিরুদ্ধে। তার মধ্যে অন্যতম আশুলিয়া থানা মামলা নং- ১৬, ২০ আগষ্ট ২০২৪ ইং। উক্ত মামলায় জামান ভূইয়া ও সাফাজ উদ্দিন ভূইয়া এজাহারভূক্ত আসামি, এদের বিরুদ্ধে রয়েছে ছাত্র জনতার হত্যা মামলাসহ বিস্তার অভিযোগ । জামান ভূইয়া, সাফাজ ভূইয়া ইয়ারপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুমন ভূইয়ার সাথে কাঁধ মিলিয়ে স্বৈরশাসকের পক্ষে গনহত্যা চালিয়ে এসেছে, তাদেরকে এখন দেখা যাচ্ছে বিএপির মিছিল মিটিংয়ে। ছাত্র জনতার রক্তের সাথে বেইমানী করে এখন তারা ভোল পাল্টে ফেলে বলে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছে। জামান, সাফাজ উদ্দিন ভূইয়ারা আসলে কোনও দলকে ভালোবাসে না, এরা ভালোবাসে ক্ষমতাকে। তাই যে দল ক্ষমতায় এরা সেই দলের কর্মী সমর্থক হয়ে যায়। এরাই হলো ইতিহাসের শরিফ থেকে শরিফা হওয়ার মূল কারিগর। এরা পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ঝোপ বুঝে কোপ মারায় বিশেষ পারদর্শী। সারাদেশে দলের বদনাম করতে হাইব্রিড জামান- সাফা ভূইয়ারাই যথেষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায় জামান- সাফা ভূইয়াদের দলে জায়গা করে দেয় কে? আসলে রাজনীতির খেলাটাতো মনে ওই জায়গায়। গুঞ্জন আছে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে একটা শ্রেনীর নেতারা তাদের দলে ঠাই করে দেয়। ফলে ভবিষ্যতে হাই হাইব্রিডদের কারনেই দলের ১২ টা বাজবে। আমরা কোনো গনহত্যাকারী স্বৈরশাসক ও তার কর্মী দোসরদের দলে দেখতে চাইনা। এরা বসন্তের কোকিল, এদেরকে বয়কট করুন। আমরা সাধারণ মানুষ চাই শান্তি। এদের মতো অনেকেই মামলা থেকে বাঁচতে এখন নতুন সুরে গান গাইছে এবং বিএনপি ঘাঁটিতে নিজেদের অবস্থান পাঁকা করতে চাইছে। তাই সুনামধন্য রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের দাবি দয়া করে আপনারা হাইব্রিড ও বিতর্কিত কোনো কর্মী দলে ঠাই দিবেন না। এরা সুযোগ বুঝে বুকে ছুরি বসাতে দ্বিধা করবে না। এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজ্বী আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, দলের সুসময়ে অনেক সুযোগ সন্ধানী বা হাইব্রীড কর্মীরা কৌশলে দলে অনুপ্রবেশ করতে চাইবে, এ ব্যাপারে আমরা তৎপর আছি। কোনও বিতর্কিত হাইব্রিড কর্মীদের দলে ঠাই দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জানতে সাফাজ উদ্দিন ভূইয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা দেওয়ান মইন উদ্দিন বিপ্লব বলেন, যাহারা ছাত্র জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে, ১৬ বছর ধরে দেশটা লুটেপুটে খেয়েছে তাদের কোনো কর্মী আমাদের প্রয়োজন নেই। আমার থেকে বেশি নির্যাতনের শিকার এ এলাকায় কেউ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। সেই তাদের সাথে আমাদের আতাত থাকবে প্রশ্নই ওঠেনা। আমরা কোনও কিছুর বিনিময়ে হাইব্রিডদের দলে স্থান দিবো না। অনেকেই আছে সভা- সমাবেশ বা মিছিল-মিটিংয়ের সময় কৌশলে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে নিজেদের বিএনপি কর্মী হিসাবে প্রচার করছে বা করতে পারে। এতে করে কি তারা বিএনপি কর্মী হয়ে গেলো, কখনো না। জুলুমবাজ, অত্যাচারীসহ সকল অন্যায়কারীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে। বিএনপি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে স্বচ্ছতার সাথে জনগণের ভালোবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :