নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ঘনিষ্ঠ দোসর হিসেবে পরিচিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের (ওয়্যারহাউজ ও ফায়ার প্রিভেনশন) সহকারী পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন ঘুষ দুর্নীতি ও লুটপাটের অপতিরোধ্য রাজত্ব গড়ে তুলে অধিদপ্তরে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আঁকড়ে রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। ক্ষমতাসীন এই মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় তিনি এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে অধিদপ্তরের ডিজিকেও পরোয়া করতেন না বলে ঘনিষ্ট সুত্র জানায়।
বিগত দিনে আনোয়ার হোসেনের ঘুষ দুর্নীতির চিত্র নিয়ে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে দেশের পটভূমি বদলেও বদলায়নি আনোয়ার হোসেনের ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের রথ। বরং দিনকে দিন যেন আরও লাগামহীন হয়ে উঠেছে। বহুতল বিল্ডিং এর সব মালিকরা তার হাতে জিম্মি। আনোয়ার হোসেনের টেবিলে চলে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য। দীর্ঘদিন ধরে একই চেয়ার আঁকড়ে আছেন তিনি মাঝখানে বদলি হলেও কর্তৃপক্ষকে ভেলকিবাজি দেখিয়ে আবারো ফিরে শুরু করেছেন তার দুর্নীতির রাজত্ব করা ওয়ারহাউজের একই টেবিলে।
রাজধানী ঢাকার বহুতল ভবন বিল্ডিং নির্মাণের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ছাড়পত্রের প্রয়োজন বিধিতে থাকলেও এডি আনোয়ারের পক্ষ থেকে মানা হচ্ছে না তার কানাকড়িও। যে কোনো বিল্ডিং সাত তলার উপরে করতে হলে তাদের প্রত্যেকেরই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অনুমোদন অর্থাৎ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক নিতে হবে। আর এই ছাড়পত্র প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে মোঃ আনোয়ার হোসেন, সহকারী পরিচালক ওয়্যারহাউস ও ফায়ার প্রিভেনশন।
অভিযোগ রয়েছে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন তাদের প্রত্যেকেই মোঃ আনোয়ার হোসেনকে ২/৩ লক্ষ টাকা ঘুষ প্রদান করতে হয়। ঘুষের টাকা দেয়া না হলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয় ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য, তারপরও মেলেনা কাঙ্খিত ছাড়পত্র। অন্যদিকে সেফটি প্লান বিদ্যমান ভবনের সেফটি প্ল্যান বাবদ ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নেন এই আনোয়ার হোসেন। কাঙ্খিত ঘুস প্রদান না করা হলে ফাইল আটকে রেখে ওইসব ভবন মালিকদের কে এক প্রকারে জিমি রাখা হয়।
সম্প্রতি আনোয়ারের ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কিছু ভুক্তভোগী প্রতিবেদকের কাছে তাদের বক্তব্যে এমনটাই ভয়াবহতা প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন বাড়ির মালিক জানান, এটি আনোয়ার ফায়ার সার্ভিসের সেবা নিতে আসা প্রত্যেকের সাথেই চরম বাজে ব্যবহার করে থাকেন।
অন্য আরেকটি সুত্র জানায়, সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেনের বিশ্বস্ত ৩৩টি কনসালটেন্সি ফার্ম এর মাধ্যমে এই ঘুষের টাকা নেয়া হয়। তার ব্যক্তিগত ও ঘনিষ্ঠজনদের এইসব ফার্মের বাইরে কাউকে কোন প্রকার কাজ দেয়া হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কনসালটেন্সি ফার্ম এর কর্মকর্তারা বলেন, কোন উপায় নেই এই কর্মকর্তাকে টাকা না দিলে কোন কাজই হবে না আপনি যত চেষ্টাই করেন না কেন। বাধ্য হয়েই আমাদেরকে এই টাকা মোঃ আনোয়ার হোসেনকে খুশি করতে দিতে হয়। এই কর্মকর্তা নিজেই মাঠে পরিদর্শনে বেরিয়ে যান। যদিও এর আগে কোন পরিচালক এভাবে পরিদর্শনে যাননি বা যাওয়ার কোন নজির নেই। ভাবটা এমন যে তিনি কাজের বিষয়ে বেশ সিরিয়াস। আসলে ওইসব কাজে যে ঘুষ নেওয়া হয়েছে সেটি কম হয়েছে কিনা তা দেখার জন্যই মাঠে যান। এতে বিরক্ত অনেক কনসালটেন্সি ফার্ম। ফায়ার রিপোর্ট বাবদ শতকরা ৫ টাকা কমিশন ছাড়া কোন রিপোর্ট প্রদান করেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মচারীগণ মানিকুজ্জামানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। সেবা প্রার্থী ও কর্মচারীগণ বলেন মোঃ আনোয়ার হোসেন একজন সিনিয়র সহকারী পরিচালক হওয়ার পরও সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রায়ই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এই গালিগালাজ থেকে বাদ যায় না অধীনস্থ কেউ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কর্মচারী বলেন, চাকরি করতে এসেছি মা-বাবা ভাই-বোনকে গালি শোনাতে নয়। অন্যায় করলে আমাকে বলা হোক কিন্তু এভাবে মা-বাবা তুলে কেন গালাগালি করবে সেটা অমানবিক। উপরোক্ত বিষয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগী সেবা প্রার্থী ও জুনিয়ার কর্মচারীগণ।
মোঃ আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন এই পথে থেকে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। পরিবারের লোকজনের নামে করেছেন সম্পদ ও নগদ অর্থ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিতেন এবং সেখান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মাসোহারা দিতেন বলে ফায়ার সার্ভিসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজকের বাংলাদেশ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়।
সূত্র আরও জানায়, তার অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি এবং সেনাবাহিনীকে নিয়েও অশালীন মন্তব্য করতেন তিনি। তিনি আরো বলতেন এমন ডিজি আসবে যাবে কোন ব্যাপার না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার পকেটে থাকে এরা কিছুই করতে পারবে না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বার বার তার মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।