• ঢাকা
  • শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

সাবেক বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে ১৫৫৭ সাংবাদিকের বিবৃতি


প্রকাশের সময় : জুন ২৭, ২০২১, ৩:১১ পূর্বাহ্ন / ২৪৫
সাবেক বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে ১৫৫৭ সাংবাদিকের বিবৃতি

বিশেষ প্রতিনিধিঃ দেশের ১৫৫৭ সাংবাদিক এক যুক্ত বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। তারা বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে আদালতে স্থায়ী জামিন প্রদানের মাধ্যমে জেল থেকে মুক্তি দেয়ারও দাবি জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, খালেদা জিয়া মারাত্মক অসুস্থ। তাঁর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ পরিস্থিতিতে তাঁর চিকিৎসা নিয়ে কখনো রাজনীতি কেনোমতেই বাঞ্ছনীয় নয়। সাংবাদিকরা বিবৃতিতে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৬ বছর। এই প্রবীন বয়সেও তিনি জেলবন্দী। অবশ্য সরকারের বিশেষ অনুমতিতে শর্তযুক্ত মুক্তিতে তিনি এখন নিজ বাসভবনে অবস্থান করছেন। নানা রোগাক্রান্ত হয়ে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ।

দীর্ঘ চার বছর তাঁর যথাযথ কোনো চিকিৎসা হয়নি। কারাগারে অমানবিক পরিবেশেও তিনি অনেক নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, কিডনী ও চোখের সমস্যা ছাড়াও পুরনো আর্থ্রাইটিস এবং নতুন করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ও কোভিড পরবর্তী জটিলতায় তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের কাছে তাঁর অসুস্থতার যে বিবরণ দিয়েছেন তা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, দেশের একজন শীর্ষ রাজনীতিক, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজেষ্ঠ নাগরিক, একজন নারী হিসেবে উপরন্ত একজন জেলবন্দী ব্যক্তির যথাযথ সুচিকিৎসা পাওয়া ন্যূনতম মানবাধিকারেরই অংশ। তাঁর মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা তাই আদালতের মাধ্যমে তাঁকে স্থায়ী জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই।

সাংবাদিকরা বিবৃবিতে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি এদেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপির মতো দেশের অন্যতম বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের তিনি চেয়ারপার্সন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি নিজেও অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বহুদলীয়, গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং এদেশের উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অসামান্য অবদান রয়েছে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে সরকার কর্তৃক সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়ায় সরকারি ক্ষমতা প্রত্যাহারসহ পত্রিকার ডিক্লারেশন প্রাপ্তিকে সহজ করে দিয়েছিলেন। আকাশ-সংস্কৃতির দরোজা খুলে দেয়ার পাশাপাশি জাতীয় প্রেস ক্লাবের জন্য সরকারি জমির বরাদ্দ চিরস্থায়ী করে দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি দেশের নাজুক অর্থনীতিকে কাঠামোগত নানা পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে চাঙ্গা করেছেন। অর্থনীতির উদারীকরণ ছাড়াও খালেদা জিয়ার আমলে নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা বিস্তারে প্রভ‚ত উন্নতি হয়। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ও উপবৃত্তি দেয়ার যুগান্তকারী কর্মসূচী তিনি চালু করেন। রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট তৈরি এবং মানুষকে স্বনির্ভর করে তুলতে নানা ধরনের আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচী তিনি চালু করেন।

যমুনা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প তাঁর আমলে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার সাফল্য এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। রাজনৈতিক সংঘাত, অনিশ্চয়তা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্তে¡ও নব্বই পরবর্তী সময়ে দেশে কখনো খাদ্য সংকট কিংবা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। দেশের সামাজিক সূচকগুলোও উন্নতি হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং রায়েরবাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তার আমলেই নির্মিত হয়েছে।

আমরা আশা করি এমন একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের সামগ্রিক অবদান এবং তাঁর বার্ধক্যের এই কঠিন সময়ের কথা বিবেচনা করে সরকার রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভ‚তিশীল আচরণ প্রদর্শন করবেন। তিনি যাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন তার ব্যবস্থা করলে সরকারের এই পদক্ষেপকে দেশবাসী ইতিবাচক হিসেবেই দেখবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতা বিশিষ্ট ও সিনিয়ার সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (সাবেক এডিটর, নিউজ টুডে, সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব), আলমগীর মহিউদ্দিন (সম্পাদক, নয়া দিগন্ত), আমানউল্লাহ (সাবেক প্রধান সম্পাদক, বাসস), আবুল আসাদ (সম্পাদক, দৈনিক সংগ্রাম), শওকত মাহমুদ (সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব) ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী (সম্পাদক, দৈনিক দিনকাল), মোস্তফা কামাল মজুমদার (সম্পাদক, দ্য নিউ নেশন), সালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর (ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নয়া দিগন্ত), সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (উপদেষ্টা সম্পাদক, বাংলাদেশ খবর), কবি আবদুল হাই শিকদার (সাংবাদিক ও কবি), এরশাদ মজুমদার (সাংবাদিক ও কবি), কামাল উদ্দিন সবুজ (সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব), সৈয়দ আবদাল আহমদ (নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক আমার দেশ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাতীয় প্রেস ক্লাব), মাসুমুর রহমান খলিলী (উপ সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত), আমিনুর রহমান সরকার (সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক দিনকাল), এম আবদুল্লাহ (সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন), নুরুল আমিন রোকন (মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন), এম এ আজিজ (সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন), কাদের গনি চৌধুরী (সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন), ইলিয়াস খান, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব), শহিদুল ইসলাম (সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন), মুরসালিন নোমানী (সভাপতি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি), মুনশী আবদুল মান্নান (সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন), বাকের হোসাইন