
এম রাসেল সরকারঃ সাধারন বীমা কর্পোরেশনের (সাবীক) এমডি সৈয়দ বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে মোটা অংকের কমিশনের বিনিময়ে সকল ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সর্বনিম্ম ক্যাটাগরীর একটি বেসরকারী ব্যাংককে ২শ কোটি টাকার সর্ট-নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) বা এফডিআর দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কর্তৃক দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক গুলোতে ৮% মুনাফায় যেখানে সর্বোচ্চ ২/৩ কোটি টাকার বেশী এফডিআর দেয়ার রেকর্ড নাই সেখানে সর্বনিম্ন ক্যাটাগরীর ইউনিয়ন ব্যাংককে মাত্র ৬% মুনাফায় এধরনের বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করায় কর্পোরেশনের ভেতরে, বাহিরে, এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে সমালোচনার ঝড়। এতে বেলাল হোসেনের কমিশন বানিজ্যের চিত্র ফুটে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রনালয় কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সৈয়দ বেলাল হোসেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করার পর কিছু দিন মুখে নীতি কথা ছড়িয়ে, তার পছন্দের এবং বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ বিভাগে পদায়ন করে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। আর এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে তার স্বার্থ হাসিল করার জন্য কর্পোরেশনকে দেউলিয়া করার প্রতিযোগীতায় নামেন। সৈয়দ বেলাল হোসেন চাকুরীর মেয়াদ নভেম্বর ২০২৩। এই অল্প সময়ের মধ্যে যতটা কামিয়ে নেয়া যায়। যেসকল কর্মকর্তা তার কথা মতো কাজ করে না তাদেরকে অন্য দপ্তরে বদলী করে দেন এবং কেউ প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা গ্রহন করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
তার অবৈধ স্বার্থ রক্ষা করায় কর্পোরেশনের চিহ্নিত অপরাধী পেয়েছে পদায়ন। সৎ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে সরিয়ে তিনি তার চাকুরির শেষ সময়ে কমিশন বানিজ্যর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে পূর্বে বিভিন্ন দূর্নীতির সহিত জড়িত কর্মকর্তাদের ঐ সমস্ত গুরত্বপূর্ণ বিভাগে পদায়ন করিতেছেন বলে জানা যায়। এমডি বেলালের রোষানলে পড়ে চাকুরী যাওয়া এবং অন্যত্র বদলীর ভয়ে কর্পোরেশন ছোট বড় সকল কর্মকর্তাই আতঙ্কে থাকে, এমনকি সত্য প্রকাশেও ভয় পায়। কারন ইউনিয়ন ব্যাংকে ২শ কোটি টাকা এফডিআর দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সাহস রাখে না বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর/ডিপোজিট রাখার জন্য গঠিত কমিটির প্রধান সাধারন বীমা কর্পোরেশনের কেন্দ্রিয় হিসাব রক্ষন বিভাগের (অর্থ ও হিসাব) জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সেলিম হোসেন।
তবে এই কর্মকর্তা বলেন কিছু জানতে চাইলে এমডি মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে লিখিত আবেদন জানান, আমরা সমস্ত তথ্য সরবরাহ করার চেষ্টা করবো। আবার এমন এক কর্মকর্তা আছে যার সহি-স্বাক্ষর ছাড়া এফডিআর/ডিপোজিট রাখারই কোন সুযোগ নাই। সেই কর্মকর্তাও চাকুরী হারানো ভয়ে এতোটাই কম্পিত যে, সে এব্যাপারে কিছুই জানে না।
সুত্র জানায়, এমডি সৈয়দ বেলাল হোসেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশন থেকে সরকারী কোষাগারে ৫শ কোটি টাকা জমা দেয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে জমাকৃত যত এফডিআরের টাকা ছিলো তা সব ব্যাংক থেকেই উত্তোলন করেন। কিন্তু তিনি ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে তখন কোন এফডিআর উত্তোলন করেন নাই। মুলত এমডি নিজের স্বার্থকে (কমিশন বানিজ্য) হাসিল করতে সাধারন বীমা কর্পোরেশন থেকে ইউনিয়ন ব্যাংককে ২শ কোটি টাকা এফডিআর দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন। কারন ইউনিয়ন ব্যাংককের মালিক পক্ষের কোন একজন এস-আলম গ্রুপের সদস্য। এস-আলম গ্রুপ দেশের শীর্ষ ব্যাংক ঋণ কেলেংকারীদের মধ্যে অন্যতম। একারনে এই ব্যাংকে বিনিয়োগকৃত টাকা অদুর ভবিষ্যতে ফেরত আসবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকে বিনিয়োগকৃত সর্ট-নোটিশ ডিপোজিট বা এফডিআর দেয়ার নথিপত্র পর্যালোচনা করলেই সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
এছাড়া এমডি সৈয়দ বেলাল হোসেন তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের(সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পুনঃ বীমা বিভাগ, পুনঃ বীমা হিসাব বিভাগ, কেন্দ্রীয় হিসাব রক্ষন বিভাগের উচ্চ পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের এবং দাবি পরিশোধ কমিটির যোগসাজসে) যোগসাজসে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পুনঃবীমা বিভাগের ৪২ কোটি টাকা লোপাট করেছে বলে তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :