ঢাকা : জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার বরখাস্ত হওয়া মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহর মধ্যে দাম্ভিকতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভ্যাস ছিল।করতেন নিয়মিত মাদক সেবন।এর আগে তিনি পুলিশের ওপর হামলা করেছিলেন।ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্ট ও মারামারিসহ পাঁচটি মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের হোটেল ডি মেরিডিয়ান থেকে গ্রেপ্তার পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তার সম্পর্কে এসব তথ্য জানান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে বহিষ্কৃত মেয়র শাহানশাহ নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন।নিজেকে বাঁচাতে তিনি যে দলের রাজনীতি করেন সে দলের সিনিয়র নেতাদেরও দ্বারস্থ হয়েছিল।কোথাও কোনো জায়গা না পেয়ে তিনি নিজেকে বাঁচাতে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করছিলেন।মামলা হওয়ার পর থেকে র্যাবের গোয়েন্দা দল তাকে নজরদারিতে রেখেছিল।সর্বশেষ ঢাকার একটি হোটেলে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে এই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, তার বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য, খুন ও জখমের হুমকির অভিযোগে দেওয়ানগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা আসামিকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি করে।বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও পরিচালনা করা হয়।আমাদের কাছে তথ্য ছিল তিনি এই হোটেলে অবস্থান করছেন।গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই র্যাব হেডকোয়ার্টারের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল এই হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে নিজের ব্যবহার্য কিছু মাদক সামগ্রী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন রয়েছে। তাকে যিনি মাদক দিতেন তাকেও শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তার কাছ থেকে আনুমানিক সাড়ে তিন লাখ টাকা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বহিষ্কৃত মেয়র শাহানশাহ র্যাবের কাছে নিয়মিত মাদক সেবনের কথা স্বীকার করেছেন জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা জানান, তিনি অতি তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি করতেন। এসব ঘটনায় মাদকের একটা প্রভাব থাকতে পারে।
তার বিদেশ পালানোর কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা জানান, তার সঙ্গে কোনো পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। তাই বলা যায়, তার এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
প্রসঙ্গত, দেওয়ানগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল মাঠে উপজেলা প্রশাসন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মেহেরউল্লাহ। ভোর থেকে ওই মাঠের শহীদ মিনারে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলেন।
এ সময় দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। উপস্থাপক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহেরউল্লাহ মেয়রের নাম ৫ নম্বরে ডাকায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। একপর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং প্রকাশ্যে তার গালে চড় মারেন মেয়র।
ওই ঘটনার পর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার শেফা জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগটি তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে শাহনেওয়াজ শাহানশাহ বলেছিলেন, প্রটোকল না মেনে অফিসার্স ক্লাবের পরে তাকে ফুল দিতে ডাকায় তিনি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে গালাগাল করেছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :