নিজস্ব প্রতিবেদক : অনৈতিক মুনাফার আশায় বাজারে না ছেড়ে পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন তারা। চেয়েছিলেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে। কিন্তু বিধি বাম। পুঁজি ওঠানোই এখন দায়। বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। দাম বাড়ার কোনও সুযোগই এ বছর আর নেই। মজুত করা পেঁয়াজ নিয়ে তাই ভালোই বিপদে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে দুর্গাপূজার সময় কয়েকদিন বন্ধ ছিল ভারতের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড। এ সময় পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রেখেছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। যার ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না— এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। ‘সুযোগ’ লুফে নিয়েছিল বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারা চেয়েছিলেন, তিন বছর আগের মতো এবারও পেঁয়াজের কেজি ২৫০-৩০০ টাকা হোক। এমনটা ভেবে পেঁয়াজ মজুত করতে শুরু করেছিলেন তারা। এক রাতের ব্যবধানে ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ টাকায়ও উঠেছিল। তখন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বরের আগে নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই। সচিবের এমন বক্তব্যেও অসাধু ব্যবসায়ীরা উৎসাহ পেয়েছিল। কিন্তু শেষতক আর কোনও গুজবই স্থায়ী হয়নি।
দুর্গাপূজার ছুটি শেষ হতেই হিলি স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহও বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে আবার পেঁয়াজ থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে সরকার। হু হু করে কমে যায় দাম। মজুত করা পেঁয়াজও ততদিনে শুকিয়ে গেছে বেশ।
হিলি স্থলবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে তারা বেশি করে আমদানি করেছিলেন। এই পেঁয়াজ নিয়েও তারা চিন্তায় আছেন। কারণ দেশের কৃষকের ঘরেও নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। পাইকাররাও তেমন একটা আসছে না। গরমে নষ্ট হবে বলে কম দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন আমদানিকারকরা। অন্যদিকে মজুত করা পেঁয়াজ এখনও পড়ে আছে গুদামেই।
হিলির পাইকারি বাজার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতিকেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩২ টাকায়। হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, ওই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতীয় ৪০০-৪১৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসছে। এদিকে দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের হাটে উঠতে শুরু করেছে পাতা পেঁয়াজ। এতেও কমতে শুরু করেছে আগের পেঁয়াজের বাজার দাম। চাষীরা বলছেন, ফলনও এবার ভালো। নতুন পেঁয়াজের চাহিদাও বেশি। তাই তারা লাভবান হচ্ছেন।
পেঁয়াজ উৎপাদনে খ্যাত পাবনা, নাটোর ও ফরিদপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার কৃষকরা এখন পেঁয়াজের ক্ষেতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পাতাসহ পেঁয়াজ তুলছেন তারা। ভালো বাজারদরের কারণেই কিছুটা আগেভাগে তুলতে শুরু করেছেন পেঁয়াজ।
গত কয়েক বছর ধরেই মৌসুমের শেষভাগে এসে পেঁয়াজ নিয়ে এক ধরনের কারসাজি করে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ এলেই বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। প্রথম দিকে কেজিতে ৫-১০ টাকা বাড়লেও এক সপ্তাহের মধ্যে তা ৭৫-৮০ টাকায় ওঠে। এ দাম কিছুদিন স্থায়ী হয়। এরপর আবার পড়তে শুরু করে।
সরকারি-বেসরকারি ও কৃষকদের দেওয়া তথ্যমতে এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হবে। চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে আমদানিও হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর পেঁয়াজের উৎপাদন প্রায় ৩০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। যা সাধারণত ২৩-২৪ লাখ টনে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে চাল, আলু ও পেঁয়াজের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ হয়। তাতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আগাম পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ টন। গত মৌসুমে দেশে আগাম পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন।
কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দেশে পেঁয়াজের সংকট নেই। আমদানিরও দরকার নাই।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে ট্রাক সেলে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এখনও কার্যকর। তাই পেঁয়াজ নিয়ে আপাতত ভাবনার কিছু নেই।
আপনার মতামত লিখুন :