নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া: এক হাতে খঞ্জনি, আরেক হাতে একতারা। এই খঞ্জনি আর একতারার সুরে এক ভক্ত গাইছেন ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। ঢোলের বাদ্য আর বাঁশিতে সুর তুলে গায়ককে সঙ্গ দিচ্ছেন আসরের অনেকেই। সবার একটাই চিন্তা গুরুজির দর্শন লাভ। বাউল সম্রাট লালন ফকিরের ১৩২তম তিরোধান দিবসের উৎসবে গুরুর আরাধনায় এভাবেই মেতেছেন ভক্তকুল। কুষ্টিয়ার কালীগঙ্গা নদীর পারে অবস্থিত ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তিন দিনব্যাপী লালনের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধক-ভক্তসহ দর্শনার্থীরা অনুষ্ঠানে এসেছেন। তাঁদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে কালীগঙ্গার তীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালন সাঁইজির আখড়ার বাইরে কালীগঙ্গার পারে করা হয়েছে মূল অনুষ্ঠানস্থল। পাশেই আয়োজন করা হয়েছে বিশাল মেলার। সাধক-ভক্তদের কেউবা সাদা রঙের, কেউবা গেরুয়া রঙের পোশাকে আবৃত। আখড়ার ভেতরে-বাইরে সাঁইজির আধ্যাত্মিক সব গানে তাঁরা নিজেরা মেতেছেন, সঙ্গে মাতাচ্ছেন উৎসবও। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা শ্রেণির মানুষ সাঁইজির প্রতি ভক্তি জানাচ্ছেন। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ছেঁউড়িয়ায় কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। এ বছর ভক্তরা সেই অপূর্ণতা পুষিয়ে নিতে চান। তাই সাধুসঙ্গ শেষ হলেও তাঁরা ছেউড়িয়ায় আরো কয়েক দিন অবস্থান করবেন।
লালন মাজারের খাদেম মোহাম্মদ আলী বলেন, সন্ধ্যায় মাজারে মোমবাতি জ্বেলে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। চাল-জল গ্রহণের মধ্য দিয়ে আগত সাধু-গুরুরা তাঁদের গুরুকর্ম শুরু করেছেন। এরপর ২৪ ঘণ্টায় রাখালসেবা, অধিবাসসেবা, বাল্যসেবা ও পুণ্যসেবা গ্রহণ করবেন তাঁরা। আজ মঙ্গলবার শুরু হবে বাউলদের অষ্টপ্রহরের সাধুসংঘ। এতে রয়েছে গুরু-শিষ্যের ভাব আদান-প্রদান, লালনতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা, সেই সঙ্গে চলবে নিজস্ব ঘরানায় লালনের গান।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি এ উৎসবের আয়োজন করেছে। তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে রয়েছে লালন মেলা, লালনের জীবন-দর্শন নিয়ে আলোচনা ও লালনসংগীতানুষ্ঠান। আগামীকাল বুধবার উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠিত হবে। ১৮৯০ সালের ১৬ অক্টোবর লালন শাহ মারা যান। দিনটিকে লালন ভক্তরা ‘উফাত দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন।
লালন শাহের ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে ভক্তদের মেলা বসেছে লালনভূমি কুষ্টিয়ায়। সেখানকার জাতীয় পর্যায়ের বার্ষিক আয়োজন তিন দিনের। পাশাপাশি গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ছিল আলোচনাসভা ও সাধুমেলা।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা ও ৪২তম সাধুমেলার আসরে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লালন গবেষক জাহিদুল কবির লিটন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক সোহাইলা আফসানা ইকো।
আপনার মতামত লিখুন :