ঢাকা : রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) পুলিশের থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এক আদেশে আরএমপি কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক এই রদবদল করেছেন।এই সংক্রান্ত আদেশ এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানা এবং পুলিশ ফাঁড়িতে পৌঁছে গেছে এবং কার্যকর করা হয়েছে।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আরএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস।
তিনি বলেন, এটি পুলিশের রুটিন কাজ। নিয়মিত বদলি সংক্রান্ত আদেশে ২১৮ পুলিশ কমকর্তাকে এক থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। সোমবার রাতে আদেশের পর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে তা কার্যকর করা হয়েছে। বদলিকৃতরা নতুন কর্মস্থলে যোগদান করে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। মূলত আরএমপির বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদে রদবদল আনা হয়েছে।
এদিকে এর বাইরে আরএমপির শতাধিক পুলিশ কনস্টেবলেরও তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তাদের বদলির বিষয়টিও বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে আরএমপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে আরএমপির বিভিন্ন থানার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা নারীঘটিত নানান ঘটনায় জড়ানোসহ তাদের নামে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ সংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগ ওঠে। একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তেও সম্প্রতি বিষয়টি উঠে আসে। আর এর সূত্র ধরেই গণবদলির আদেশ দেওয়া হয়।
২১৮ জনের বদলির তালিকার মধ্যে আরএমপির সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম বোয়ালিয়া মডেল থানার ১৩ জন এসআই ও ১০ জন এএসআইসহ মোট ২৩ জনকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশকেই দামকুড়া ও কর্ণহার থানায় বদলি করা হয়েছে। রাজপাড়া থানার মোট ১৭ জনকে বদলি করা হয়েছে। এই ১৭ জনের মধ্যে ১১ জন এএসআই ও ৬ জন এসআই রয়েছেন। লক্ষ্মীপুর পুলিশ বক্সে দীর্ঘদিন থাকা ইনচার্জ মাহবুবকে বদলি করা হয়েছে বায়া পুলিশ ফাঁড়িতে।
আরএমপির মতিহার থানার ১০ জন এসআই ও ৮ জন এএসআইসহ মোট ১৮ জনকে বদলি করা হয়েছে। আরএমপির কাশিয়াডাঙ্গা, দামকুড়া, বেলপুকুর, কাটাখালী, পবা, কর্ণহার থানাসহ অন্যান্য থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ কর্মকর্তাদেরও বদলি করা হয়েছে। এভাবে এই ৫৮ জন ছাড়াও বাকি ১৬০ জনকে বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
এর আগে, ৯ ডিসেম্বর বোয়ালিয়া থানার অধীনে থাকা মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইফতেখার আল আমিনের গোপন অঙ্গ কর্তন করেন তার স্ত্রী রূপসী দেওয়ান। তার বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ ওঠে। পরকীয়া থেকে না সরিয়ে আনতে পেরে স্বামীর গোপন অঙ্গ কর্তনের মত মারাত্মক কাণ্ড ঘটান স্ত্রী।
এ ঘটনায় গ্রেফতারের পর স্ত্রী রূপসী দেওয়ান পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানিয়েছিলেন স্বামীর পরকীয়ার কথা বাইরের কাউকে বললে কেউই তা বিশ্বাস করত না। যে কারণে প্রতিশোধ নিতে তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। মূলত এ ঘটনার পর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়। আরএমপি কমিশনার এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়াসহ বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
আর পুলিশ কর্মকর্তার গোপন অঙ্গ কর্তনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরএমপির বিভিন্ন থানা পর্যায়ে কর্মরত অনেক পুলিশ কর্মকর্তাও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। কারও বিরুদ্ধে পরকীয়ায় জড়ানোর অভিযোগ যেমন রয়েছে- তেমনি কয়েকজন নারী পুলিশ সদস্যের ওপর পীড়নের খবরও বেরিয়ে আসে। কারও কারও বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের গুরুতর অভিযোগও ওঠে। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত রাখতে এই গণবদলির আদেশ এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন :