নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের প্রতিবাদে ও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বানিজ্যের কারনে রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুর্গাপুর উপজেলার ৬ নং মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ আব্দুল লতিফ মৃধা। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় দুর্গাপুর উপজেলার হোজা অনন্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ আব্দুল লতিফ মৃধা বলেন, আমার সম্পর্কে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা কেন্দ্রীয় আওয়াশীলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন যাহা সম্পুর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভীত্তিহীন। আমি মোঃ আব্দুল লতিফ মৃধা, ১৯৭৯ সালে দুর্গাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হই। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার পতনের পূর্ব পর্যন্ত সকল আন্দোলন-সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে আমি অংশগ্রহন করেছি। এ সময় অনেক মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে, সে সময় থানায় নির্যাতিত হয়ে কারাবরন করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমি ১৯৯৫ সালে রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাংকৃতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ লাভ করি। ২০০৩ সালে দুর্গাপুর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ২০০৬ সালে দুর্গাপুর উপজেলা শাখার বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১৪ সালে সর্বশেষ দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে উক্ত সম্মেলনে আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার অন্যতম পরিচয় হচ্ছে আমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার দাদা সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। পাশাপাশি আমি যুদ্ধাপরাধী মামলার বাদীর পরিবারের সন্তান। ২০০৯ সালে আমার উদ্যোগেই দুর্গাপুর থানায় যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আমার পরিবার। (দুর্গাপুর থানা: মামলা নং-১০, জি.আর নং-৪৫/২০০৯)। রাজনীতি করতে গিয়ে অসংখ্য মামলা-হামলার শিকার হয়েছি, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় অপরেশন ক্লিনহার্ট চলাকালে বছরের পর বছর পালিয়ে থেকেছি, কারাবাস, নির্যাতন, ঘরবাড়ি ভাংচুর-লুটপটের শিকার হয়েও কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, দুঃখের বিষয় বর্তমান রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে উপস্থাপন করেছেন আমি নাকি কখনো আওয়ামীলীগ করিনি। আব্দুল ওয়াদুদ দারার এধরনের মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি জানাতে চাই, দুর্গাপুর-পুঠিয়ার আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও সাধারন মানুষ জানেন যে কি ভাবে আমি ২০০৩ সাল থেকে দুর্গাপুর-পুঠিয়ার বঞ্চিত, নির্যাতিত ও সংগ্রামী নেতাকর্মীকে সংগঠিত করে ২০০৮ সালে আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে নিয়ে এসেছিলাম। এই দারা ২০০৮ সালের আগে কোনদিন কোথাও ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের কোন পদে ছিলেন না। ২০০৮ সালে আমি এবং বানেশ^র ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ তথা পুঠিয়ার অন্যতম নেতা শ্রদ্ধেয় মরহুম সাত্তার শেখ মিলে আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে সর্বপ্রথম বিড়ালদহ ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য করেছিলাম। দারার সদস্যপদ লিখেছিলো তৎকালীন বানেশ^র ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ছোট ভাই এনামুল।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন,২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু হলে দুর্গাপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের বিরুদ্ধে আমি মামলা দায়ের করার উদ্যোগ গ্রহন করি এবং যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আমার পরিবার। কোটি টাকার বিনিময়ে আব্দুল ওয়াদুদ দারা যুদ্ধাপরাধীর এই মামলা থেকে আমাকে কুখ্যাত ওয়াহেদ মোল্লার নাম বাদ দিতে বলেন, কিন্তু আমি অস্বীকৃতি জানাই। আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন ওয়াহেদ মোল্লা আমার পারিবারিক আত্মীয়। যার কারনে আব্দুল ওয়াদুদ দারা তৎকালীন সময়ে এমপি থাকাকালীন মুক্তিযোদ্ধা হিরু মাস্টারকে বাদ দিয়ে মাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সভাপতি করার জন্য কুখ্যাত রাজাকার ওয়াহেদ মোল্লাকে ডিও লেটার দেন। এছাড়াও দারা কুখ্যাত ওয়াহেদ মোল্লার ছেলে সুমনকে ৬ নং ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ২০১৬ সালে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা ব্যক্তিকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেন ফলে সুমন চেয়ারম্যান হন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আব্দুল ওয়াদুদ দারা এমপি থাকাকালীন মনোনয়ন বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, লুটপাট প্রভৃতি কারনে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তার নিজের এমপি মনোনয়ন হারান। এসব কর্মকান্ডের কারনে বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হয়ে আব্দুল ওয়াদুদ দারা ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারো মনোনয়ন বানিজ্যে মেতে উঠেছেন। দুর্গাপুর উপজেলার ৬ নং মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে এমন একজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করেছেন যার ওয়ার্ডে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা মাত্র ৩০০টি। আসলে আব্দুল ওয়াদুদ দারার মুল ষড়যন্ত্র হচ্ছে দুর্বল দলীয় প্রার্থী দিয়ে কুখ্যাত ওয়াহেদ মোল্লার ছেলে বিএনপি নেতা সুমনকে চেয়ারম্যান বানানো। দারার এই ষড়যন্ত্র ইউনিয়নবাসীর কাছে আজ স্পষ্ট। আব্দুল ওয়াদুদ দারা রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কিন্তু যে আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে আমি নিজে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য বানিয়েছিলাম সেই দারা কিভাবে বলতে পারে আমি কখনো আওয়ামীলীগ করিনি ?
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুর্গাপুর-পুঠিয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আব্দুল ওয়াদুদ দারা জনসমর্থনহীন, যাদের জনপ্রিয়তা নেই এমন ব্যক্তিদের নাম কেন্দ্রে সুপারিশ করেছে। তার প্রমান দুর্গাপুরে প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আমি এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আওয়ীলীগের নেতৃবন্দসহ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বর্তমান রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার এধরনের মিথ্যা বক্তব্য, মনোনয়ন বানিজ্য ও অপরাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।
আপনার মতামত লিখুন :