
মোঃ রাসেল সরকারঃ রাজধানীর পল্টনে আইএফআইসি ব্যাংকের নিচে দাঁড়িয়ে ডিউটি করছেন চার থেকে পাঁচজন সিকিউরিটি গার্ড।
ঈদের দিনেও ডিউটি করছেন, প্রশ্ন করলে শাহিনুর নামে একজন বলেন, সিকিউরিটি গার্ডদের কোনো ঈদ নেই।
মতিঝিলের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করছেন ৬৫ বছর বয়সী আরেকজন সিকিউরিটি গার্ড আবুল হোসেন। তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে একটা ঈদও পরিবারের সঙ্গে করি নাই।
রোববার (১০ জুলাই) ঈদের দিন রাজধানীতে বিভিন্ন ব্যাংক ও এটিএম বুথে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। পরিবার ছাড়া রাজধানীতে নিরবচ্ছিন্ন কর্মজীবী এসব মানুষের কথা।
পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকের নিচে যেতেই দেখা যায়, একজন সিকিউরিটি গার্ড হেলান দিয়ে সিঁড়িতে বসে আছেন। পাশেই দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন আরও কয়েকজন। তারা প্রত্যেকেই বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির অধীন কাজ করেন। তাদের মধ্যে একজন শাহিনুর রহমান। তার বাড়ি নোয়াখালী। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে চাকরি করি। কোনো ঈদেই বাড়িতে যাই না। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩৬৫ দিনের একদিনও আমাদের ছুটি নাই। একদিন ছুটি কাটালে সাড়ে ৩০০ টাকা বেতন কাটে।
তাহলে বাড়ি যান কবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছয়মাস পরপর একবার বাড়ি যাই। সর্বশেষ বাড়ি গিয়া ৬দিন ছিলাম। ৬ দিনেরই বেতন কাটা গেছে। দুইটা বাচ্চা আছে। ফোন দিলেই যেতে বলে। খুব কষ্ট লাগে। কিন্তু টাকার দিকে তাকাইয়া কখনো মনে হয় নাই ঈদে বাড়ি যাই।
মতিঝিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নিচে দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচজন সিকিউরিটি গার্ড। এদের মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী আবুল হোসেনের বাড়ি নওগাঁ। ১৭ বছর ধরে কোনো ঈদ পরিবারের সঙ্গে করেননি বলে জানান তিনি।
আবুল হোসেন বলেন, আমরা চারজন এক জায়গায় ডিউটি করছি। চারজনের মধ্যে শুধু আমার কাছেই বন্দুক আছে। আমিই একমাত্র গানম্যান। গানম্যানের কোনো ছুটি নাই। আমি ৩৫ বছর ধরে সিকিউরিটির চাকরি করি। শুরু থেকেই আমি একজন গানম্যান।
তিনি আরো জানান, গত ১৭ বছর একটি কোম্পানির অধীনেই চাকরি করছেন তিনি। এই ১৭ বছরে কোনো ঈদে ছুটি পাননি। এর আগে আরেকটা কোম্পানি থেকে যখন চাকরি পরিবর্তন করেন, সেই পরিবর্তনের মাঝখানে একবার ঈদে বাড়িতে গিয়েছিলেন।
তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনকরা হাফিজুর রহমান, মো. মুস্তাকিম, রেজাউল করিম এই ৩জনের প্রত্যেকেই বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকায় ঈদ করছেন। সিকিউরিটি গার্ডদের কাগজে কলমে কোনো ছুটি নেই বলে জানান তাদের একজন।
মৌচাক এলাকায় সিটি ব্যাংকের বুথে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আছেন যশোরের শাখাওয়াত হোসাইন। বাড়িতে বাবা, মা ও স্ত্রী আছেন।
শাখাওয়াত বলেন, সন্তান নাই। স্ত্রী আছে। বাবা, মা, স্ত্রী সবার মন খারাপ। কষ্ট লাগছে, তবুও কিছু করার নেই। ৩মাস হলো জয়েন করেছি। সিকিউরিটির চাকরিতে এবারই প্রথম।এবারই প্রথম পরিবার ছাড়া কোনো ঈদ।
আপনার মতামত লিখুন :