মোঃ রাসেল সরকারঃ ঈদুল আযহার গরিবদের মাঝে বিতরণ করা মাংস শেষ পর্যন্ত কোথায় যাচ্ছে? রাজধানীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা এই মাংস কি গরিব মানুষ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে নাকি সেটিও কয়েক হাত ঘুরে ব্যবসার পণ্য হয়ে উঠছে?
সামর্থ্যবানদের বিতরণ করা মাংস যারা নিচ্ছেন একটি অংশ তারা খেলেও বাকিটা বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে এবং ফুটপাতে। সেখানে দানের এসব মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে!
ঈদুল আযহার প্রথম দিন (রোববার) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, সবুজবাগ বাসাবো, খিলগাঁও, ওয়ারী, সুত্রাপুর, বংশাল, শ্যামপুর, কদমতলী, শনিআখরা, যাত্রাবাড়ী, মগবাজার, মালিবাগ ও বাড্ডা এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
দুপুর ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মাংস কেনাবেচার জন্য বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাংস নিয়ে এসব দোকানে আসছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষরা। তারা এসব দোকানে মাংস বিক্রি করছেন। আবার বিভিন্ন দিক থেকে ক্রেতারা এসে এসব দোকান থেকে মাংস কিনেও নিচ্ছেন। সবগুলো দোকানেই গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজিতে।
বিকেল ৩টার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকা এবং মালিবাগ ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে পলিথিন পেতে মাংস বিক্রি চলছে। তবে এসব দোকানে গরুর মাথা ও পায়ের মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে বেশি। এসব মাংস ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড্ডা লিংক রোডে গিয়ে দেখা যায়, অস্থায়ী দোকান বসিয়ে গরুর মাংস বিক্রি চলছে। দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, ‘একদাম, ৭৫০ টাকা।’ কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়াতেই দেখা যায়, কয়েকজন ক্রেতা এসে ৭৫০ টাকা দরেই মাংস কিনে নিয়ে যান।
রাজধানী ঘুরে এসব মাংসের বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে সাধারণত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস বিতরণ করা হয় না। বরং যাদের পক্ষে সম্ভব হয় তারাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস চেয়ে নেন। এদের মাঝে যাদের শারীরিক সামর্থ্য আছে তারা কয়েকটি এলাকা ঘুরে মাংস সংগ্রহ করতে পারেন। ফলে একেকজনের কাছে ৫ কেজি থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত মাংস হয়ে যায়।
এই পরিমাণ মাংস তাদের পক্ষে যেমন খাওয়া সম্ভব হয় না তেমনি অধিকাংশেরই সংরক্ষণ করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে তারা এসব মাংস বিক্রি করে দেন।
যাত্রাবাড়ীতে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব এক নারীর সঙ্গে। বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনি প্রায় ১০ কেজি মাংস সংগ্রহ করে এনেছেন বিক্রির জন্য। তিনি জানান, বিভিন্ন বাড়ি থেকে মাংস যারা সংগ্রহ করেন তারা এর সিংহ ভাগই বিক্রি করে দেন। এসব মাংসের খুব অল্প পরিমাণ আসে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা এসব দোকানে। বাকিটা কম দামে কিনে নেয় বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ।
হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা আগে থেকেই মাংস সংগ্রহ কারীদের সঙ্গে চুক্তি করে রাখেন। এরপর ঈদের দিন শেষে মাংস চলে যায় তাদের কাছে। যারা হোটেল-রেস্তোরাঁর সঙ্গে চুক্তি করতে পারেন না, তারাই কেবল এসব দোকানে গিয়ে মাংস বিক্রি করেন।
সেখানে সামিউল নামের একজন বিক্রেতা বলেন, আমরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মাংস কিনে নিয়ে আবার কেজি হিসেবে বিক্রি করি। যারা সাধারণত কোরবানি দিতে পারেন না তারাই আমাদের কাছ থেকে ঈদের বিকেলে মাংস কিনে নিয়ে যান।
কোরবানির পশু থেকে যে মাংস পাওয়া যায় তা তিন ভাগ করা হয়। এর একটি ভাগ নিজের জন্য রেখে বাকি দুই ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং গরিবদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া হয়। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে এর ব্যতিক্রম করলে কোনো সমস্যা নেই, তবুও এভাবে ভাগ করে বিতরণ করাই আমাদের সমাজের প্রথা। বিতরণ করা এসব মাংসের একটি অংশ কয়েক হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠছে ব্যবসার পণ্য।
আপনার মতামত লিখুন :