মোঃ রাসেল সরকার,ঢাকাঃ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আলোচিত আব্দুল হালিম (৩০) হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সোহাগকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রায়ের পাঁচ বছর পর গ্রেফতার হলেন ফাঁসির এই আসামি।বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার খিলগাঁও থানার তিলপাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার একটি টিম সোহাগকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার সোহাগ ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ পানির ট্যাংকি সাউপাড়া এলাকার শাহজাহানের ছেলে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, কয়লা ব্যবসার জন্য চুক্তি ভিত্তিতে ফতুল্লার উত্তর নরসিংপুর এলাকার আফসার উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হালিমের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছিলেন বন্ধু ইকবাল। দীর্ঘদিন ওই ব্যবসার লাভ কিংবা মূল টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো টালবাহনা করছিলেন ইকবাল।
এ সব কারণেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। সেই বিরোধের জেরে ২০১৪ সালের ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় টাকা দেওয়ার কথা বলে আব্দুল হালিমকে ফতুল্লার শাসনগাঁওয়ের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান ইকবাল। নিজ বাড়ির ছাদে আব্দুল হালিমকে ইকবাল প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে অচেতন করেন। তারপর ইকবালের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে হালিমকে ধারালো দেশি অস্ত্র দিয়ে কেটে পাঁচ টকুরো করে লাশ গুম করে ফেলে।
এ ঘটনার পরদিন হালিমের ছোট ভাই শামীম উদ্দিন বাদী হয়ে ইকবালের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় প্রথমে সাদেকুর রহমান গ্রেফতার হলে তার দেওয়া তথ্যে ফতুল্লার কাশিপুর এলাকায় আবদুল হালিমের বস্তাবন্দি হাত-পা বিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পর্যায়ক্রমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক দিপু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং আদালতের তথ্য সূত্র দিয়ে তিনি জানান, ফতুল্লার উত্তর নরসিংপুর এলাকার ওয়ার্কশপ মালিক আব্দুল হালিমকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যার অভিযোগে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
২০১৮ সালের ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিছুর রহমান এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে আসামিদের আরও সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাভোগ করতে হবে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকার মৃত ফুলচানের ছেলে ইকবাল হোসেন (৩৫), পশ্চিম দেওভোগ সাউপাড়া এলাকার শাহজাহানের ছেলে সোহাগ (৪০), সুনামগঞ্জের মৃত ইছাক মোল্লার ছেলে সাদেকুর রহমান (৩৮) ও শরিয়তপুরের মৃত হারুন কাজীর ছেলে বাবু কাজী (৪৫)। তারা সবাই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার মুসলিমনগর এলাকায় বসবাস করতেন।
হত্যার অভিযোগে চারজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে রায়ের আদেশে বলা হয়েছে। রায় ঘোষণার পর থেকেই দণ্ডপ্রাপ্তরা পলাতক ছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সোহাগকে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ওসি রিজাউল হক দিপু।
এদিকে, হত্যা মামলায় তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। খালাসপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন- আবুল হোসেন, মেহেদী ও মোক্তার হোসেন। রায় ঘোষণার সময় খালাসপ্রাপ্ত তিনজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :