• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে বৈধ ভেন্ডরের আড়ালে অবৈধ জাল স্ট্যাম্পের কারবার


প্রকাশের সময় : মে ২১, ২০২২, ৮:৩৯ অপরাহ্ন / ১২৯
রাজধানীতে বৈধ ভেন্ডরের আড়ালে অবৈধ জাল স্ট্যাম্পের কারবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে অবৈধ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এবং কোর্ট ফি তৈরির জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা ফরমান আলী সরকারসহ (৬০) চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার ও কোর্ট ফি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার বাকি তিনজন হলেন- মো. তুহিন খান (৩২), মো. আশরাফুল ইসলাম (২৪) ও মো. রাসেল (৪০)।

র‌্যাবের মতে, বৈধ ও অবৈধ স্ট্যাম্পের পার্থক্য করা খুবই কঠিন। এসব অবৈধ স্ট্যাম্প তৈরির ফলে একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে, এসব অবৈধ স্ট্যাম্প গ্রহণের ফলে সেবাগ্রহীতাদের সম্পদ-সম্পত্তি হুমকির মুখে পড়ছে। শনিবার (২১ মে) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, সম্প্রতি র‌্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, একটি অসাধু চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় বেশি লাভের আশায় জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রতারণামূলকভাবে জনসাধারণের কাছে বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার র‌্যাব-৩ ও এনএসআইয়ের যৌথ আভিযানিক দল মতিঝিলে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়।

অভিযানে জব্দ হওয়া নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প: ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৩ হাজারটি, ৩০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৫০০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪ হাজারটি, ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ২ হাজার ৫০০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০টি, ২ টাকা মূল্যমানের অনুলিপি স্ট্যাম্প ১ হাজার ৫০০টি। জব্দ হওয়া রাজস্ব স্ট্যাম্প: ৫০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২০০টি, ১০০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩ হাজার ৬৪০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪ হাজার ২০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৬০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৩ হাজার ৭২০টি, ১০ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১১ হাজার ২৮০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ১৪ হাজার ২৮০টি, ৪ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ২৪০টি ও ২ টাকা মূল্যমানের রাজস্ব স্ট্যাম্প ৪৮০টি। মোট ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫২০ টাকা মূলমানের ৩৮ হাজার ২০০টি রাজস্ব স্ট্যাম্প এ সময় জব্দ করা হয়।

উদ্ধারকৃত সব স্ট্যাম্পের মোট মূল্য ১৯ লাখ ৩ হাজার ৫২০ টাকা। এ সময় কার্টিজ পেপার ৫ হাজারটি, মনিটর একটি, সিপিইউ একটি, প্রিন্টার একটি ও নগদ ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬০ টাকা জব্দ করা হয়। জালিয়াতি চক্রের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা ফরমান আলী সরকার নিজেকে ভেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিলেও তার কাছে থাকা স্ট্যাম্প সম্পর্কে সে সঠিক হিসাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেটের যোগসাজশে এসব স্ট্যাম্প তৈরি অথবা সংগ্রহ করে নিজের কাছে রেখে প্রতারণার মাধ্যমে আসল হিসেবে বিক্রি করতো সে। জব্দ হওয়া স্ট্যাম্পগুলোর কাগজ ও মুদ্রণ সঠিক নয়। এগুলো ছিদ্রবিহীন ও পেছনে আঠালো প্রলেপের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এসব স্ট্যাম্প নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যযুক্ত নয়।

গ্রেফতাররা কোনো ট্রেজারি চালান দেখাতে পারেনি। গ্রেফতার তুহিন খান ও রাসেল আর্থিক লাভের আশায় এসব অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন ভ্রাম্যমান দোকানে বিক্রি করতো। তারা প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর ধরে এই প্রতারণা ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।

গ্রেফতারদের বিষয়ে কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, গ্রেফতার ফরমান আলী কুড়িগ্রাম সরকারি ডিগ্রী কলেজ হতে ডিগ্রী পাস করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে স্ট্যাম্প ভেন্ডারের ব্যবসায় লিপ্ত হন তিনি। তার বিরুদ্ধে এর আগেও সিআইডির কাছে একই কাজের জন্য মামলা হয়। সেই মামলায় তিনি গ্রেফতার ও জেলহাজতে ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামিনে থাকায় ওই মামলায় হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন।

গ্রেফতার মো. তুহিন খান রাজধানীর শনির আখড়া মাদরাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। এছাড়া মো. আশরাফুল ইসলাম পুটিকাটা সিন্দুরমতি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি এর আগে গ্রামীনফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গ্রেফতার মো. রাসেল কোনাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ২০১২ সালে একটি অস্ত্র আইন ও একটি অপহরণের মামলা রয়েছে। যে সব ভেন্ডর জাল স্ট্যাম্প নিয়েছে তাদের তালিকা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, কিছু তালিকা আমরা পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৩ ও এনএসআইয়ের গোয়েন্দারা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।

তারা এই জাল স্ট্যাম্প কোথা থেকে প্রিন্ট করতেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে তারা প্রিন্টিংয়ের কাজ করতো। তবে অভিযানের জন্য আপাতত আমরা সেই ঠিকানা বলতে চাচ্ছি না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যাদেরকে গ্রেফতার করেছি তাদের কাছে কোনো লাইসেন্স ছিল না। তবে লাইসেন্সধারী বৈধ ভেন্ডাররাও জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করে। তারা এক লাখ টাকার বৈধ স্ট্যাম্পের সঙ্গে আরও ১০ লাখ টাকার অবৈধ স্ট্যাম্প রাখছে।