• ঢাকা
  • সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:২২ অপরাহ্ন

রাজধানীতে বেশি চুরি কামরাঙ্গীরচরে, কম গুলশানে


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৫, ২০২২, ১১:০৪ অপরাহ্ন / ১০১
রাজধানীতে বেশি চুরি কামরাঙ্গীরচরে, কম গুলশানে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অনাথ ও পথশিশুদের আশ্রয় এবং পড়াশোনার সহযোগিতায় কাজ করে রাইটস অ্যান্ড সাইট ফর চিলড্রেন (আরএসসি) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গত ১ অক্টোবর মধ্যরাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এ প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা চুরি হয়। ঘটনার পরদিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আব্দুন নাসের রোমেল বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি চুরির মামলা করেন। পরে সাত লাখ ৮৭ হাজার টাকাসহ পেশাদার চোর মনির হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগেও গ্রিল কেটে অর্ধশতাধিক চুরি করেন মনির।

শুধু অফিস কিংবা বাসায় নয়, রাজধানীতে এ ধরনের চুরির ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাড়িতেও ঘটছে। এ অবস্থায় চুরির ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিতে বেশ তৎপর পুলিশ। এরই মধ্যে অনেক চোর ও চোর চক্রের সদস্যকে গ্রেফতারও করেছে তারা।চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসেই রাজধানীতে এক হাজার ৮১৬টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরেই ২৩৬টি চুরির মামলা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে এক হাজার ৯০৩টি, ২০১৯ সালে দুই হাজার ২১১টি, ২০২০ সালে এক হাজার ৮৭৫টি এবং ২০২১ সালে এক হাজার ৯৮৬টি চুরির ঘটনা ঘটে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দেওয়া তথ্যমতে, রাজধানীতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসেই এক হাজার ৮১৬টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরেই ২৩৬টি চুরির মামলা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে এক হাজার ৯০৩টি, ২০১৯ সালে দুই হাজার ২১১টি, ২০২০ সালে এক হাজার ৮৭৫টি এবং ২০২১ সালে এক হাজার ৯৮৬টি চুরির ঘটনা ঘটে। এসব চুরির মধ্যে এক হাজার ৮১০টি গাড়ি চুরির ঘটনা রয়েছে।

জানা যায়, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি চুরি হয় কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। এছাড়া নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব এলাকায় অফিস, দোকান, রাস্তাঘাটে চুরির পাশাপাশি বাসাবাড়িতেও চুরি হচ্ছে। তবে সেই তুলনায় গুলশান, বারিধারাসহ অভিজাত এলাকায় চুরি কিছুটা কম। এসব এলাকায় সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা বেশি থাকায় চুরির ঘটনা কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীতে হত্যা, জালিয়াতি, রাজনৈতিক সহিংসতা, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধ প্রতিদিনই ঘটছে। এসব অপরাধ দমনে বিশেষ নজর থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ফলে চুরির ঘটনায় তেমন গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ থাকে না তাদের।

এদিকে, রাজধানীজুড়ে চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। এরই মধ্যে বেশকিছু অভিযান চালিয়ে চুরির সঙ্গে জড়িত চোর ও চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া রাজধানীতে ৪ হাজারের বেশি চোরের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের ধরার জন্য বিশেষ অভিযান চলছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ঢাকা শহরে সাম্প্রতিক সময়ে চুরির সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে বাসা ও অফিসে চুরি বেশি বেড়েছে। শুধু রাতে নয়, দিনেও চুরি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা পুরো বিষয়টি একটি মনিটরিং সেলের আওতায় নিয়ে আসলাম। সব ঘটনার মামলা নিতে এবং সেগুলোতে জোর দিতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমানে অভিনব কায়দায় চুরি বেশি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা একটি তালিকা করেছি। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে চার হাজারের বেশি চোরের তথ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে অপরাধ না করা পর্যন্ত তাদের ধরা হচ্ছে না। যখনই অপরাধ করছে তখন তাদের আমরা ধরার চেষ্টা করছি।

আমাদের দেশে একটি বিষয় দেখা যায়, সাধারণত কেউ মূল্যবান কিছু রেখে গেলে ফিরে এসে সেটা আর খুঁজে পায় না। অথচ উন্নত বিশ্বে তেমনটা দেখা যায় না। আমাদের দেশের মানুষের এই যে আচরণগত অবস্থা তা পুলিশ পরিবর্তন করতে পারে না।

রাজধানীতে হত্যা, জালিয়াতি, রাজনৈতিক সহিংসতা, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধ প্রতিদিনই ঘটছে। এসব অপরাধ দমনে বিশেষ নজর থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ফলে চুরির ঘটনায় তেমন গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ থাকে না তাদের। অনেকেই আবার ছোট ছোট চুরির বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ বা মামলা করেন না। অনেক সময় দেখা যায় এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তকে কিছুটা মারধর করে ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার অনেকক্ষেত্রে অভিযুক্তকে পুলিশে সোপর্দ করা হলে কিংবা মামলা হলেও সহজে জামিন পাওয়ায় এ ধরনের অপরাধ কমছে না। কারণ, অনেকেই জেল থেকে বেরিয়ে আবারও চুরিতে জড়াচ্ছেন।গত ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে রাজধানীর রজনীগন্ধা টাওয়ারে রাঙাপরী জুয়েলার্সের দুটি দোকানে চুরি হয়

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আমাদের দেশে একটি বিষয় দেখা যায়, সাধারণত কেউ মূল্যবান কিছু রেখে গেলে ফিরে এসে সেটা আর খুঁজে পায় না। অথচ উন্নত বিশ্বে তেমনটা দেখা যায় না। আমাদের দেশের মানুষের এই যে আচরণগত অবস্থা তা পুলিশ পরিবর্তন করতে পারে না। চুরির ঘটনায় গ্রেফতার করে কারাগারে দিলে সেখান থেকে বেরিয়ে আবার অনেকেই চুরিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলে দেখা যাচ্ছে সাজা হওয়ার পর যে সবাই ভালো হয়ে যাচ্ছে তেমনটি নয়।এদিকে, চুরির ঘটনায় দ্রুত জামিন হওয়ায় ডাকাতির চেয়ে বড় বড় চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে। কোনো বল প্রয়োগ না করে যন্ত্র দিয়ে গ্রিল কেটে চুরি করে ডাকাতির চেয়েও বেশি অর্থ পায়। ফলে এমনও হতে পারে ডাকাত চক্রও চুরিতে জড়িয়ে যাচ্ছে, যোগ করেন এ কে এম হাফিজ আক্তার।

দারিদ্র্যের সঙ্গে অপরাধের একটি সম্পর্ক রয়েছে। সমাজের দরিদ্র ও কম আয়ের মানুষের মধ্যে কেউ কেউ চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। গত এক দশকে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় দরিদ্রের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। ফলে বর্তমানে গ্রামেও সিঁধেল চুরি খুব একটা দেখা যায় না। আগে যেখানে প্রতিটি গ্রামেই এমন অনেক ঘটনা ঘটতো, এখন সেটা দেখা যায় না। সিঁধেল চুরি খুব একটা না হলেও চুরি কমেনি। প্রযুক্তির এই যুগে অপরাধের ধরন পাল্টেছে। পাল্টেছে চুরির ধরনও। এমনকি চুরির ঘটনাও বেড়েছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।আগস্টে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় ময়লার ভাগাড় থেকে ১০ চাকার একটি ডাম্প ট্রাক চুরি হয়

এ বিষয়ে অপরাধ বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে সমাজে ছোট ছোট অপরাধ অনেকটা কমে গিয়ে সেটা ভিন্ন রূপ নেয়। দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক সচেতনতা, প্রযুক্তির উন্নয়নসহ নানা কারণে চুরি কমে যায়। আমাদের এখানেও সেটা হয়েছে। তবে এটাও সত্য, সম্প্রতি চুরি কিছুটা বেড়েছে। এর প্রধান কারণ হতে পারে করোনার কারণে মানুষের আর্থিক অসচ্ছলতা। এছাড়াও যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ। অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পাল্টানোর ফলে সেদিকেই নজর বেশি থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ফলে চুরির মতো ঘটনায় মনোযোগ কমে যেতে পারে। এ কারণে এ ধরনের অপরাধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সমাজ থেকেই গড়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ চুরি বা এ ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশের নজরদারি, টহল বাড়ানো প্রয়োজন। অনেকে দারিদ্র্যের কারণে এসব কাজে জড়িয়ে পড়েন। দারিদ্র্যের সঙ্গে অপরাধের একটি সম্পর্ক রয়েছে- তা প্রমাণিত। এমনটা হলে সরকারের উচিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা।