এম রাসেল সরকারঃ প্রবল বর্ষণ আর দুর্যোগের রাতে ঢাকার মিরপুরে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বাবা-মা-বোনকে হারানো শিশু হোসেন সুস্থ্ হয়ে উঠেছে। নয় মাস বয়সী শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে তার নানা-নানির কাছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ভারি বর্ষণে ঢাকার অনেক এলাকার মত মিরপুর শিয়ালবাড়ির রাস্তায়ও পানি জমে গিয়েছিল। এর মধ্যেই মুক্তা ফার্মেসির সামনের রাস্তায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মা*রা যান মিজান (৩৫), তার স্ত্রী মুক্তা (২৫), তাদের মেয়ে লিমা (৭) এবং মো. অনিক (১৮) নামে এক যুবক। সে সময় বাবা-মার কোলে থাকা হোসেন অনেকটা অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। সে সময় মুক্তা ফার্মেসির কাছেই ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের বৃষ্টি। মানুষের চিৎকার আর হইচই শুনে তিনি এগিয়ে যান।
রাতের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বজ্রপাত আর ঝুম বৃষ্টি। ফার্মেসির সামনের সড়কে হাঁটুর উপরে পানি। দুইজন পুরুষ, একটা বাচ্চা আর এক মহিলাকে দেখলাম পানির মধ্যে পড়ে আছে। তারা যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে, সেটা বুঝতে পেরে কেউ এগিয়ে যেতে পারছিল না। প্রথমে সবাই কাছাকাছি গিয়ে শুকনো লাঠি দিয়ে ঠেলে তাদের শুকনো জায়গায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তারা ধরে নেন, এখন আর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ভয় নেই। তখন স্থানীয়রা মিলে চারজনকে পানি থেকে সরিয়ে নেন।
বৃষ্টি জানান, ওই সময় সড়কে জমে থাকা হাঁটু পানির মধ্যে ভেসে উঠে একটি শিশু। এক যুবক দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। আর আশপাশের মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে শুরু করেন। বাচ্চাটার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। কিন্তু এত বৃষ্টি আর বজ্রপাত, ওকে নিয়ে কী করব কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। ওখানে তার কোনো আত্মীয় স্বজনকেও পাওয়া গেল না। তখন আমি বললাম, আমিই বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব। কিন্তু টাকা তো আমার কাছে নেই। এক ভাই তখন এক হাজার টাকা আর আরেক ভাই দুইশ টাকা দিলেন। এই টাকা নিয়েই আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে প্রথমে শ্যামলী, তারপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলাম।
শুক্রবার সকালে শিশু হোসেনকে ছুটি দিয়েছেন চিকিৎসক। তাকে মিরপুরে তার নানা-নানির কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানালেন বৃষ্টি।
মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেছেন, হোসেনের বাবা-মাসহ চারজন পানির মধ্যে বিদ্যুতায়িত হয়েই মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন তারা। তবে সড়কে কোনো বৈদ্যুতিক তার পাওয়া যায়নি। সমস্যাটা কীভাবে হল, দেখা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হয়েছে। তাদের বিশেষজ্ঞ দল এসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে বোঝা যাবে কোথায় সমস্যা।
ওসি মহসিন জানান, মিজানে বাড়ি ঝালকাঠি, আর তার স্ত্রী মুক্তার বাড়ি নোয়াখালী। মিজান রাস্তায় লেবুর শরবত বিক্রি করতেন। ঘটনাস্থলের কাছেই ঝিলপার বস্তিতে তারা থাকতেন। রাতে বৃষ্টির মধ্যে সবাই মিলে একসঙ্গে যাওয়ার সময় তারা বিদ্যুতায়িত হন। আর তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান অনিক। ময়নাতদন্তের পর চারজনের মরদেহের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান ওসি।
লঘুচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। এরমধ্যে সন্ধ্যার পর থেকে অবিরাম বর্ষণ চলে ঢাকায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় বলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান। পুরো ঢাকা শহরে জলজটে তৈরি হয় যানজট, তাতে মধ্যরাতেও ভোগান্তিতে ছিল মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন :