এম রাসেল সরকার: টাকা দিলেই মেলে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ! অভিযোগের তীর তিতাসের ঠিকাদার এবং সংস্থাটির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিকে। খোদ তিতাসই বলছে, গত এক বছরে তারা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, নিয়মিত অভিযান এবং সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ চললেও অবৈধ সংযোগের দৌরাত্ম্য কমছে না কেন?
ঢাকা থেকে দূরের কোনো গ্রামে নয়, রাজধানীর মধ্যেই ধানমন্ডির মতো আবাসিক এলাকায় রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার কর্মযজ্ঞ। ক্যামেরা দেখে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। উধাও তিতাসের ঠিকাদার হানিফ নামে এক ব্যক্তি। তবে যে বাসায় সংযোগ নেয়া হচ্ছে সেই বাসার মালিককে পাওয়া যায়।
ওই বাসার মালিক বলেন, রাস্তাটা এখন কাটা আছে, ঠিক করে ফেললে তখন তো আর কাটা যাবে না, তাই গ্যাসের লাইন করে রাখছি। আমরা গ্যাসের সংযোগের জন্য আবেদন করে রেখেছি।অফিশিয়ালভাবে গ্যাস আসবে। দিনের কাজ রাতে কেন করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এলাকাবাসী করছেন।
তবে ঠিকাদার হানিফকে ফোন করা হলে প্রথমে তিনি কথা না বলে ফোন কেটে দেন। পরে নিজেই ফোন দিয়ে বলেন, সংযোগ পেতে মালিকরা আবেদন করেছেন।
ঠিকাদার হানিফ বলেন, এটা আসলে অবৈধ লাইন না, অবৈধ লাইনের কোনো কিছু নেই। বৈধ লাইন সব।
ঢাকার বাইরের দশা আরও ভয়াবহ। নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়ে অভিযান চালিয়ে কিছুক্ষণ আগে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু বাসিন্দারা বলছেন, প্রতি দুই মাস পরপর কেটে দেয়ার পর আবার টাকা নিয়ে সংযোগ লাগিয়ে দেন তিতাসের কর্মচারীরাই।
একই অভিযোগ করেছেন অনেক বাসিন্দা। তাদের দাবি, এ যেন চোর-পুলিশ খেলা। এ ধরনের অভিযানের মধ্যেই আছেন তারা।
তিতাসের জোনাল অফিসগুলোতে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে অফিসের ভেতরেই দেখা মিলবে দালালদের। রাজধানীর শুক্রাবাদের এক দালাল বলছেন, গ্যাসের চাপ বাড়াতে কিংবা সংযোগ নিতে অবৈধ পথই ভালো পন্থা। দালালের কথার সত্যতা পাওয়া গেল কর্মকর্তাদের কথাতেও।
তিতাসের কর্মচারি কিংবা ঠিকাদার সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব এসব দালালের। সাধারণত গ্রাহকরা স্থানীয় ঠিকাদার কিংবা দালাল ধরে সংযোগগুলো পেয়ে থাকেন। শুধু বাসাবাড়ি নয়, ঢাকার আশপাশে গজিয়ে উঠা ছোট ছোট কারখানাগুলোতেও চলছে অবৈধ সংযোগ। আর এসবের কারণে গ্যাস পান না বৈধ সংযোগধারীরা।
এ যেমন হাতিরপুলের নর্থ রোডে, দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকে না। এ রোডের সব বাসাতেই একই সমস্যা। কত বছর আগে থেকে এ সমস্যার শুরু সেটি মনেও করতে পারেন না এখানকার বাসিন্দারা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের পেছনে গড়ে উঠা একটি সিন্ডিকেট পুরো ব্যবস্থার জন্য দায়ী। এতে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম সময় সংবাদকে বলেন, সামনের দরজা দিয়ে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়; পেছনের দরজা দিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়; তাতে আরেকটা অবৈধ বাণিজ্য তৈরি হয়।
সংস্থাটি বলছে, অর্থ নিয়ে অবৈধ সংযোগ পাইয়ে দেয়ার কারণে সম্প্রতি ৪ কর্মচারী বরখাস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ৩৫ ঠিকাদার।
তিতাসের জনসংযোগ সংযোগ এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরের বড় বড় ইমরাতগুলোতে অবৈধ সংযোগ আছে, যেগুলো আমাদের হিসাব-নিকাশ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকাদারদের যোগসাজশে করে যদি ধরা পড়ে তাহলে আমাদের তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ নেয়াই হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যারা জড়িত আছে।
গত একবছরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে সংস্থাটি প্রায় সাড়ে ৩ লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বলেও জানায় তিতাস। যদিও এতকিছুর পরও বন্ধ হয়নি গ্যাসের অবৈধ সংযোগ।