
লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ সংবিধানের ৪-এর ক অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশন সমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করতে হবে।
তবে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের উমাপতি হরনারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কারন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামায়াত সমর্থিত আর তার স্বামী বিএনপি সমর্থিত। এ কারনে বিদ্যালয়টিতে নানা অনিয়ম থাকলেও অনিয়মটাই এখন নিয়মে পরিনত হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ফাঁকি, মালামাল ও বিভিন্ন অপকৌশলে অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়মের অভিযোগ তুলে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মেলেনি। তাছাড়া বিদ্যালয়টির সভাপতির একাধিক অনুরোধের পরও দীর্ঘ দিন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগানো হয়নি কোথাও। এ ব্যাপারে চলতি বছরের ১৯ জুন বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মাসুদ রানা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়।
সেই লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উমাপতি হরনারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মানজুমা আক্তার বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে অনিয়ম, বিদ্যালয় ফাঁকি, সরকারি অনুদানের টাকাসহ ফ্যান ও বিভিন্ন মালামাল, স্থায়ী-অস্থায়ী জামানত অপকৌশলে সে নিজেই আত্মসাৎ করে এবং যথা সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না। এছাড়া প্রধান শিক্ষক প্রায়শই জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কথা বলে বিদ্যালয়ের বাহিরে অবস্থান করেন এবং বিষয়টি সভাপতি জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন যে, আমি বাহিরে অফিসিয়াল কাজে আছি।
লিখিত অভিযোগে সভাপতি আরো বলেন, আমি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হয়েও আমার সাথে কোন সমন্বয় না করে তিনি একাই বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ যেন তেন ভাবে করে টাকা আত্মসাৎ করেন এবং বিদ্যালয়টি একাই তার নিয়ন্ত্রণে জিম্মি করে রেখেছেন। উল্লেখ থাকে যে, তাহার একাডেমিক সার্টিফিকেট সঠিক আছে কি-না সেটি নিয়েও এলাকাবাসীর প্রশ্ন রয়েছে। তার এই অনিয়মের কারনে অনেকবার এটিও-কে অবগত করলেও অজ্ঞাত কারনে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
২৬ জুলাই দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে নেই, কোথায় আছে জানতে চাইলে অত্র প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক রিনা একটি রেজিস্ট্রার দেখিয়ে জানান, জরুরী কাজে বড়বাড়ি গিয়েছে। সহকারী শিক্ষক রিনার দেখানো রেজিস্ট্রারে দেখা যায় প্রধান শিক্ষক মান্জুমা আক্তার প্রায়ই নানা কাজে দুপুর ১২ টার মধ্যে বিদ্যালয় থেকে বের হয়। তবে অধিকাংশ দিনই বিদ্যালয়ে আর ফেরেন না তিনি। ১১৯ জন শিক্ষার্থী ও ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে সকল শ্রেণি মিলে মাত্র ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক বিদ্যালয়ে আসার খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও এলাকার কয়েকজন সচেতন মহল এসে জানান, বিদ্যালয়ের প্রতিদিনের চিত্র প্রায় একই।
বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির বিষয়ে সভাপতি মাসুদ রানা জানান, বারবার বলার পরেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দীর্ঘ দিন ধরে লাগান না প্রধান শিক্ষক । তাছাড়া প্রধান শিক্ষক জামায়াত ও তার স্বামী বিএনপি সমর্থিত তাই বর্তমান সরকারকে অবৈধ বলে আখ্যা দেন বলেও অভিযোগ তার।
এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের সকল রুমের চাবি শিক্ষকদের নিকট থাকা সত্যেও সম্প্রতি একটি শ্রেনীকক্ষ থেকে চারটি ফ্যান হারিয়েছে ইতিপূর্বে। তাছাড়া কোনো ধরনের আলোচনা না করেই ৪৫ হাত লম্বা তিন রুম বিশিষ্ট একটি টিনের ঘর ভেঙ্গে তার মালামাল বিক্রি ও আত্মসাৎ এর পায়তারা চলছে।স্থানীয়দের দাবি সার্বিক বিষয় নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক
এ সব বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান, গতকাল বৃষ্টি ছিলো এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছুটি হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী কম মনে হয়েছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে জেলা উপজেলায় নানা কাজে যেতে হয় তাছাড়া এখনও বিদ্যালয়ে কম্পিউটার না থাকায় নানা কাজের অনলাইন করার জন্য বাহিরে যেতে হয়।
বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির বিষয়ে তিনি জানান, নতুন ভবন এখনো হস্তান্তর হয়নি, শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অসুবিধা হওয়ায় আমারা নতুন ভবনে উঠেছি তাই ছবি লাগানো হয়নি তবে দ্রুত লাগাবো।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মাহ্দুদা মাসুম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :