জেমস আব্দুর রহিম রানা, স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের সিটি প্লাজায় গাড়ি পার্কিংয়ের নামে রমরমা বাণিজ্যে নেমেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সকালে এক রকম বিকেলে আরেক রকম মনগড়া নেওয়া হচ্ছে পার্কিং ফি। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন এই মার্কেটে আসা লোকজন সহ দোকানীরাও। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্শন করছেন সবাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোর পৌরসভা থেকে যখন সিটি প্লাজার ডিজাইন পাস করা হয়, তখন কর্তৃপক্ষ গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করবে বলে জানায়। কিন্তু পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে ঠিকই, বিনিময়ে মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শুধু ক্রেতাদের না, দোকানদারদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত পার্কিং ফি আদায় করায় সিটিপ্লাজার আশপাশের মার্কেটের সামনে মোটরসাইকেল রেখে সিটিপ্লাজায় ঠেলে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন। রাস্তার পর মোটরসাইকেল রাখার কারণে গোহাটা রোডে সবসময় যানজট লেগেই থাকছে। এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।
যশোরের জাবির ইন্টারন্যাশনাল, হাসান ইন্টারন্যাশনাল, ওরিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল, ম্যাগপাই, জেসটাওয়ারসহ চার-পাঁচটা ছোট বড় মার্কেট ঘুরে জানাযায় তাদের অধিকাংশের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ কোনো ক্রেতার কাছ থেকে একটি টাকাও নেওয়া হয় না। সিটি প্লাজায় একটি মোটরসাইকেল রাখতে ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়। এছাড়া, প্রাইভেটকার একশ’ টাকা এবং বাইসাইকেল বাবদ ১০ টাকা করে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার দুপুরে সিটি প্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, সিটি প্লাজা মার্কেটের সামনে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে যাকে কেউ পার্কিং করতে না পারে। মোটরসাইকেল আসলেই গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্কিং এ পাঠানো হচ্ছে। পার্কিং গ্রাউন্ডে যেয়ে দেখা যায় শতাধিক গাড়ি।এসময় রাতদিন নিউজের পক্ষথেকে কয়েকটি ছবি তুললে চড়াও হন একজন কর্মী। ছবি ডিলিট না করলে সমস্যা হবে বলেও ভয় দেখায় এক কর্মী। এসময় মোটরসাইকেল ফেরত নিতে আসা রেলগেট এলাকার আক্তারুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার মোবাইল ফোনের জন্য একটি স্ক্রীন পেপার কিনতে এসেছেন সিটি প্লাজার তিনতলায়। স্কীন পেপারের দাম নিয়েছে ৩০ টাকা। আর পার্কিং চার্জ গুণতে হয়েছে তার ২৫ টাকা।
এ সময় মোবাইল ফোন কেম্পানির একজন মার্কেটিং ম্যানেজার বলেন, তার নিজস্ব মোটরসাইকেল রয়েছে। কাস্টমারদের সাথে লেনদেন ও পণ্য দেওয়া নেওয়ায় অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার তাকে তিনতলার মোবাইল ফোনের দোকানগুলোতে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রায় একশ’ টাকা পার্কিং খরচ হচ্ছে। মাসে ২৬ দিন আসলে বেতনের ২৬শ’ টাকা চলে যায় এই পার্কিং খরচে। এসময় নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার রহমান আলী, খড়কির মোজাফফর, বেজপাড়ার অ্যাডভোকেট খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল, জেলরোডের রিপন, বাদল হোসেনসহ অন্তত ১০জনের সাথে কথা হয়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিটি প্লাজা যে পার্কিং চার্জ নিচ্ছে তা রীতিমতো অস্বাভাবিক। তারা মোটরসাইকেলের পার্কিং চার্জ কমানোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে সিটি প্লাজা মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও ক্যাফে ডিলাইটের মালিক এস আজাদ, লেডিস টাচের মালিক রায়হান হোসেন, অধরা’র ইব্রাহিম হোসেন, ফোর্স প্লাসের শফিকুল, এ্যারেক্স সু’র শাহাজাদা সহ আরো কয়েক দোকানের মালিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা বিব্রত। যশোরে কোথাও এধরণের নজির নেই। কোথাও কোথাও টাকা নেয়া হলেও মোটরসাইকেল বাবদ সর্বোচ্চ ১০ টাকা করে নেয়। অথচ সিটি প্লাজা নিচ্ছে ২৫ টাকা। একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে জানানো হলেও তারা কর্নপাত করেন না। তারা আরো বলেন, এতে করে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি কথা শুনতে হয়। সিটিপ্লাজায় এসে কেনাকাটার আগ্রহ হারাচ্ছে ক্রেতারা। তাদের দাবি, পার্কিং চার্জ কমিয়ে না আনলে দিন দিন ক্রেতাদের সিটি প্লাজার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
এ বিষয়ে সিটিপ্লাজা মার্কেটের সামনের দোকানী গোপাল স্টোরের জগন্নাথ, অংকিত হার্ডওয়ারের আনন্দ, অনিক হার্ডওয়ারের উজ্জল সহ আরো কয়েক দোকানের মালিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, অনেকেই তাদের দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রেখে চলে যায় সিটি প্লাজা মার্কেটে। এতে করে তাদের দোকান ব্লক হয়ে যায়। অনেক অনেক সময় দোকানে প্রবেশ করারও উপায় থাকেনা। তিনি আরো বলেন, মোটরসাইকেল পার্কিংএ টাকা বেশি হওয়ায় ক্রেতারা তাদের দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রেখে সাধারণ দোকানীদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলছে। এ বিষয়ে সিটিপ্লাজার চেয়ারম্যান এসএম ইয়াকুব আলী জানান, মার্কেটের নিরাপত্তা কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্যে পার্কিং ফি নেওয়া হয়। এটি যৌক্তিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্যে ফি নেওয়া হচ্ছে।
পৌরসভার সচিব বলেন, যখন বিল্ডিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়, তখন গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখার কথা থাকে। গ্রাহক বা কাস্টমারদের গাড়ি পার্কিংয়ের নিশ্চয়তা দিতে হবে মার্কেট কর্তৃপক্ষের। সেক্ষেত্রে মার্কেট কর্তৃপক্ষ খরচ বাবদ কিছু টাকা নিতে পারে। তবে, ক্রেতাদের চাপ দিয়ে নেওয়াটা অমানবিক।
এদিকে, স্থানীয়রা বলছেন সিটি প্লাজায় শুধু সিটি প্লাজায় আগত ক্রেতাদর্শনার্থীদের গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল থাকে এমনটা নয়। যশোর বড় বাজারের অসংখ্য ক্রেতা সাধারণ রয়েছে তারা সিটিপ্লাজায় গাড়ি রেখে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ শেষে গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। এরবাইরেও সিটি প্লাজার আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন যারা সিটি প্লাজায় মাসের ৩০ দিনের ২৬ দিন গাড়ি রেখে নিজ কার্যালয়ে যান। অফিস শেষে বিকেলে গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। অর্থাৎ প্রতিমাসে গাড়ি পার্কিং বাবদ তাদের একেকজনের গুনতে হয় ৬শ’৫০ টাকা। তারা আরো বলেন , সিটি প্লাজায় যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে সেখানে সিসি ক্যামেরার ছড়াছড়ি। নিরাপত্তা কর্মীর অভাব নেই। এতো সব আয়োজনের মাঝেও কয়েক বছর আগে যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছেলের একটি দামি মোটরসাইকেল সিটি প্লাজার পার্কিং গ্রাউন্ড থেকে চুরি হয়ে যায়। আজও পর্যন্ত সে গাড়ির হদিস মেলেনি। শেষমেশ নতুন মোটরসাইকেল কিনে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে যশোর বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও যশোর সিটি ক্যাবল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মোশারফ হোসেন বাবু বলেন, এটা শ্রেফ অবিচার। সারাদেশে কোথাও মোটরসাইকেল পার্কিং ফি ২৫ টাকা নেই। যশোরের যেসব প্রতিষ্ঠানে পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে তাদের অধিকাংশই ৫ টাকা করে নেয়। আর যারা সকাল-সন্ধা রাখে তাদের ১০ টাকা দিতে হয়। আর সিটি প্লাজা যদি ২৫ টাকা ফি নেয় তাহলে এটা হবে অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে কথা বলবেন বলেও আশা বাদ ব্যক্ত করেন মি.বাবু।
আপনার মতামত লিখুন :