নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোরঃ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার কৃষি অফিসের ২ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অপকর্ম ও অফিস ফাঁকি দিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।
আর এই ২ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা হলেন সাজ্জাদুর রহমান ও মাহমুদুল হাসান অপু। দু’জনই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সায়েদা নাসরিন জাহানের বিশ্বস্ত অধীনস্থ হয়ে সরকারী প্রকল্প একত্রে নাম মাত্রে কুক্ষিগত করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
সম্প্রতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হলেও এ দু’জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিজেদের রক্ষায় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সাজ্জাদুর রহমান বাঘারপাড়া উপজেলায় উপ-সহকারী কর্মকর্তা পদে চাকুরী করে নিজ অফিসের ১ কিলোমিটারের মধ্যে নিজ ব্লকেই পোষ্টিং নিয়ে নাম মাত্র অফিস করেন। সরাসরি স্থানীয় তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজ পিতার সার-কীটনাশকের দোকানে সরকারী প্রণোদনার সার, বীজ, কীটনাশক ও নগদ অর্থ নিজস্ব লোক দিয়ে উত্তোলন করে তা বিক্রির মতো গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে।
স্বৈরাচার পতনের আগে এলাকায় মাস্তানি চাঁদাবাজি করে ত্রাস রুবেল নামেও পরিচিতি পায়। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী করায় তার অধীনস্থ হয়ে স্থানীয় ও অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজ করতে হয়। নইলে স্থানীয় ভাবে নাজেহাল করা হয়।
কৃষি অফিস থেকে সার, বীজ, কীটনাশক, জৈব সার, রাসায়নিক সার, ছত্রাকনাশক ও অন্যান্য উপকরণ প্রকৃত কৃষকদের মাঝে নামমাত্র বিতরণ করে অবশিষ্ট সমস্ত বীজ ও প্রণোদনার উপকরণ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখনো পর্যন্ত অবাধে বিক্রি করে চলেছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার কর্মস্থলের ১ কিলোমিটারের মধ্যে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারী চাকুরীতে কর্মরত থেকে অফিস ফাঁকি দিয়ে উপজেলার ঘোপ দূর্গাপুর রোডের দক্ষিণ পাশে নিজের জমির উপর আলীশান মার্কেট তৈরী করেছে। খাজুরা কলেজের উত্তর পাশে মেইন রোডের সাথে ৫ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয় করেছে। যার বাজার মূল্য ১ কোটি টাকা। প্রতি বছর নিত্য নতুন বাইক পরিবর্তন করে নিজেকে রীতিমতো রোমিও পরিচয় করিয়েছে। অফিস ফাঁকি দিয়ে তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানীর বাৎসরিক টুরে অংশগ্রহণে যাওয়ার মতো অভিযোগ। আর তার এসমস্ত কাজে একান্তভাবে সহযোগিতা করেন মাহমুদুল হাসান অপু। মাহমুদুল হাসান অপু নিজ ইউনিয়নের রায়পুরে কর্মরত থাকায় নতুন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যোগদান করার সাথে সাথে কিভাবে অনিয়ম দুর্নীতি আর ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ করতে হয় তার উৎসাহিত করেন। মাহমুদুল হাসান অপু একজন মাদকসেবী ও মাদক সরবরাহকারী হিসেবে এলাকায় চিহ্নিত। অপু সাজ্জাদুর রহমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরকারী প্রণোদনার সকল পণ্য নগদ অর্থ, ভুয়া বিল ভাউচার এমনকি নিজের আত্মীয়দের তালিকা তৈরী করে তাদের থেকে কমিশনে বিভিন্ন ট্রেনিং-এ অংশগ্রহণ করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। যার অন্যতম প্রমাণ তার দ্বারা যেসমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে ঐসমন্ত প্রকল্পের মাষ্টাররোল পর্যালোচনা করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে। রবি ২০২৩- ২০২৪ মৌসুমে মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণের আওতায় রায়পুর ইউনিয়নে একটি মাঠ দিবস বাস্তবায়ন করে। সেখানে ১শ ৫০ জন কৃষকের জনপ্রতি ৩শ টাকা ও নাস্তার ২০০ টাকা হজম করে দিয়েছে।। ব্লকের বাইরের কৃষক যারা আদৌ কৃষক না তাদেরকে দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সমুদয় অর্থ লুটপাট করে। তার লুটপাটের বিভিন্ন উপকরণ সাজ্জাদের নিজস্ব দোকানে বিক্রি করা হয়। এবিষয়ে সত্যতা নিশ্চিতে সাজ্জাদুর রহমানের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে নিজের নয় বাবার প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে স্বীকার করে। অন্যান্য বিষয়ে আমতা আমতা করে সরাসরি স্বাক্ষাতের সুযোগ চায়। মাহমুদুল হাসান অপুর সাথে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ পাওয়া না গেলেও সেই নম্বর থেকে ফেরত ফোনে সাজ্জাদুর রহমান কথা বলেন। সাজ্জাদুর রহমানের সাথে অপুর ফোনের কথার বিষয়ে জানতে চাইলে অকপটে স্বীকার করে একসাথে চাকুরী করায় তার ফোনে কথা বলা। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সায়েদা নাসরিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয়
নিশ্চিত হয়ে মুঠো ফোনে কথা বলতে রাজী হননি। সরাসরি স্বাক্ষাতে কথা বলতে অনুরোধ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :