• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ Jun ২০২৫, ০৮:১৫ অপরাহ্ন

ময়মনসিংহের নান্দাইলে তথাকথিত ভন্ডপীরের পোল্ট্রি ফার্মের কারনে এলাকার খালসহ পরিবেশ বিপর্যয়


প্রকাশের সময় : জুন ১, ২০২৫, ১০:০৬ অপরাহ্ন / ৫৪
ময়মনসিংহের নান্দাইলে তথাকথিত ভন্ডপীরের পোল্ট্রি ফার্মের কারনে এলাকার খালসহ পরিবেশ বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহঃ ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লি ইউনিয়নের মাইজহাটী গ্রামের স্বঘোষিত এক ভন্ডপীরের গরুর এবং পোল্ট্রি খামারের সৃষ্ট বর্জ্য ও নিষ্কাশিত দূষিত পানিতে বিনষ্ট হচ্ছে এলাকার খাল-বিল, নদী-নালার পানি, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মাছ ও কৃষি জমি।

পরিবেশ নীতি উপেক্ষা করে গ্রামের মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে পোল্ট্রি খামার। পোল্ট্রি ফার্মের ময়লা আবর্জনা খালে ফেলায় খালের নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে পড়ছে। যার ফলে বর্ষাকালে পানি জমে আশে পাশের ফসলি জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, ওই ভন্ডপীরের নাম মিল্লাত রাব্বি। ইসলামী লাইনে অল্প কিছু পড়াশোনা করেই সে এখন মস্ত বড় পীর। মিল্লাত রাব্বির পিতা আ: ছাত্তার ছিলেন একজন কবিরাজ। শশুর বাড়ি এলাকায় থাকতেন ঘরজামাই ।

সরেজমিন অনুসন্ধানকালে এলাকাবাসী জানায়, মিল্লাত রাব্বি ১৯৯৮-৯৯ সালে তারঘাট আনছারিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। আবার অনেকেই বলেছেন তিনি দাখিল পরীক্ষায় ফেল করেন। মিল্লাত রাব্বি বিগত ২০ বছর যাবত নিজেকে আল্লাহর অলি দাবি করে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। যদিও তার বাবা আ: ছাত্তার ছিলেন একজন গ্রাম্য কবিরাজ। তার ভিটাবাড়ি ছাড়া কিছুই ছিল না।

এলাকাবাসী আরো জানায়, আ: ছাত্তার কবিরাজের ছেলে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। পিতার পৈত্রিক ব্যবসা কবিরাজী দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন সে এলাকায় মস্ত বড় পীর। ধর্মকে পুঁজি করে এখন তার ব্যবসা চলছে রমরমা।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, ভন্ডপীর মিল্লাত রাব্বি তার গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছে আলীশান রাজপ্রাসাদ। সেই আলীশান রাজপ্রাসাদের চারদিকে লাগিয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। বাড়ির চার পাশে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে তিনি খ্যান্ত হয়নি। ভন্ডপীর তার নিজের এবং তার সম্পদ রক্ষার জন্য গড়ে তুলেন নিজস্ব ক্যাডার ও গুন্ডা বাহিনী। সেই সাথে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যে গুন্ডা বাহিনীর প্রধান ঈশ্বরগঞ্জের নাদিম। এছাড়াও ওই বাহিনীতে রয়েছে রসুলপুরের জাহাঙ্গীর ও সবুজ। লতিফপুরের আ: রহিম। নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস, মেরেংগাসহ আরো অনেকেই।

ভন্ডপীর মিল্লাত রাব্বির ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। ইতিপূর্বে যারা তার ভন্ডামির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে তাদেরকেই সে হয়রানি মুলক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানকালে ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ভন্ডপীর মিল্লাত রাব্বির মুরিদ বেশির ভাগেই ১৮ বছর থেকে ৩০ বছরের যুবতী মেয়ে। যারা তাদের স্বামী-সংসার সব ছেড়ে অর্থ সম্পদ সব ওই ভন্ড পীরের হাতে তুলে দিয়ে বেশির ভাগ মেয়ে আশ্রয় নিয়েছে ভন্ড পীরের আলিশান বাড়িতে। মুরিদদের ওই ভন্ড পীরের বাড়িতে ঢুকতে হয় অভিনব নিয়মে। আধা কিলোমিটার দূর থেকে পায়ের জুতা-স্যান্ডেল খুলে হাতে নিয়ে ঢুকতে হয় পীরের বাড়িতে।

কবিরাজ থেকে ভন্ডপীর হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। যাদের মুখ বন্ধ রাখা জন্য দেওয়া হয় মোটা অংকে টাকা, বিভিন্ন উপহার সামগ্রী, পোল্ট্রি খামারের ডিম। এছাড়াও তার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দিনের ভোট রাতে করা আবার ভোট বিহীন প্রশাসনে ঘোষিত চেয়ারম্যান মোঃ ইফতিকার উদ্দিন ভূইয়া (বিপ্লব)। যে নিজে জমি দিয়েছে পীরের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা করার জন্য। ওই ভন্ড পীরের বৈধ-অবৈধ কতগুলো স্ত্রী আছে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এলাকার অনেকেই।

ভন্ডপীর মিল্লাত রাব্বি মাঝে মাঝে তার মুরিদদের সাথে অহংকার ও গর্ব করে বলে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে আমার উঠাবসা। আমার হাত অনেক লম্বা তাই কেউ আমার কিছু করতে পারবে না। বরং আমি চাইলে যে কাউকে যে কোন শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারি। প্রশাসন থাকে আমার পকেটে থাকে।

অনুসন্ধান কালে আরো জানা যায়, ভন্ডপীর মিল্লাত রাব্বি বার্ষিক মাহফিল করে থাকেন। তার তরিকায় যারা এ মাহফিলে অংশগ্রহণ করে তারা সবাই ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী মুরিদান। সেই মুরিদানের বেশির ভাগই যুবতী নারী এবং মহিলা। মাহফিল শেষে শুরু হয় হাদিয়ার নামে টাকা তোলার মহোৎসব এ যেন নতুন বছরের হালখাতা। ধর্ম ব্যবসায়ী ভন্ডপীর মিল্লাত রাব্বির আস্তানা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। সাধারণ মানুষ ওই বাড়ীতে প্রবেশ করতে হলে তার পূর্বে নিতে হয় অনুমতি। অনুমতি মিললে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর বেষ্টনীর মাধ্যমে পীরের সামনে হাজির হতে হয়। কথা বলা শেষ হলে পুনরায় নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর বেষ্টনীর মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে হয়।

এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দাবি ভন্ডামি আর ধর্ম ব্যবসা বন্ধ করা হোক।সবার মাঝে ইসলামের সঠিক বাণী পৌঁছে যাক। প্রশাসন এ সব নব্য লালসালু মাজার বন্ধ করবে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পদের নিবে এমনটাই আশা করেন তারা।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করার পরও ভন্ডপীর মিল্লাত রাব্বি বা তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(তবে আগামী পর্বে ভন্ড পীরের সাক্ষাৎকার ও গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সহ আরও বিস্তারিত থাকবে)