
এম রাসেল সরকারঃ মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় হাউজবোট (ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রুমসহ) ব্যবসার নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। “নৌ-ভ্রমণ” ও “শীতকালীন হিম উৎসব” নামে এই কার্যক্রমের আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে বলে দাবি করেছেন তারা।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, লৌহজং উপজেলায় ছয়টি হাউজবোট রয়েছে। এর মধ্যে মাওয়াঘাট নদীতে একটি, বেজগাঁও সুন্দিসার বাঘের বাড়িতে চারটি, এবং বেজগাঁও মৃধা বাড়ি সংলগ্ন একটি। এ সব বোটের নামকরণ করা হয়েছে “ময়ূরী-২” ও “হৈমন্তী” সহ নানা আকর্ষণীয় নামে। হাউজবোটগুলিতে ওয়াসরুম, ব্যক্তিগত বারান্দা, আরামদায়ক বেডরুম, এবং প্রতিটি রুমে ডোর লক সিস্টেম রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ সব সুবিধার সুযোগ নিয়ে হাউজবোটগুলো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুদের হাউজবোটে প্রবেশ করতে দেখা গেছে, যা সন্দেহজনক বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, “নৌ-ভ্রমণ” এর আড়ালে টাকার বিনিময়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, “রুম থাকার কারণে এখানে অনৈতিক কাজ হয়। তারা প্রশাসনের কাছে হাউজবোট ব্যবসা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি একাধিকবার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
মো. ইমন হোসেন, ভ্রমণ পোকা কোম্পানির ব্যবস্থাপক, জানিয়েছেন যে তাদের প্রতিষ্ঠানে তিনটি হাউজবোর্ড রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের এখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো সুযোগ নেই। আমরা শুধুমাত্র ফ্যামিলি ও বিবাহিত অতিথিদের প্রবেশের অনুমতি দিই। তাই, কোনো অনৈতিক কার্যকলাপের সম্ভাবনাই নেই।
পরিচালনার অনুমোদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি, তবে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা অনুমোদন পেয়ে যাব।
পদ্মা উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন জানান, আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এলাকাবাসীর অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা হাউজবোটগুলোর দিকে বিশেষ নজর রাখছি।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, আইন-শৃঙ্খলা মাসিক সভায় দুই থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, যেসব ইউনিয়নে হাউজবোট রয়েছে, সেখানকার ইউনিয়ন সচিবদেরও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাউজবোট মালিকদের বৈধ কাগজপত্রসহ অফিসে আসার জন্য বলা হয়েছে।
এলাকাবাসী আশা করছেন, প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হাউজবোটের আড়ালে চলা অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে। তারা চান, তাদের এলাকাটি নিরাপদ ও সুস্থ সামাজিক পরিবেশ বজায় রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :