(চলচ্চিত্রে পরিমণির নিষিদ্ধের গুঞ্জন!সিসিটিভি ফুটেজ ও স্টাফদের বক্তব্যের সঙ্গে অভিযোগের সাদৃশ্য নেই।)
মনিরুজ্জামান অপূর্ব,ঢাকা : ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করা চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমণি এবার নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন! রাজধানীর ক্লাবগুলোয় নিষিদ্ধের গুঞ্জনের পর এবার চলচ্চিত্রেও নিষিদ্ধ হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। এদিকে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে পরীমণি ধর্ষণচেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে তথ্য পাচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর তা-ই যদি হয় তাহলে তার বিরুদ্ধ পদক্ষেপ নেবে শিল্পী সমিতি। পরিমণির করা মামলা মিথ্যা এবং তিনি দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহীন কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা কমিটি এবং সিনিয়রদের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জায়েদ খান। অপরদিকে প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর এবং সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
বোট ক্লাবের সেদিনের ঘটনার ভিডিও চিত্র ইতোমধ্যে সংগ্রহ করেছে পুলিশ। যেখানে পরীমণিকে বোট ক্লাবের ভেতরে মদ্যপান করা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। মদ্যপ অবস্থায় তিনি একটি বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ নেয়া নিয়ে ক্লাবটির পরিচালক নাসির ইউ মাহমুদের সঙ্গে তর্ক করছেন। এ ছাড়া উল্টো নাসির ইউ মাহমুদকেই তিনি ক্লাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পেয়েছেন তাতে নায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টার কোনও প্রমাণ পাননি। মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
পরীমণির মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ‘আমরা গুরুত্ব দিয়ে এই ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি। মামলার তদন্তের প্রয়োজনে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আসামিদের পরিমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাদী পরীমণিসহ যারা সেদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন তাদেরও বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সেদিনের (গত ৮ জুন) ঘটনায় পুলিশ ঢাকা বোট ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। একই সঙ্গে সেই রাতে বোট ক্লাবে দায়িত্বপালনকারী সকল স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও স্টাফদের বক্তব্যের সঙ্গে পরীমণির অভিযোগের কোনও সাদৃশ্য পাওয়া যায়নি। ক্লাবের স্টাফরা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, পরীমণি তার সঙ্গীরাসহ রাতে ওই ক্লাবে গিয়ে স্বেচ্ছায় টেবিলে বসে খোশগল্প করতে করতে মদ পান করেন। প্রায় ঘণ্টা খানেক পর একটি ব্ল“-লেভেল বিদেশি মদের বোতল নেয়া নিয়ে সেখানে প্রথমে উচ্চবাচ্য হয়। পরে সেটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
তদন্ত সূত্র জানায়, তারা ইতোমধ্যে ওই রাতের ঘটনার সময়ের খণ্ডিত কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে একটিতে খোদ পরীমণি নাসিরকে গালাগাল করছেন এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে। আরেকটি ভিডিওতে নাসির ইউ মাহমুদকেও উত্তেজিত অবস্থায় পরীমণিকে গালাগাল করতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে একটি ভিডিও ক্লিপে পরীমণিকে টেবিলে বসে খোশগল্প করতে করতে মদ পান করতে দেখা গিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, পরীমণি মামলার এজাহারে ঘটনার যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন তার সঙ্গে ভিডিও দৃশ্যের কোনও মিল নেই। পরীমণি তাকে জোর করে মদের বোতল মুখে ঢুকিয়ে দেয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু ভিডিও দৃশ্যে পরীমণিকে স্বেচ্ছায় মদ পান করতে দেখা গিয়েছে। ভেতরের এসব ভিডিও দৃশ্য এবং ঢাকা বোট ক্লাবের প্রধান ফটক ও অভ্যর্থনা কক্ষের সিসিটিভি ফুটেজ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পরীমণির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির ইউ মাহমুদ ও অমি ঢাকা বোট ক্লাবে মদপানের এক পর্যায়ে একটি বিদেশি মদের বোতল নেয়া নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে হাতাহাতির বর্ণনা দিয়েছেন। যা ভিডিও ফুটেজের সাথে কিছুটা মিল পাওয়া যায়।
শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন ডিপজল বলেছিলেন, মানুষ ক্লাবে যেতেই পারে। পরিমণিও ক্লাবে গেছেন। তবে এতরাতে পরিমণির ক্লাবে যাওয়া ঠিক হয়নি। আমাদের শিল্পীদের বার বা রেস্টুরেন্ট না যাওয়াই উচিত। আর্টিশ নিজেকে যত লুটিয়ে রাখবে তত তার দাম থাকবে। তত ইজ্জত বাড়বে। কিন্তু একজন আর্টিস এত রাতে বার বা রেস্টেুরেন্টে যাবে এটা ঠিক না। কোন কিছু খেতে হলে বাসার ড্রইংরুমে বসেই খাওয়া উচিত।
একই সুরে কথা বলেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর। তিনি বলেন, যে ক্লাবে পরীমণি গিয়েছেন সেখানে ভিডিও ফুটেজ আছে তা যাছাই বাছাই করলেই সব বেরিয়ে আসবে। পরি যে লেবেলের নায়িকা সেখানে কোন প্রডিউসার যদি তার সাথে মিটিং করতে চান তাহলে সেই প্রডিউসারকে পরীর কাছে যেতে হবে। তার সাথে কোনো ছবির সাইনিং করাতে হলে পরীর বাসায় যেতে হবে। এভাবে এত রাতে পরীর বোট ক্লাবে যাওয়া ঠিক হয়নি।
গত ১৩ জুন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন অভিনেত্রী পরীমণি। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে পরদিনই সাভার থানায় শুধু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। ১৪ জুন উত্তরার একটি বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযুক্ত নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে পরীমণি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কয়েক সেকেন্ডের বিভ্রান্তিকর অস্পষ্ট ক্লিপ নয়, আমি পুরো ভিডিওটি চাই। শুরু থেকেই বলে আসছি, ক্লাবের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করার জন্য। যদিও কয়েক সেকেন্ড পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চয়ই পুরো ফুটেজই আছে। আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করে আবারও বলছি, দয়া করে পুরো ফুটেজ প্রকাশ করুন। সবাই সত্যটা জানুক কী ঘটেছে সেই রাতে।’
আপনার মতামত লিখুন :