মোঃ রাসেল সরকারঃ ঢাকার দিলকুশায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন দেখে যে কারো দৃষ্টি আটকে যায়। নান্দনিক এ ভবন থেকেই রাজধানীর উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়। অথচ রাজউকের এনেক্স (দ্বিতীয়) ভবনে ঢুকলেই চোখে পড়ে ফেনসিডিলের অসংখ্য খালি বোতল। যত্রতত্র ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকায় সেবাপ্রার্থীরা নিয়মিত অস্বস্তিতে পড়েন। কে বা কারা এসব মাদক পরিবহন-সেবন করে জানে না রাজউক ভবনের সংশ্লিষ্ট কেউ।
রাজউকে সেবা নিতে আসা জহিরুল ইসলাম, আনোয়ার হক, করিম মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাসের পর মাস ফাইল নানা কারণ দেখিয়ে আটকিয়ে রাখা হয় এখানে। অথচ প্রায়সময়ে টয়লেটে ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকতে দেখি। এনেক্স ভবনের সানস্যাডে ফেনসিডিলের স্তূপ পড়ে রয়েছে। যা আমাদের জন্য চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয়। রাজউক ভবনের পাশেই দেশের অন্যতম স্পর্শকাতর ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টিত বঙ্গভবন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অফিসের লোকজন যদি মাদকে আসক্ত থাকেন তাহলে সাধারণের কী অবস্থা হবে।
সরজমিনে রবিবার (১০ জুন) রাজউক মূল ভবনের পাশের এনেক্স ভবনের (২য় ভবন) দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে পুরো সানসেডে ফেনসিডিলের খালি বোতলের স্তূপ দেখা গেছে। এছাড়া রাজউক মূল ভবন ও এনেক্স ভবনের মাঝে সিঁড়ির নিচের সানসেডে ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ধরনের কিছু ছবি ও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে।
দেশের অন্যতম স্পর্শকাতর ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টিত বঙ্গভবন এলাকায় রাজউক ভবনে মাদকের আখরা এ বিষয়ে জানতে মতিঝিল জোনের ডি.সি মো. আব্দুল আহাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
মতিঝিল জোনের এ.ডি.সি এনামুল হক মিঠু বলেন, ‘রাজউক ভবন ও তার আশপাশ এলাকায় মাদকসেবীদের আখরা সেটা আমাদের জানা নেই। আর আমরা চাইলেই কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি করতে পারি না। তবে এমন কাজে কেউ জড়িত থাকলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউক ভবনের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা একাধিক আনসার সদস্যরা বলেন, ‘আমরা রাজউকের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে তল্লাশি করতে পারি না। তবে কয়েক দিন পরপরই দুই ভবনের বিভিন্ন টয়লেট, ড্রেন, ভবনের সানসেডে ফেনসিডিলের খালি বোতল পাই। এ বিষয়ে আমাদের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। সাধারণত রাজউকের গুটিকয়েক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি-ঠিকাদার-দালালরা রাজউকে এনেক্স ভবনরে কিছু রুমে বসে মাদক সেবন করে থাকে। আমাদের তাদের রুমে যাওয়ার এখতিয়ার নেই, তাই কিছু বলতে ও করতে পারি না।’
ভবনের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের প্লাটুন কমান্ডার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ করার সময় আমরা তাদের দেহ তল্লাশি করি। অপ্রীতিকর কোন বস্তু নিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কিন্তু আমরা রাজউকের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে তল্লশি করতে পারি না বা তাদের রুমে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারি না। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারি-ঠিকাদার-দালালরা এখানে মাদক সেবন করে। এ বিষয়ে আমাদের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।’
তবে মাদকের বিষয়ে কোন কিছুই জানেন না বলে জানান রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘রাজউক ভবনে কে বা কারা মাদক সেবন করে আমার জানা নেই। তবে এই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা।
রাজউক ভবনে মাদকের ছড়াছড়ি বিষয়ে রাজউকের সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘আমি কিছুদিন হলো নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছি। রাজউক ভবনে মাদকের ছড়াছড়ি বিষয়টি আমার জানা নেই। এই অপকর্মের সঙ্গে যে বা জড়িত থাকুক না কেন আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এদিকে গত বছরের আগস্টে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ‘বছরে একবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডোপ টেস্টের আওতায় আসবেন। যারা এ ডোপ টেস্টে পজিটিভ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে কবে থেকে এটি বাস্তবায়ন হবে- এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
আপনার মতামত লিখুন :