নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোতে সর্বোচ্চ গতিসীমা কত তার নির্দেশক চিহ্ন দেওয়া থাকে। যানবাহন গতিসীমা অতিক্রম করছে কি না তা দেখার দায়িত্বে থাকে হাইওয়ে পুলিশ। এরপরও মহাসড়কে কমছে না দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গতিসীমা নজরদারির ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন না করা ও সনাতনী পদ্ধতিতে চলায় এ অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানু্যায়ী ২০২০ সালে দুই হাজার ৬৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৩৫৮ জন প্রাণ হারান। ২০২১ সালে তিন হাজার ২০৪টি দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৭৭৬ জন প্রাণ হারান। আর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে তিন হাজার ২৫১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। যার একটি বড় কারণ এ বেপরোয়া গতিতে পরিবহন চালনা। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত রয়েছে, মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ৮০ কিলোমিটার। মহাসড়কের সব জায়গায় এই গতি ওঠানো যাবে না। কারণ কিছু জায়গায় বাজার, পথচারী পারাপারের জায়গা আছে। আর শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ গতিসীমা হচ্ছে ৪০। কিন্তু এটা মানা হচ্ছে না।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, মহাসড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে সড়কের পাশে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা একটি যন্ত্র ব্যবহার করেন, যেটি গাড়ির টায়ারের দিকে তাক করিয়ে রেখে গাড়ির গতি মাপা হয়। কোনও গাড়ি গতিসীমা অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা সামনের চেকপোস্টকে গাড়িটির বিষয়ে নির্দেশনা দেন। পরে অপরাধ অনুযায়ী মামলা দেওয়া হয়।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, মহাসড়কে বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশ স্পিড গানের ব্যবহার করে থাকে। তিনি দাবি করেন, এটি ব্যবহার করে গতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্পিড গান ব্যবহার করে বেশি গতিতে গাড়ি চলাচলের বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত গতিতে চালানোর অভিযোগে মামলা এবং জরিমানা করা হচ্ছে। সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে চালক ও যাত্রীদের আরও সচেতন হতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মহাসড়কে গতিসীমার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা ও স্পিডগানের মতো সনাতনী পদ্ধতি ব্যবহার করে গাড়ির বেপরোয়া গতি ও প্রাণহানির কোনোটাই কমানো সম্ভব হয় না।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান মনে করেন, হাইওয়ে পুলিশের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা আসলে নেই। তিনি বলেন, ‘সক্ষমতা না থাকার কারণ হচ্ছে লোকবলের ঘাটতি যেমন, তেমন আমি যেটা মনে করি কারিগরিভাবে তাদের সক্ষমতারও ঘাটতি আছে। পৃথিবীর কোনও দেশেই একেবারে ম্যানুয়ালি এভাবে গতির তদারকি করা হয় না। কারণ সড়ক বাড়বে। যানবাহন বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা জনবল বাড়ানো সম্ভব নয়। এজন্য পৃথিবীর সবদেশে কারিগরি সহায়তাটা নেয়। তিনি জানান, রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে হাতে রাডার গান ধরে রেখে সনাতনী পদ্ধতিতে গতি নির্ণয় এগুলো এখন আর চলে না। এখন আসলে মহাসড়কের সঙ্গেই প্রযুক্তি সমন্বয় করা থাকে। অনেক দেশে সড়কে রাস্তার সঙ্গে ম্যাগনেটিক সেন্সর থাকে। এটা গাড়ির সংখ্যা, ধরন ও এদের গতি নির্ণয় করতে পারে। এটা দিয়ে যানবহন রিয়েলটাইম মনিটরিং করা সম্ভব। অনেক ধরনের সেন্সর দিয়ে এখন রিয়েল টাইম মনিটরিং হয়। আপনাকে রিয়েল টাইম সেন্স করার পর ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে। এর মাধ্যমে চালককেও এই সময়ের মধ্যে সতর্ক করা যায়। তিনি জানান, আমাদের দেশে সাইনবোর্ডে গতির সীমা থাকে। কিন্তু অনেক চালক নিরক্ষর বা অসচেতন হওয়ায় তারা তা বুঝতে পারেন না। এজন্য তারা যাতে গতি কমাতে বাধ্য হন এরকম ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে। সেক্ষেত্রে সড়কের নকশা এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে চালক চাইলেও গতি বাড়াতে পারবেন না।
হাদিউজ্জামান আরও বলেন, এক্ষেত্রে রাস্তায় রাম্বল স্ট্রিপ দেওয়া যেতে পারে। চালক যখন এটার ওপর দিয়ে চালাবে তখন একটা ঝাঁকি লাগে। এটা রাস্তায় কিছুদূর পর পর দেওয়া যেতে পারে। তখন চালক বুঝতে পারবে আমি ঝুকিপূর্ণ এলাকায় আছি বা ডানেবায়ে স্কুল আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে স্পিড গভর্নর লাগাতে হবে। একটা সুয়ো মোটো রুলের পরিপেক্ষিতে হাইকোর্টের ও এরকম একটি নির্দেশনা ছিল। স্পিড গর্ভনর হচ্ছে গাড়ির জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি নিয়ন্ত্রণ।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমরা যানবাহনের রিয়েলটাইম ম্যানেজমেন্ট করতে চাচ্ছি। আমাদের এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। আমরা শিগগিরই কাজ শুরু করবো।
আপনার মতামত লিখুন :