নিজস্ব প্রতিবেদক,রাজশাহীঃ বিএনপি-জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ভাইস-চ্যান্সেলর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের নানা অনিয়ম, অনৈতিক ও বিধিবহির্ভুত কর্মকাণ্ড ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শান্ত রুয়েট ক্যাম্পাস।
দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই অতিরিক্ত দায়িত্বের এই ভিসির বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক-ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্যাম্পাসে সংগঠিত করে প্রগতিশীলদের কোণ ঠাসা করে রাখার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম আইন-কানুন ভঙ্গ করে এক নায়ক তন্ত্রচর্চা, সরকার বিরোধী যাচ্ছে তাই কর্মকাণ্ড করে কয়েক মাসেই পুরো ক্যাম্পাসে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন।
ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ আগস্ট ডীনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রুয়েটে ভিসির (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পদ পাওয়ার পর পরই ১৬ আগস্ট শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনৈতিক ভাবে (যা তিনি পারেন না) বাসা বরাদ্দের নোটিশ জারি করান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধ্যাপক সাজ্জাদ এখানেই থেমে থাকেননি। বিধি অনুযায়ী প্রফেসর কোয়ার্টার (এ-২/এ বিল্ডিং) অধ্যাপকের (গ্রেড ১ থেকে ৩) নিচের পদের (সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক) কোনো শিক্ষককে বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু রুয়েটের আইন ভেঙ্গে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনৈতিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান এন্ড রিজিওনাল প্লানিং (ইউআরপি) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রফেসর কোয়ার্টার (এ-২/এ বিল্ডিং) বরাদ্দ দেন।
ব্যাপক অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন দায়িত্ব পেয়েই পূর্ণাঙ্গ ভিসির সার্বক্ষণিক গাড়ি, ভিসির নির্ধারিত মোবাইল, ভিসির দপ্তর ব্যবহার, ভিসির নেমপ্লেট ও অনার বোর্ডে পূর্ণাঙ্গ ভিসি হিসেবে নাম ব্যবহার করছেন। এছাড়া ভিসির মতই রেখেছেন পার্সোনাল গার্ড ও অন্যান্য সুবিধা। অথচ বিধি মোতাবেক অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসির এমন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার নিয়ম নেই। শুধু তাই নয় রুয়েটের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যানারেও পূর্ণাঙ্গ ভিসির পদবী ব্যবহার করেন তিনি যা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত।
অধ্যাপক ড. সাজ্জাদের বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও ক্যাম্পাসে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক-ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠিত করার প্রচেষ্টা : রুয়েট ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন যে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক তা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলেই অবগত। এমনকি ২০১৮-১৯ সেশনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী (পরিবর্তনের লক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী) প্যানেল থেকে রুয়েটে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন সদস্য পদে ভোট করেন। শুধু তাই নয়; জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনের সময় নগরীর মোন্নাফের মোড়ে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদের নিজ বাসায় বিএনপি-জামায়াতের সভা কিংবা মিটিং অনুষ্ঠিত হওয়ার ও জামায়াতকে অর্থায়ন করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের শক্তিশালী করারও অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্ব নেয়ার পর রুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ক্যাম্পাসে জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যতম সংগঠক, ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সাবেক শিবির নেতা আহসান হাবীব এবং বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠক কামাল হোসেন ইতিকে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বানিয়েছেন ডান-বাম হাত।
ক্যাম্পাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে ‘ভিসি’ অধ্যাপক সাজ্জাদ এই দুই কর্মকর্তাকেই পাঠান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোপূর্বে কখনো ‘বুদ্ধিজীবী’ কিংবা ‘বিজয় দিবসে’ বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শহীদ মিনারে ফুল দিতো না। কিন্তু তাঁর (ভিসি) মদদে তারা এবার এ সব কর্মসূচিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক ভিসির দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন গুলোও ক্যাম্পাসে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
২০১৯ সালের ৯ মে হিজবুত তাহরীরের পোস্টার লাগাতে গিয়ে রাজশাহী মহিলা কলেজের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রুয়েটের সিএসই বিভাগের ১২ সিরিজের শিক্ষার্থী তানভীর হোসাইন। অথচ গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে হিজবুত তাহরীরের এই সদস্যসহ রুয়েট শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আহমেদ হোসেন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হকসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে প্রকাশ্যে মিটিং করে। সেখানে রুয়েটের সেকশন অফিসার সোহেল রানাকেও তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাম্মদ ইসফাক ইয়াসশির ইপু বলেন, নাশকতা ও ক্যাম্পাাসকে অস্থিতিশীল করতেই সেদিন হিজবুত তাহরীর, ছাত্রদল ও শিবির সম্মিলিতভাবে প্রকাশ্যে মিটিং করে যা আমাদের জন্য অশনি সংকেত।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো ও শিক্ষকবৃন্দ প্রত্যাশা করেন দ্রুতই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরা জোড়ালো দাবি জানান।
আপনার মতামত লিখুন :