ঢাকা : রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের স্টাফ কলোনির বেশিরভাগ বাসায় থাকছেন বহিরাগতরা। অন্যদিকে নিজ বাসা ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন রেলওয়ের এক শ্রেণির কর্মচারী। নিয়ম অনুযায়ী কর্মচারী ছাড়া বহিরাগত থাকার সুযোগ না থাকলেও এ অঞ্চলের ৯০ শতাংশ কোয়ার্টার নিয়ে চলছে এমন রমরমা বাণিজ্য। রেলের বাসা দখল করে গোডাউন বানিয়ে চলছে ইট-বালির ব্যবসা। ব্যবহার হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের গুদাম হিসাবেও। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারাকে চলে স্বর্ণের গহনা তৈরির কাজও। সবমিলিয়ে রেলের স্টাফ কোয়ার্টার এখন ব্যবহার হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসাবে। তদারকি না থাকায় অনেকেই রেলের বাসা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে কিছুই বলতে রাজি নন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের আওতায় ৩০টি কলোনিতে চার ক্যাটাগরির মোট ৫ হাজার ৩২৯টি বাসা আছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ১৫৩টি, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ২৩৭টি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ২ হাজার ২৫৫টি ও চতুর্থ শ্রেণির জন্য ২ হাজার ৬৮৪টি বাসা রয়েছে।
নগরীর যেসব স্থানে রেলের স্টাফ কোয়ার্টার রয়েছে তারমধ্যে অধিকাংশই ব্যবহার হচ্ছে বাণিজ্যিক ভাবে। বিশেষ করে বিভিন্ন বাজারের আশপাশে থাকা কোয়ার্টারগুলো। পাহাড়তলী বাজারে এমন চিত্র গিয়ে দেখা গেছে। এ বাজারসংলগ্ন প্রায় সব কোয়ার্টারই ব্যবহার হচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের গুদাম হিসাবে। এজন্য মাসিক ভাড়া ছাড়াও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের অগ্রিম টাকা। জানা গেছে, পাহাড়তলী বাজারের বাগদাদ ট্রেডিং, রূপা স্টোর, তছলিম স্টোর ও সালমান ট্রেডিং ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালামাল রাখা হয় রেলের স্টাফ কোয়ার্টারে। রেলের বিভিন্ন বিভাগের স্টাফদের থাকার জন্য দেয়া হয় এসব কোয়ার্টার। এদের মধ্যে রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রয়েছেন শ্রমিক লীগ নেতাও।
পাহাড়তলী বাজার ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, আরএনবির হাবিলদার জসিম উদ্দিনের কোয়ার্টারটি ব্যবহার হয় রূপা স্টোরের চাল, ডালসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের গুদাম হিসাবে। এছাড়া শ্রমিক লীগের কর্মী শাহজাহানের কোয়ার্টার ব্যবহার হয় বাগদাদ ট্রেডিংয়ের তেলের গোডাউন হিসাবে। রেলের ইলেকট্রিক ডিভিশনের সুফিয়ান ও ওয়ার্কশপ ডিভিশনের রহিমের কোয়ার্টার ব্যবহার হয় তছলিম স্টোর এবং সালমান ট্রেডিংয়ের গুদাম হিসাবে।
অপরদিকে জনবহুল এলাকার সড়কের পাশে থাকা কোয়ার্টারগুলোর চিত্রও একই রকম। কোয়ার্টারের বর্ধিত অংশে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পাহাড়তলী ওয়্যারলেস কলোনি ও সেগুনবাগান এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এজন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাসোয়ারা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিউ শহিদ লেন এলাকার ৪ নম্বর সড়কের এল-১৫৮বি নম্বর বাসাটি দখল করে ইট-বালুর দোকান খুলেছেন জাহিদ নামের স্থানীয় ব্যক্তি। রেলের এমন অনেক স্টাফ কোয়ার্টার রয়েছে, যেগুলো দীর্ঘদিন বেদখল হয়ে আছে। তবে অদৃশ্য কারণে এসব উচ্ছেদ বা বরাদ্দ বাতিলের ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। নীরব ভূমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যারাকেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান : রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) চত্বর ও কন্ট্রোল অফিস। তার পেছনেই রয়েছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বসবাসের জন্য সংরক্ষিত ব্যারাক। ব্যারাকটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এ সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন আরএনবির সদস্যরা। শুধু বসবাস নয়, স্বর্ণের গহনা তৈরির কারখানাও রয়েছে এ ব্যারাকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ ব্যারাকে বর্তমানে প্রতিটি রুমে ৪-৫টি সিট বসিয়ে বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে এক হাজার টাকা। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার আবদুর রাজ্জাক এ টাকা আদায় করেন বলে জানা গেছে। এখানে ভাড়া থাকছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর নতুন ব্যারাকের সঙ্গে লাগোয়া স্টাফ কোয়ার্টারে দেখা গেছে অবৈধ দখলদারদের বসবাস।
হাবিলদার আবদুর রাজ্জাক বলেন, রুমগুলোতে কেউ না থাকলে বিভিন্ন মাদকসেবীর আস্তানা হয়ে যেতে পারে-এজন্য কয়েকজনকে রাখা হয়েছে। যে টাকা আদায় হয় তা জমা দেওয়া হয় এখানকার মসজিদ ফান্ডে।
এসব বিষয়ে জানতে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক তারেক মোহাম্মদ সামছ তুষারের অফিসে গেলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।