কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রথিন বিশ্বাসের পরিবার সহযোগিতা চেয়ে আকুতি জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নিকট।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সদ্য যোগদানকৃত জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান উপজেলার শুয়াগ্রামে নিহত রথিন বিশ্বাসের বাড়িতে এলে বিভিন্ন সহযোগিতা চান প্রয়াত রথিন বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যগণ।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ গোলাম কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শেখ শামছুল আরেফিন, কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক দত্ত, শুয়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান যজ্ঞেশ্বর বৈদ্য অনুপসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।
জেলা প্রশাসকের নিকট রথিন বিশ্বাসের বড় ভাই বিপ্লব বিশ্বাসের স্ত্রী মাধবী বাড়ৈ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ও বোকাসোকা মানুষ। আরেক ননদ সেও প্রতিবন্ধী। দেবর রথিন বিশ্বাসের সহযোগিতায় আমাদের সংসার চলতো। এখন সে নেই, আমাদের সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হওয়া ৪ জনের তালিকা আমরা পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে সকলের পরিবারের সাথে আমরা সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। তাদের কোন সমস্যা থাকলে সেগুলো জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শহীদ রথিন বিশ্বাসের বাড়িতে এসেছি। তার পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় থাকবে।
শহীদ রথিন বিশ্বাসের ভাই ও বোনের জন্য দ্রুত প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করাসহ চিকিৎসার উদ্যোগ নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি সকল ধরনে সরকারি সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি। শহীদ রথিন বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরির নির্দেশনাও দেন জেলা প্রশাসক। তাদের বাড়ির জায়গার বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক দত্তকে দায়িত্ব দেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক কিছু খাদ্যসামগ্রী ও ফল উপহার হিসেবে তুলে দেন শহীদ রথিন বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যেদের হাতে। ভবিষ্যতে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকল সহযোগিতা সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, উপজেলার শুয়াগ্রামের দানিয়েল বিশ্বাস ও শেফালী বিশ্বাসের ছেলে রথিন বিশ্বাস। বাবা-মা দু’জনেই মারা গেছেন অনেক আগেই। প্রতিবন্ধী ভাই বিপ্লব বিশ্বাস, ভাবি ও ছোট বোন প্রতিবন্ধী রুমা বিশ্বাসকে নিয়েই ছিলো রথিন বিশ্বাসের সংসার।
রাজধানীর রাজারবাগ উইলিয়াম কেরি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন রথিন বিশ্বাস। নিজ আয়ের একটি অংশ নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাই-বোনের জন্য বাড়িতে পাঠাতেন তিনি। গত ৫ আগস্ট বিকালে গণঅভ্যুত্থানের পর জাতীয় সংসদভবন এলাকায় বিজয় মিছিলে গিয়ে আহত হন রথিন বিশ্বাস। ন্যাশনাল ইন অব নিউরো সাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওইদিন রাতে তার মৃত্যু হয়। পরদিন কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে বাবা-মায়ের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হয়। বিষয়টি বাড়ির বাহিরের লোকজন খুব একটা জানতো না। জেলা প্রশাসন থেকে তথ্য চাওয়ার পর এ ব্যাপারে জানতে পারে এলাকাবাসী।
আপনার মতামত লিখুন :