রাসেল সরকার/এম শিমুল খান,ঢাকাঃ রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের তাবলিগ জামাতের আন্তর্জাতিক সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব। এই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে এদিন রোববার ভোর থেকে দলে দলে ময়দানে আসতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা। বেলা ১১টা নাগাদ দেখা গেছে ময়দানমুখী মুসল্লিদের ঢল। বিমানবন্দর, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, কামারপাড়া, টঙ্গী স্টেশন দিয়ে পায়ে হেঁটে মুসল্লিরা ময়দানের দিকে আসছেন।ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে দলে দলে আসছেন মুসল্লিরা।
এদিকে, মুসল্লিদের হাঁটা চলার সুবিধার্থে আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী হয়ে গাজীপুর ভোগড়া ও কামার পাড়া থেকে ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় চলছে না গণপরিবহন। তবে তবে কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। মুসল্লিরা তাই পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেলযোগে আসছেন ময়দানে। তবুও বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে। এদিকে, ইজতেমার প্রথম পর্বে যত সংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন, দ্বিতীয় পর্বে তার চেয়ে কম মুসল্লির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আশুলিয়া থেকে ময়দানের উদ্দেশ্যে আসা মুসল্লি আনোয়ার পারভেজ জানান, ভোর বেলায় তিনি মোটর সাইকেলযোগে এসেছেন কামারপাড়া। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আব্দুল্লাহপুর এসেছেন।
ইজতেমার প্রথম পর্বেও উপস্থিত থাকা এই মুসল্লি বলেন, এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বেও আমি এসেছিলাম। আখেরি মোনাজাত শেষ করে বাড়ি ফিরেছি। তবে অনেক ভিড় ছিল, অনেক দূর পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে এসেছি। মোনাজাত শেষে কোনো না কোনো ভাবে বাড়ি চলে যাবো ইনশাআল্লাহ। দুই পর্বেই আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম পর্বে যোবায়েরপন্থী বা অনুসারীরা এসেছেন। সেখানে অনেক সাধারণ মুসল্লিরাও উপস্থিত ছিলেন। আর দ্বিতীয় পর্বে সাদপন্থী বা অনুসারীরা আছেন। কিন্তু কে জানে, কার মোনাজাত কবুল হবে। তাই কোনো পন্থী বিবেচনা না করে দুই পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছি। দুটোতে অংশ নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো। আল্লাহ কার দোয়া কবুল করবেন, সেটা তিনিই ভালো জানেন।
জামালপুরের ইসলামপুর থেকে গত ৮ জানুয়ারি বিশ্ব এজতেমার ময়দানে এসেছেন মুসল্লি আরসাদ আলী। তার সঙ্গে ৭ জন একই দিনে এসেছেন। আরসাদ আলী বলেন, আমি প্রথম পর্বের আগে ময়দানে এসেছি। টানা দুটি পর্বেই আমি উপস্থিত থেকেছি। আল্লাহর রহমতে দুই পর্বের জুম্মার নামাজ আদায় করতে পেরেছি। এটা আমার ভাগ্য, কারণ এখানে জুম্মার সবচেয়ে বড় জামাত এখানেই হয়। আর আজ আখেরি মোনাজাত শেষ করে ইচ্ছা আছে ঢাকায় ছেলের বাসায় যাবো। পরে বাড়ি ফিরে যাবো। তিনি আরও বলেন, এবার ময়দানে তেমন কোনো কষ্ট হয়নি। পানির সমস্যা ছিল না। তবে মুসল্লিদের অনেক ভিড় ছিল। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওজু বা টয়লেট করতে হয়েছে। তাছাড়া আর কোনো সমস্যা হয়নি। এখন আল্লাহ আল্লাহ করে সহিসালামতে বাড়ি ফিরতে পারলেই শান্তি।
গত ৫৬ বছর ধরে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে আয়োজিত হয়ে আসছে তাবলিগ জামাতের আন্তর্জাতিক সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। ২০১১ সাল পর্যন্ত এক পর্বে তিন দিনব্যাপী টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তবে মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতি ও ফেরার সময় জনদুর্ভোগসহ নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্যদের পরামর্শের ভিত্তিতে তিন দিন করে দুই ধাপে ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় গত দুই বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবছর (২০২৩ সাল) ১৩-১৫ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। চারদিন বিরতি দিয়ে ২০-২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আজ বোরবার দুপুর ১২টায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা।
আপনার মতামত লিখুন :