• ঢাকা
  • বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪০ অপরাহ্ন

বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ব্ল্যাকমেইল করত আশিক: র‌্যাব


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৭, ২০২১, ১:২২ অপরাহ্ন / ১৪৫
বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ব্ল্যাকমেইল করত আশিক: র‌্যাব

ঢাকা : পর্যটন নগরী কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা ও প্রধান আসামী মো. আশিকুল ইসলামকে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত আশিক বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেও ব্ল্যাকমেইল করত।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে  র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মলনে এমন তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। ওই ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে ৪ জন এজাহার নামীয় আসামী ও আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪৩/৭৫০ তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০২১।

বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে ৮ মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ সংকুলানের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিল পরিবারটি। তারা বিত্তবান পর্যটকদের নিকট থেকে অর্থ সাহায্য চাইত। এ সময় তিনি অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

ভিকটিম অপহরণের ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী র‌্যাব-১৫ এর নিকট ভিকটিমকে উদ্ধারে সহায়তা চায় জানিয়ে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, র‌্যাব ভিকটিমের স্বামীকে নিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ও একপর্যায়ে ভিকটিম উদ্ধার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে জিম্মি করার সহযোগিতার অভিযোগে জিয়া গেষ্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।পরে ধর্ষণের ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচারে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। র‌্যাব বর্ণিত ঘটনায় হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আসামীদের সনাক্ত ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ ও ১৫ এর অভিযানে গতকার রবিবার রাতে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষণের সাথে জড়িত মামলার প্রধান আসামী মো. আশিকুল ইসলামকে (২৯)গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ধর্ষণের বিষয় স্বীকার করে।তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত মো. আশিক কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূল হোতা। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। গ্রেফতারকৃত বিগত ২০১২ বছর থেকে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত রয়েছে। সে প্রথম ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয় বলে জানায়। সে ও তার সিন্ডিকেট পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত। সে পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেলে ম্যানেজারের সাথে যোগসাজসে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে বø্যাকমেইল করত।

গ্রেফতারকৃত আশিকের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত ও তার সহযোগীরা ভিকটিম ও তার পরিবারের নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। ভিকটিম ও তার পরিবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অতঃপর লাবনী বীচ এলাকার রাস্তা হতে ভিকটিমকে সিএনজি’তে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারকৃত মো. আশিকুল ইসলাম ভিকটিমকে ধর্ষণ ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটক করে রেখে ভিকটিমের স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। এরপর ভিকটিমকে হোটেলে আটকে রেখে গ্রেফতারকৃত হোটেল থেকে বের হয়ে যায়। বিষয়টি ব্যাপকভাবে স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন মিডিয়াতে জানাজানি হলে গ্রেফতারকৃত আত্মগোপণে চলে যায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত বেশভ‚ষা পরিবর্তন করে ঘটনার ২ দিন পর কক্সবাজার থেকে একটি এসি বাস যোগে ঢাকায় আসে। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে সে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার হয়।

তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম জবরদখল ও অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। সে পর্যটন এলাকার সুগন্ধা নামক স্থানে ফ্ল্যাট ও এ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্রে বিশেষে দ্বিগুন ও তিনগুন ভাড়া সংগ্রহ করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকে। গ্রেফতারকৃত বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল করে ও চাঁদা দাবী করে থাকে। তার চক্রের সদস্যরা রাত্রিকালীন সময়ে সী-বীচে আগত ট্যুরিস্টদের হেনস্তা, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করতো। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে অর্থ আদায় করত। তার নামে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। ইতোপূর্বে সে ৫ বার পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয় এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে।