বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বিআরটিসির ম্যানেজার নুর-ই-আলমের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা, যোগাযোগ উপদেষ্টা ও দুদক বরাবর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, নুর ই আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একজন দাপুটে নেতা ছিলেন। বিআরটিসি কল্যানপুর বাস ডিপোর সাবেক ম্যানেজার অপারেশন থাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার সুবাধে শেখ হাসিনা ও বাহাউদ্দীন নাসিমের হাত ধরেই বিআরটিসিতে চাকুরি নেন। আ’লীগের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোতে ম্যানেজার অপারেশনের দ্বায়িত্ব নিয়ে শুরু করেন তার রামরাজত্ব। নুর ই আলম ম্যানেজার অপারেশন হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। কোন আইনের তোয়াক্কা না করেই নিজেই তৈরি করেন আইন। তার নিজস্ব আইন না মানলে ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ শ্রমিকদের উপর নেমে আসতো অমানুষিক নির্যাতন। সাময়িক বরখাস্ত, বেতনভাতা কর্তন, মিথ্যা জরিমানাসহ কর্মচারী ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানান ব্যাবস্থা নিতেন তিনি। এমনকি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও এমপিদের নাম ভাঙ্গিয়ে মারপিটও করতেন শ্রমিক কর্মচারীদের।
নুর ই আলম বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোতে ম্যানেজার থাকাকালীন সময়ে নিজেকে শেখ হাসিনার একান্ত লোক হিসাবে পরিচয় দিতেন। কখনো সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আবার কখনো বাহাউদ্দীন নাসিমের আবার কখনো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের লোক বলেও পরিচয় দিতেন তিনি। দুর্দান্ত দাপট দেখাতেন তিনি। তার ভয়ে বিভিন্ন ডিপোসহ বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের অনেকে ভয়ে তটস্থ থাকতো। যা এখনো বিদ্যামান রয়েছে।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, নুর ই আলম বিআরটিসির বিভিন্ন ডিপোতে ম্যানেজার থাকাকালিন সময়ে সরকারী রাজস্ব প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করিয়াছেন। যাহা বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ে খোজ নিলে জানা যাবে। নুর ই আলম কল্যাণপুর বাস ডিপোতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নামে-বেনামে গাড়ি পরিচালনা করে সরকার নির্ধারিত রাজস্বের চেয়ে কম রাজস্ব নিয়ে গাড়ি পরিচালনা করে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানেও তার দুর্নীতি একটুও কমেনি। উপরোন্ত নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসাবে এখনো জাহির করেন তিনি। এবং বিআরটিসির বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে চলছেন।
নুর ই আলমের সম্পদের হিসাবঃ নুর ই আলমের বেতন মাত্র ৭০ হাজার টাকা। তিনি তার দুটি মেয়েকে রাজধানীর স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ও স্কুলে পড়ান। যাদের পেছনে খরচ করেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তার নিজস্ব একটি প্রাইভেটকার আছে ড্রাইভারসহ গাড়ীর জ্বালানী আর ড্রাইভারের বেতন দিয়ে খরচ করেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। লাল সবুজ ব্যানারে তার ৬টি বাস চলে। যার মালিক সে নিজেই। তিনি সিলেট ডিপোতে থাকা অবস্থায় সরকারি রাজস্ব অজমা আছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা যা তিনি নিজেই আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে নিজে বাঁচার জন্য অন্য এক কর্মচারীর ঘাড়ে দোষ দিয়ে তার চাকরি খেয়েছেন। নুর ই আলম শেখ হাসিনা ও বাহাউদ্দীন নাসিম কে দিয়ে চাকরি নিয়েছেন এবং বাহাউদ্দীন নাসিমের ক্ষমতার জোর দেখিয়ে চলেছেন বা এখনো চলছেন। বর্তমানে নুর ই আলম বিআরটিসির অন্যান্য লোকজনকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। অহেতুক মানুষের নামে বেনামে দরখাস্ত করে তাদেরকে হয়রানি করে থাকে।
অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়, নুর ই আলম রাজধানীর মিরপুর এলাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে নিজস্ব একটি ফ্লাট কিনেছেন। নুর ই আলম বিআরটিসির সিলেটে ডিপোতে থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। সেটা তিনি টাকা পয়সা দিয়ে এবং বাহাউদ্দীন নাসিমের নাম ভাঙ্গিয়ে চাপিয়ে রেখেছে। এছাড়াও নুর ই আলম নামে-বেনামে ঢাকায় একাধিক ফ্লাট ও জমি রয়েছে। এছাড়াও নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। তার এত সম্পদ রয়েছে যে ছাগল কান্ডের মতিউরকেও তিনি হার মানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত চালালে আরো অনেক দুর্নীতি ও আয় বর্হিভুত সম্পদ বেরিয়ে আসবে।
বিআরটিসির বাস কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন নুর-ই-আলমঃ বিআরটিসিতে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি অনিয়ম যেন থামছেই না। এবার কেজি দরে বিআরটিসির বাস বিক্রি করে দিয়েছেন এক কর্মকর্তা। এখানেই ক্ষান্ত হননি, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, প্রতারণা ও কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাটির তদন্তে এর প্রমাণও মিলেছে। তিনি হলেন বিআরটিসি কল্যাণপুর বাস ডিপোর সাবেক ইউনিট প্রধান নুর-ই-আলম।
বাস বিক্রি নিয়ে নুর-ই-আলমের বিরুদ্ধে বিআরটিসিতে একটি অভিযোগনামা জমা পড়েছে। যার একটি কপি কালবেলার হাতে এসেছে। যেখানে দেখা যায়, বিআরটিসির কল্যাণপুর বাস ডিপোর ইউনিটপ্রধান ছিলেন নুর-ই-আলম। তিনি গত বছর ৯ মার্চ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ডিপোতে থাকা ঢাকা মেট্রো-চ-৭৩৬০ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের একটি বাস কেটে বাইরে বিক্রি করে দেন।
এ বিষয়ে তার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি ব্যবস্থাপক (কারিগরি) মো. মনিরুজ্জামানের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। বিআরটিতেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসটি বিআরটিসির নামেই নিবন্ধিত ছিল।
বাস বিক্রিয় বিষয় তদন্তে প্রমাণিত হলে নুর-ই-আলমকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ১৯৯০-এর ৩৯ (ক), (খ) ও (চ) দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এমন ঘটনার অভিযুক্ত হলেও শাস্তি তো দূরের কথা নুর ই আলম পেয়েছে পদোন্নতি। এখন তিনি বিআরসিটির প্রধান কার্যালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
ডিপোর বাস বিক্রি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির দায়িত্বে থাকা বিআরটিসির ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান কালবেলাকে জানান, ‘বাস বিক্রি করে দেওয়ার উপযুক্ত প্রমাণ পেয়েছি। ওই সময় দায়িত্বে থাকা কয়েকজন তদন্ত কমিটিতে সরাসরি সাক্ষী দিয়েছেন যে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বাসটি বিক্রি করেছেন। আর সেজন্য কিছু কর্মকর্তাকে তিনি আর্থিক সহযোগিতাও দিয়েছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একটি অভিযোগনামা বিআরটিসিতে জমা দিয়েছি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নুর-ই-আলমের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। মেসেজ দিলেও মেলেনি কোনো উত্তর।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির মুখপাত্র মোহাম্মদ মোবারক হোসেন মজুমদার কালবেলাকে জানান, নুর ই আলম বর্তমানে বিআরটিসির সচিব হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তার বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ আছে সেগুলো নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তার বিষয়ে বিআরটিসি থেকে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :