• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৩ অপরাহ্ন

বিআরটিসির ১২ কোটি টাকা ২৬ জনের পেটে : গত ১১ বছরে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০২৪, ২:০৯ অপরাহ্ন / ১৫১
বিআরটিসির ১২ কোটি টাকা ২৬ জনের পেটে : গত ১১ বছরে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ১১ বছরের আয়ের অর্থ হিসাব শাখায় জমা হয়নি। অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রতিষ্ঠানটির ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের মধ্যে বিআরটিসির অপারেশন বিভাগের ব্যবস্থাপক নূর-ই-আলমের কাছেই পাওনা প্রায় ৯১ লাখ টাকা। জমা না করা এই রাজস্ব বুঝিয়ে দিতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থ অনাদায়ে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানের আয়ের বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। দিনের পর দিন এই অপকর্ম চললেও তা এত দিন ধরা পড়েনি। এক পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে শুরু হয় হইচই।

গত ২৮ জানুয়ারি বিআরটিসির পরিচালনা পরিষদের ২৯৭তম সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সভায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অনুপম সাহা (অর্থ-হিসাব) বলেন, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আনাদায়ী রাজস্বের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করপোরেশনের বিভিন্ন ডিপো ইউনিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা অনাদায়ী রয়েছে। এ ছাড়া লং লিজ বাবদ অজমা ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বেশি। ওই পর্ষদ সভায় সরকারি অর্থ দীর্ঘদিন অজমা রাখা যাবে না বলে মত দেন সবাই। পাশাপাশি পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ার পর যারা রাজস্ব জমা দিতে অপারগতা প্রকাশ করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে টাকা ফেরত দিতে চিঠি দিয়েছে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। তবে অর্থ ফেরত দেওয়ার কোনো সময় সীমা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি।

এরমধ্যে পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের অপারেশন বিভাগের ব্যবস্থাপক নূর-ই-আলমের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি থেকে জানা গেছে নূর-ই-আলম ২০১৪ সালে মিরপুর ডিপোর দায়িত্ব পালনকালে ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকার বেশি অজমা রেখেছেন। ২০১৫-১৬ সালে গাজীপুর ডিপোর দায়িত্ব পালনকালে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকার বেশি জমা দেননি। ২০১৩-১৪ সালে সিলেট ডিপোর দায়িত্ব পালনকালে ৮৩ লাখ টাকার বেশি অজমা রেখেছেন। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯১ লাখ টাকা পাওনা এই কর্মকর্তার কাছে। পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমস্ত টাকা বিআরটিসির নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যথায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও চিঠিতে নূর-ই-আলমকে জানানো হয়েছে।

বিআরটিসির শীর্ষ কর্তকর্তারা বলছেন, সঠিক হিসাব না হওয়ায় অনাদায়ী অর্থের সন্ধান মেলেনি বছরের পর বছর। প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করাসহ অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে পর্যায়ক্রমে সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্তরা এতদিন দাপটের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের থেকে পাওনা অর্থ আদায়ে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তারা।

জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অজমা থাকা ১২ কোটি টাকা ফেরত চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। ফেরত না পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।