নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আগের তিন মাস, অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় দেশে বেকার লোকের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশে বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সেই সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। আজ বিবিএস এই প্রথম প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ করেছে, সেখানে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলনকেন্দ্রে এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, শীতকালে কাজের সুযোগ কম থাকে, বিশেষ করে কৃষি খাতে তখন কাজ কম থাকে। এখন ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। এ খাতে কাজের সুযোগ অনেক বেড়েছে। ফলে বেকার মানুষের সংখ্যা আবার কমে আসবে। শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার মানুষের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার।
অন্যদিকে শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট বেকার মানুষের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৯০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার জরিপের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশে বেকারত্ব ছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। পুরুষের ক্ষেত্রে তা ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এর প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ফলাফল অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ। এ ছাড়া কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী বর্তমানে ৭ কোটি ১১ লাখ। শ্রমশক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী ৪ কোটি ৬৩ লাখ; শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬১ দশমিক ৩৭। অর্থনৈতিক খাত অনুযায়ী কৃষিতে নিয়োজিত আছে ৩ কোটি ১৯ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২২ লাখ, সেবা খাতে ২ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ।
এ ছাড়া দেশের যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৭৩ লাখ। শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ। সেই হিসাবে দেশের মোট শ্রমশক্তির ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তাঁরাই, যাঁরা গত সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কাজ করেনি, কিন্তু গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন। তবে বেকারের এ সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক আছে। সংজ্ঞা বদলানো হলে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
ইদানীং পত্রিকা খুললেই তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের আত্মহত্যার খবর খুব বেশি চোখে পড়ছে। সপ্তাহ কয়েক আগে বরিশালের এক তরুণ ঢাকায় আসার পথে মাঝনদীতে চলন্ত লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আদমজী পাটকল বন্ধ হওয়ার পর আকার ও শ্রমিকের সংখ্যার দিক দিয়ে খুলনার ক্রিসেন্ট ছিল দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল। ১১৩ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পাটকলটি ২০২০ সালের জুলাইয়ে বন্ধ হওয়ার সময়ও সেখানে কাজ করতেন অনেক লোক।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করে কীভাবে চাহিদার গতি ফেরানো যায়, তা নিশ্চিত করাই নীতিপ্রণেতাদের মূল চ্যালেঞ্জ।
আপনার মতামত লিখুন :