এম শিমুল খান/মনিরুজ্জামান অপুর্বঃ চিত্রনায়িকা পরীমণি গ্রেপ্তারের পর র্যাব অভিযান চালায় রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাসায়। বুধবার রাতে বনানীর যে বাসা থেকে নজরুল রাজকে আ’টক করা হয় সেখান যৌন উত্তেজক সমাগ্রীসহ বিদেশি মদ, ইয়াবা বড়ি, সেক্স ট্রয় উদ্ধার করা হয়। বিশেষ ধরনের একটি বিছানাও পাওয়া গেছে সেখানে। তার মোবাইল ফোনে অসংখ্য তরুণীর পর্ন ভিডিও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। নাটক কিংবা সিনেমায় কাজের সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন রাজ। এভাবে প্রায় দুই শতাধিক তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন তিনি।
এসব তরুণী বেশিরভাগের বয়স ছিল ১৮-২০ এর মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এ নিয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন রাজ। তার বনানীর বাড়িতে অভিযানেও কম্পিউটার ও মোবাইলে মিলেছে অনেক অনৈতিক গোপন ভিডিও-ছবি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রাজ দাবি করেন, কম বয়সী তরুণীদের মধ্যে মিডিয়া সেলিব্রেটি হওয়ার শখ বেশি থাকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তরুণীদের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতেন। আবার অনেক সময় ব্লাক মেইলিংয়ের জন্য গোপনে ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। এ জন্য তিনি বনানীতে অবস্থিত তার বাসাকে বেশি কাজে লাগাতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। সূত্র আরো জানায়, রাজের বনানীর বাসাতে পর্নোগ্রাফি তৈরি কনটেন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তার প্রডাক্শন হাউজের মাধ্যমে যারা মডেল বা অভিনেত্রী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, তাদের সঙ্গে রাজ কোনো না কোনো ভাবে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। তাদের অনেককে তিনি বাধ্য করতেন। আবার স্বেচ্ছায়ও অনেকে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতেন। এসব কাজের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখতেন তিনি।
সূত্র আরও জানায়, রাজ কম বয়সী তরুণীদের বেশি টার্গেটে নিতেন। যাদের বয়স ১৮-২০ এর মধ্যে থাকত। কারণ এসব তরুণীদের মিডিয়ায় কাজের আগ্রহ বেশি। অনেকে তার হাত ধরে মিডিয়ায় কাজের সুযোগও পেয়েছেন। রাজধানীর গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে এক তরুণীর মর দেহ উদ্ধারের পর আলোচনায় আসেন চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। তার সঙ্গে মুনিয়ার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায় মুনিয়ার পাশে বসে রাজ ‘চুম্বন’ দিচ্ছেন।
রাজকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, রাজ একেক সময় একেক পরিচয়ে চলাফেরা করেন। কখনও চিত্রপরিচালক, কখনও ব্যবসায়ী আবার কখনও রাজনীতিবিদ। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন। নজরুল ইসলাম রাজ তার প্রতারণা ও পর্নো ব্যবসায় দুই তরুণীকে ব্যবহার করে আসছেন। এদের একজনের ডাক নাম সেমি এবং আরেকজন কাঁকন। দুজনই তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। এ দুই তরুণীকে দিয়ে তিনি ব্ল্যাক মেইলিংয়ের কাজ করতেন বলে জানায় র্যাব।
র্যাব জানায়, পাশ্চাত্য পোশাকে অভ্যস্ত সেমি এবং কাঁকনকে নিয়ে হাজির হতেন সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাটে অথবা বাসায়। একপর্যায়ে অনেকেই তাদের প্রেমে পড়ে যেতেন। যে কোনো মূল্যে তাদের সান্নিধ্য পেতে চাইতেন। এমন দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারি কাজ বা তদবিরের টোপ ফেলতেন নজরুল। কোটি টাকা ঘুসের চেয়ে দ্রুততার সঙ্গে তার কাজ হয়ে যেত।